বড়লেখা প্রতিনিধি

২০ অক্টোবর, ২০১৯ ১২:২৭

কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসনে ধীরগতি, মেয়াদ বেড়েছে ৬ মাস

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথের পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ ধীরগতিতে এগোচ্ছে। এখনো চলছে প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ। এতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ার সংশয় রয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা কাজ শেষ করতে পারবে।

২০১৮ সালের মে মাসে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০২০ সালের মে মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা। এ অবস্থায় নতুন করে প্রকল্পের কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে আরও ছয়মাস। সে অনুযায়ী কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে।

সরেজমিনে গত ১৪ অক্টোবর সোমবার দেখা গেছে, রেলপথের পুরনো রেল সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ভাঙা হয়েছে পুরনো সেতু ও কালভার্ট। পুরনো স্টেশন ঘর ভাঙার কাজ চলছে। কাঠালতলী, শাহবাজপুর স্টেশন এলাকা ও দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়ন এলাকার কিছু স্থানে রেলপথের মাটি সরিয়ে সেখানে নতুন করে মাটি ফেলে উঁচু করার কাজ চলছে। দক্ষিণভাগ, শাহবাজপুর ও মুড়াউলে নতুন স্টেশন ঘর নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। সেখানে পাথর, রেলসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী এনে মজুদ করা হচ্ছে। এ ছাড়া কাজে আর কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

রেলওয়ে ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৮৮৫ সালে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের অংশ হিসেবে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল লাইন চালু হয়েছিল। রেলপথটির দৈর্ঘ্য ৫২ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার। বড়লেখা উপজেলার লাতু সীমান্ত দিয়ে কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন হয়ে আসাম রেলওয়ের ট্রেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আসা যাওয়া করতো। কুলাউড়া-শাহবাজপুর লাইনে চলাচলকারী ট্রেনটি এলাকাবাসীর কাছে ‘লাতুর ট্রেন’ নামে পরিচিত ছিল। রেল লাইনটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় তা সংস্কার না করেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ২০০২ সালের ৭ জুলাই লাইনটি বন্ধ করে দেয়। এতে বড়লেখা, জুড়ী ও কুলাউড়া এলাকার লোকজন দুর্ভোগে পড়ে যান। এরপর লাইনটি চালু করার জন্য নানা কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বাসিন্দারা।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ২৬ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৬৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুন:স্থাপন প্রকল্প অনুমোদন হয়। এরমধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিবে ১২২ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং ভারত সরকার ৫৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। ৪৪ দশমিক ৭৭ কিলোমিটারের পুরোটাই দ্বৈত গেজ লাইন করা হবে। এরমধ্যে সাত দশমিক ৭৭ কিলোমিটার লুপ লাইনের কাজ হবে। ওই বছরের ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদির বাংলাদেশ সফরকালে প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।

ভারতের দিল্লির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘কালিন্দি রেল নির্মাণ’ দরপত্রের মাধ্যমে এ কাজ পায়। প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে ভারতের ‘বালাজি রেল রোড সিস্টেমস’। কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথে ছয়টি স্টেশন রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- কুলাউড়া, জুড়ী, দক্ষিণভাগ, কাঠালতলী, বড়লেখা, মুড়াউল ও শাহবাজপুর। রেলপথটি ডুয়েল গেজের হবে। ছয়টি স্টেশনের চারটি বি ও দুটি ডি শ্রেণীর হবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া সেকশনের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কার্য) মো. জুয়েল হোসেন সোমবার (১৪ অক্টোবর) মুঠোফোনে বলেন, প্রথমে জোরালোভাবে কাজ শুরু করেছিল। বর্ষা মৌসুম; এ জন্য কাজ আগাতে পারেনি। এখন কাজ আগাচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনেক রেল ও পাথর নিয়ে এসেছে। দক্ষিণভাগ, শাহবাজপুর ও মুড়াউল স্টেশন বিল্ডিং এর কাজ ধরেছে। বড়লেখা-থেকে শাহবাজপুরের দিকে আগের মাটি কেটে নতুনভাবে মাটি দিচ্ছে। উপরের ১ মিটার মাটি কেটে তুলে ফেলা হবে। তারপর লেয়ার বাই লেয়ার কমপেকশন করে নতুন করে মাটি দেবে। ডুয়েল গেজ হবে। এ জন্য দুই পাশে মাটি বাড়বে। ওদের প্রস্তুতি আছে। বর্ষা শেষ পর্যায়ে। পুরোদমে কাজ শুরু হবে। কাজের মেয়াদ আরও ৬ মাস বেড়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত