এস আলম সুমন, কুলাউড়া

০৭ নভেম্বর, ২০১৯ ১৯:৫২

স্বাভাবিক প্রসবে কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাফল্য

এক মাসে ৬৬ শিশুর জন্ম

কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল সংকট থাকা স্বত্বেও চলতি বছরের অক্টোবর মাসে প্রসূতিদের স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে ৬৬টি শিশুর জন্ম গ্রহণ করেছে। এটি এই হাসপাতালের নতুন রেকর্ড। এছাড়াও অক্টোবর মাসে একদিনে এই হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে ৬টি শি'শুর জন্মও প্রথম। বিষয়টি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় সাধারণ মানুষের মাঝে বেশ ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এতে করে শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার কমবে এবং তুলনামূলক ব্যয়বহুল অপ্রয়োজনীয় সিজারের মত অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের হারও কমবে বলে চিকিৎসকরা জানান।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা যায়, মাতৃ মৃত্যু এবং শিশু মৃত্যুর হার কমাতে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির কোন বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে সারাদেশে। স্বাস্থ্য বিভাগের সে লক্ষ্যকে বাস্তবে রূপ দিতে কুলাউড়া উপজেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডেলিভারির বিষয়ে বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে। তারই আলোকে চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে গড়ে ৪০ থেকে ৫০টি প্রসূতিদের স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে শিশুর জন্মগ্রহণ নিশ্চিত করে আসছে হাসপাতালের সংশ্লিষ্টরা।

ডাক্তার, নার্স থেকে শুরু করে মাঠকর্মীদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় গত অক্টোবর মাসে প্রসূতিদের স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে ৬৬টি শিশুর হওয়ায় নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে এ হাসপাতাল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের মতে, জনবল সংকট থাকা স্বত্বেও এটি এই হাসপাতালের নতুন মাইলফলক। মা ও শিশুর মৃত্যুর হার হ্রাস এবং অপেক্ষাকৃত ব্যয়বহুল ও অপ্রয়োজনীয় সিজারের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ কমবে।

হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার মনি দীপিকা দেব জানান, গত অক্টোবর মাসে এই হাসপাতালে মোট ৮৫ জন প্রসূতি রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। এর মধ্যে ৬৬টি জন প্রসূতির স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে শিশুর জন্ম গ্রহণে আমরা সক্ষম হয়েছি। বিভিন্ন সমস্যার কারণে ৭জন প্রসূতিকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে।

কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ নূরুল হক জানান, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে প্রসূতির স্বাভাবিক প্রসবের কোন বিকল্প নেই। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। গর্ভকালীন সময়ে প্রসূতির স্বাস্থ্য সেবার ও পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য হাসপাতালের একটি কক্ষে প্রস্তুত রয়েছে এবং সেখানে সবসময় অভিজ্ঞ নার্স ও ডাক্তার দ্বারা গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, গর্ভকালীন সময়ে জটিলতা না হলে প্রয়োজন ছাড়া সিজারের মতো অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুর জন্ম দিলে মায়ের ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে। সাধারণ মানুষ যাতে সেদিকে না ঝুঁকে এজন্যও আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

মৌলভীবাজার জেলা সিভিল সার্জন ডা. শাহজাহান কবির চৌধুরী বলেন, ‘প্রায় ৪ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্য চিকিৎসক সংকট রয়েছে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তবুও এখানকার চিকিৎসকসহ সকল সদস্যরা সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। গত অক্টোবর মাসে এই হাসপাতালে কোন জটিলতা ছাড়াই প্রসূতিদের স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে রেকর্ডসংখ্যক ৬৬টি শিশুর জন্ম নিয়েছে। আগামীতে যাতে নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতে মায়েদের স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে শিশুর জন্মদানের পন্থাটি বৃদ্ধি করা যায় সেজন্য আমরা বিশেষ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এছাড়াও চিকিৎসকসহ জনবলসংকট দূর করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত