সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

১০ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:৪১

ছাতকে হচ্ছে আরও একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল

সুনামগঞ্জের ছাতকে আরও একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ভারতের মেঘালয় রাজ্যসহ সেভেন সিস্টার খ্যাত সাত রাজ্যে বাংলাদেশের সহজলভ্য বাজারের কথা মাথায় রেখেই এটি বাস্তবায়িত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

গত ৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড কনভ্যাল সাংমা সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মেঘালয়ের উদ্যোক্তাদের সেখানে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ  আগ্রহকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সুনামগঞ্জসহ সিলেট বিভাগের ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, ব্রিটিশ আমল থেকেই সুনামগঞ্জের ছাতক শিল্প-কারখানার জন্য পরিচিতি পেয়েছে। মেঘালয়ের কাঁচামালের সহজলভ্যতার কারণে ছাতকে সিমেন্ট, কাগজ ও স্লিপার কারখানা গড়ে উঠেছে। মেঘালয়ের কাঁচামালের সহজলভ্যতার কারণে বর্তমানে এখানে লাফার্জ-হোলসিম ও আকিজ সিমেন্ট কারখানা রয়েছে। মেঘালয়ের সঙ্গে লাফার্জ ও স্লিপার কারখানার দীর্ঘ কনভেয়ার বেল্ট রয়েছে, যা দিয়ে সহজে মেঘালয় থেকে কাঁচামাল আনা যাচ্ছে। একসময় তাহিরপুরের টেকেরঘাট খনিজ প্রকল্পের জন্য চুনাপাথর নিয়ে আসা হতো খাসিয়া পাহাড় থেকে। তা ছাড়া মেঘালয় রাজ্যের সঙ্গে সুনামগঞ্জের সীমান্ত এলাকার যোগাযোগও সহজ। কয়েক বছর আগে দুই দেশের সীমান্তবাসীর জন্য ডলুড়ায় একটি সীমান্তহাট চালু হয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ছাতকের ইসলামপুর ইউনিয়নের হাদাচানপুরসহ তিনটি মৌজার প্রায় দুই হাজার ৯০০ একর জমি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। মেঘালয়ের সঙ্গে ওই এলাকার সড়ক ও নৌপথ উন্নয়নেরও চিন্তা করছে সরকার। মূলত ভারতের মেঘালয় রাজ্যে বাংলাদেশের বাজার সম্প্রসারণ ও দুই দেশের উদ্যোক্তাদের কথা বিবেচনা করেই সম্ভাবনাময় এ অঞ্চলটি প্রতিষ্ঠার কথা চিন্তা করছে সরকার।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এখানে শিল্পায়ন হলে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা সহজে ভারতের সেভেন সিস্টার খ্যাত মেঘালয়, অরুণাচল, আসাম, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরা রাজ্যে সহজে ও কম খরচে পণ্য রপ্তানির সুযোগ পাবেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পে রয়েছে এটি।

প্রধানমন্ত্রী মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছেন, মেঘালয়ের উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারেন, বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী সিলেট অঞ্চলে। যেহেতু সুনামগঞ্জে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম বৃহস্পতিবার বিকেলে গণভবনে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে এ কথা বলেন।

মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ এবং এই উত্তর ভারতীয় রাজ্যটির মধ্যে সহযোগিতা আরো শক্তিশালী করতে চান। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সুনামগঞ্জের অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রতি বিশেষ আগ্রহ এবং সীমান্তবর্তী মেঘালয় রাজ্য সরকারের আগ্রহকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন স্থানীয় ব্যবাসায়ীরা।

সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল বলেন, ‘ছাতকে পুরনো পাল্প অ্যান্ড পেপার মিলটিকেও বেসরকারি ইপিজেড হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এখন ছাতকের ইসলামপুর সীমান্তে সরকারি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়টি খোদ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। আমরা আশা করি অবকাঠামো নির্মাণকাজ দ্রুত শুরু হবে। এতে ভারতের সাতটি রাজ্যের বাজারে আমরা সহজে প্রবেশ করতে পারব।’

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ বলেন, ‘আমি গত সপ্তাহে প্রস্তাবিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি ঘুরে এসেছি। এ বিষয়টি নিয়ে এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. নজিবুর রহমান কাজ করছেন।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত