রিপন দে

১৭ নভেম্বর, ২০১৯ ০৯:৪৭

মধ্যরাতে ৩ ঘণ্টার অভিযানে তরুণী উদ্ধার

রাত ১টার দিকে এই প্রতিবেদকের মোবাইলে অপরিচিত নাম্বার থেকে একটি কল আসে। অপরপ্রান্ত থেকে জহিরুল ইসলাম নামের একজন কাঁদতে কাঁদতে অভিযোগ করেন তার ভাগ্নিকে (১৮) প্রাইভেট কার ড্রাইভার অপহরণ করেছে। ঘটনার বিবরণে তিনি বলেন তার বোন জামাইয়ের বাড়ি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দিনাপুর এলাকায় এবং তার বাড়ি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভৈরবগঞ্জ এলাকায়।

বোন জামাই খুব অসুস্থ তাই মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ২ দিন আগে। বোন জামাইয়ের সাথে ভাগ্নিও হাসপাতালে ছিলেন। শনিবার রাতে তিনি ক্লান্ত ভাগ্নিকে নানা বাড়িতে (ভৈরব বাজারে) চলে যেতে বলেন এবং তিনি নিজে বোন জামাইয়ের পাশে থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন।

রাত দশটার দিকে ভাগ্নিকে একটি গাড়িতে তুলে দেওয়ার জন্য মামা মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের ফটকে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এমন সময় একটা প্রাইভেট কার আসে। প্রাইভেট কার ভৈরব বাজারের দিকে যাবে। কারটি থামে এবং ড্রাইভার জানায় সে লোকাল যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে এ সময় গাড়ির পেছনে যাত্রী বেশে একজন বসা ছিলেন। ৩০টাকা ভাড়া দিয়ে ভাগ্নিকে প্রাইভেট কারে তুলে দেন মামা জহিরুল ইসলাম। ভাগ্নিকে গাড়িতে তুলে দিয়ে মামা হাসপাতালে বোন জামাইয়ের কাছে ফিরে যান। তার কিছু সময় পর মেয়েটির নাম্বার থেকে মামাকে কল করে বলে 'আমাকে বাঁচাও আমাকে ড্রাইভার নামিয়ে দিচ্ছেনা, আমাকে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে'। এ সময় মামাকে লাইনে রেখেই মেয়েটা বলতে থাকে ''আল্লাহ'র দোহাই আমাকে নামিয়ে দেন, আমার আব্বা হাসপাতালে মারা যাবে যদি আমার কিছু হয়" এর পরপর লাইন কেটে যায় এবং মেয়েটির নাম্বার বন্ধ হয়ে যায়।

এমন সময় উনার পরিচিত একজন সাহায্যের জন্য এই প্রতিবেদকের মোবাইল নাম্বার দেয়। এবং তিনি ঘটনাটি জানান। ঘটনার বিবরণ জেনে এই প্রতিবেদক মধ্যরাতে বিষয়টি মৌলভীবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলামকে জানান। তিনি বিষয়টি জেনে সঙ্গে সঙ্গে ভিকটিমের সাথে যোগাযোগ করে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে। মধ্যরাতেই অভিযান শুরু করেন।

প্রায় ৩ ঘণ্টার অভিযানে (রাত ৪টার দিকে) কমলগঞ্জ উপজেলায় দেওড়াচরা চাবাগান থেকে মেয়েটিকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন। এ সময় গাড়িটি আটক করেন তবে ৪ জন অপহরণকারী পালিয়ে যায় তাদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম বলেন, মেয়েটির ভাগ্য ভাল যে ঠিক সময় আপনার মাধ্যমে তথ্য পেয়েছিলাম। ঘটনাস্থলের আলামত দেখে বুঝতে পারছি তাকে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে তারা চাবাগানে নিয়ে এসেছিল। প্রথমে গাড়িতে ২ জন থাকলেও পরে আরও ২ জন যুক্ত হয়। ৪ জন মিলে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে হয়তো মেরে ফেলত। ঘটনাস্থলে মদের আলামত মিলেছে।

পুলিশের গাড়ির উপস্থিতি বুঝতে পেরে ৪ অপরাধী পালিয়েছে তবে প্রাইভেট কারটি আটক করা হয়েছেন এবং মেয়েটিকে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে পেরেছি। অভিযুক্তদের দ্রুত আটক করা হবে। এ ঘটনায় সকালে মামলা হবে বলে তিনি জানান।

তিনি আরও জানান, উদ্ধারের পর মেয়েটি জানিয়েছে সে বাঁচার জন্য প্রচুর চিৎকার করেছে করেছে, কিন্তু নির্জন স্থান হওয়াতে তা কারও কানে পৌঁছায়নি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত