মিনহাজ উদ্দিন, গোয়াইনঘাট

১৭ নভেম্বর, ২০১৯ ১৩:১৬

আছে সাফল্য, নেই জাতীয়করণের স্বীকৃতি

শান্তি নগর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

সিলেটের গোয়াইনঘাটে ৩নং পূর্ব জাফলং  ইউনিয়নের শান্তিনগর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ দাবিটি বাস্তবায়ন হয়নি দীর্ঘদিনেও। জাতীয়করণে সরকারের নীতিমালার প্রায় শতভাগ বাস্তবায়িত হলেও সরকারি স্বীকৃতি পাচ্ছে না বিদ্যালয়টি।

ভবন, অবকাঠামোগত সমস্যার পাশাপাশি জাতীয়করণ না হওয়ার ফলে বিদ্যালয়টির শিক্ষাকার্যক্রমে বিরাজ করছে নানান জটিলতা। ১৯৯৮ সালে স্থাপিত এ বিদ্যালয়টিকে জাতীয়করণে সরকারের সকল চেকলিষ্ট জমা দিয়েও সরকারি সিদ্ধান্ত না হওয়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে দুরে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

জানা যায় শান্তিনগর, মুজিবনগর, কাঠালটিলাসহ আশপাশের গ্রামের জনসাধারণের উদ্যোগে এ বিদ্যাপীঠ যাত্রা শুর করে ১৯৯৮ সালে। পশ্চিমে ২ কিলোমিটার দুরে মুসলিমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব দিকে ২ কিলোমিটার দূরবর্তী নলজুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হওয়ায় এই এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হতো। যেখানে শিশু ঝরে পড়া এক সময় ছিল নিত্যকার ঘটনা। পাহাড় আর টিলা শ্রেণির এ গ্রামগুলোর ক্যাচম্যাপ এরিয়ায় আর কোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠদান চালিয়ে নিচ্ছে অত্যন্ত কষ্ট আর দুর্ভোগ ভোগান্তির সাথে। ৩৩ শতক ভূমির উপর জরাজীর্ণ টিন শেডেরে একটি ঘরে অফিস, ৩ শ্রেণি কক্ষ বিশিষ্ট শান্তিনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমান শিক্ষার্থী ১৯০ জন। তাদের পাঠদানে আছেন ১জন পুরুষ আর ২জন নারী শিক্ষক।

বিদ্যালয়টির অফিস সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়টি জাতীয় করণে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই যাবতীয় কার্যক্রম চলে আসছে। ভূমি, আসবাবপত্র অবকাঠামোগত চিত্রসহ বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করতে সরকারের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ ২০১৫ সনের ৯ আগস্ট একটি ডিও লেটার প্রেরণ করেন। পরে এরই আলোকে  সরকারের উপ-সচিব নুসরাত ইয়াসমিন বিদ্যালয়টির যাচাই বাচাই কমিটির মতামতসহ একই সনের ১৯ সেপ্টেম্বর পত্র প্রেরণ করেন। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সবকটি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ৯৮%-১০০% হারে ফলাফলের নজির রয়েছে।

জানা যায়, ২০১২ সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী স্কুলগুলোর যে তালিকা প্রেরণের জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেয়া হয়। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে দেয়া ১৪টি বিদ্যালয়ের নাম তালিকাতে এসময় উক্ত বিদ্যালয়ের নামসহ তালিকা পাঠানো হয়। পরে ২০১৬ সালের ৯ মে তৎকালীন সিলেটের জেলা প্রশাসক জয়নাল আবেদিনের সভাপতিত্বে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহ জাতীয়করণে যাচাই বাচাই কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক উক্ত বিদ্যালয়টি জাতীয়করণে সুপারিশও করা হয়।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন জানান, বিদ্যালয়টি এবং আমাদের চাকরি জাতীয়করণে আমরা সরকারের সব নির্দেশনাই মেনে আসছি। আমরা আশাবাদী অচিরেই এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষই ব্যবস্থা নিবেন।

এই বিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রী আলো, আব্দুর রশিদ, রেশমিরা জানায় আমাদের বিদ্যালয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে দেখতে চাই। এটা আমাদের মৌলিক অধিকার। শান্তিনগর গ্রামের তরুণ ব্যবসায়ী ইসমাইল আলী জানান, শুরু থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত এই বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের জন্য আমরা দাবি জানিয়ে আসছি। জাতীয়করণ স্বীকৃতিসহ ভবনসহ,অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে এলাকার শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ করে দিতে তিনি সরকারের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপির হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. ইকবাল মিয়া জানান, শান্তিনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়টির ব্যাপারে আমরা অবহিত আছি। এ বিদ্যালয় জাতীয় করণে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিষয়। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই সিদ্ধান্ত নিবেন।

সরকারের প্রবাসীকল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি জানান, সারা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তনে বর্তমান সরকার রোল মডেল। সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রের যাবতীয় সমস্যা সমাধানে আন্তরিক হয়ে কাজ করছে। শান্তিনগর প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ প্রক্রিয়াও দ্রুততায় এগিয়ে চলছে। নীতিমালা অনুসারে আগামীতে এ বিদ্যালয়টিও জাতীয়করণ হবে।

তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে অগণিত প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। স্কুল ফিডিং, উপ-ভিত্তি, মিড ডে মিলসহ নানা শিক্ষা বান্ধব উদ্যোগ সফলতার সাথে পরিচালিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সিলেট-৪ আসনেও অগণিত নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নতুন ভবনসহ শিক্ষা ক্ষেত্রে অগণিত উন্নয়ন প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত