কমলগঞ্জ প্রতিনিধি

২২ নভেম্বর, ২০১৯ ১৯:৪০

চা শ্রমিকদের মজুরী ৩০০ টাকা ঘোষণার দাবি

১০২ টাকা থেকে ৩০০ টাকা মজুরী ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন চা শ্রমিকরা। চা শ্রমিকরা দাবী করেন, ১০২ টাকা মজুরি দিয়ে চা বাগানের পাঁচ, সাত সদস্যের শ্রমিক পরিবার চালানো সম্ভব হচ্ছে না। দেশের চা শিল্প দেড়শ বছর পার করতে যাচ্ছে, কিন্তু এই দেড়শ বছরেও চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরী দেড়শ টাকাও হয়নি। উপযুক্ত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান- সব ক্ষেত্রে চা শ্রমিকরা বঞ্চিত। চা বাগানগুলোতে পর্যাপ্ত সরকারী স্কুল নেই, স্বাস্থ্য কেন্দ্র নেই, ঠিকমত খাবার পায় না, অথচ এই চা শ্রমিকদের শ্রমে ঘামে দেশের চা শিল্প আজ এতদূর এগিয়ে গেছে।

শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সকাল ১১টায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরস্থ কমলগঞ্জ সাংবাদিক সমিতির অস্থায়ী কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এ দাবী জানিয়েছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শমশেরনগর চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি শ্রীকান্ত কানু, চা শ্রমিক নেতা লছমন মাদ্রাজী, শমশেরনগর ইউনিয়নের মহিলা সদস্যা নমিতা সিং, নারী নেত্রী মেরী রাল্ফ, মণি গোয়ালা, মাধবপুর চা বাগানের শ্রমিক নেতা রাম সিং, সুনছড়া চা বাগানের চা শ্রমিক নেতা সঞ্জয় কৈরী, চা শ্রমিক নেতা প্রতাপ রিকিয়াসন, সন্দিপ গোয়ালা, সন্দীপ বীন প্রমুখ।

মতবিনিময় সভায় চা শ্রমিক নেতা সীতারাম বীন লিখিত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে চা শিল্পে নিয়োজিত চা শ্রমিকরা যুগযুগ ধরে অবহেলিত। চা বাগানের শ্রমিকদের মজুরী বাড়ানোর দাবী করায় গত ২০১৮ সনের ৬ অক্টোবর চুক্তি মোতাবেক চা শ্রমিকদের ৮৫ টাকা থেকে মাত্র ১৭ টাকা বৃদ্ধি করে এ ক্লাস বাগানে ১০২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর বি ও সি ক্লাস বাগানে মজুরি আরও কিছুটা কম। মজুরি চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার ২০ মাস পর এই মজুরি বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে ১০২ টাকা মজুরীতে চা বাগানে কর্মরত শ্রমিকরা পাঁচ, সাত সদস্যের পরিবার নিয়ে দৈনিক একবেলা জীবন ধারন করা সম্ভব হচ্ছে না। রেশন ও পর্যাপ্ত নয়। সপ্তাহে রেশন দেয়া হয় নিম্নমানের ৩ কেজি ২৭০ গ্রাম আটা বা চাল। শ্রম আইন ও শ্রম বিধি অনুযায়ী আমাদের চা শ্রমিকদের যেসব সুযোগ সুবিধা রয়েছে সেখান থেকেও সুকৌশলে চা বাগানে নিরক্ষর সাধারণ শ্রমিকদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। ফলে চা বাগান শ্রমিক পরিবার সদস্যরা নুন্যতম খাবার খেয়ে জীবন ধারণের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে দৈনিক মজুরি দেয়ার দাবি উঠছে।

চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের আরো জানান, ২০০৯ সালে তৎকালীন শ্রমমন্ত্রী দৈনিক ১৫০ টাকা, ২০১৪ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ২০০ টাকা, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের উপর আলোচনায় জাতীয় সংসদ অধিবেশনে স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকা করার প্রস্তাব করেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব বিবেচনায় আনতে সরকারের কাছে দাবী করছেন। মতবিনিময় সভায় বক্তারা সরকারের সার্বিক উন্নয়ন এগিয়ে নিতে চা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরী, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে চা শ্রমিকদের বাঁচার মতো ন্যুনতম ৩০০ টাকা দৈনিক মজুরি ঘোষনা করবে প্রত্যাশা করেন সরকার গঠিত মজুরী বোর্ডের কাছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত