নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ নভেম্বর, ২০১৯ ২০:৪১

নির্যাতনের কথা স্বীকার করলেন সালাম মেম্বার, এলাকায় মিষ্টি বিতরণ

এক যুবককে বেঁধে নির্যাতনের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি প্রদান করেছেন জকিগঞ্জের ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম। জবানবন্দির পর সালামসহ ৪ জনকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে আদালত।

শুক্রবার জকিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আনোয়ার হোসেনের আদালতে জবানবন্দি দেন সালাম। এরপর বিচারক তাদের জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করেন। আব্দুস সালাম ছাড়া অন্য আসামীরা হলেন- এবাদ মেম্বার, আনোয়ার, ও শাহজাহান।

জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মো. মোশারফ হোসেন জানান, সে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধী প্রদান করেছে এছাড়াও আগামী কাল আসামীদেরকে ১০ দিনের জন্য রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে।

এদিকে, সহযোগীসহ আব্দুস সালামকে গ্রেপ্তারের খবর শুনে ভুক্তভোগী ও সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিগণ জকিগঞ্জের আটগ্রাম ও রতনগঞ্জে মিষ্টি বিতরণ করেছেন। মূর্তিমান আতঙ্ক সালাম মেম্বারকে গ্রেপ্তার করায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন তারা।
এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জকিগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক সুশংকর পাল জানান, বৃহস্পতিবার নির্যাতিত গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে জকিগঞ্জ থানায় সালাম মেম্বার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার মামলা করেন।

বিচারের নামে অমানুষিক নির্যাতন, হত্যা, নারী কেলেঙ্কারী, দখলবাজী ও মাদকের সাথে সংশ্লিষ্টতাসহ নানা অভিযোগে একাধিকবার আলোচনায় আসেন ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম। অথচ তার বিরুদ্ধে এতদিন  প্রকাশ্যে কথা বলা কিংবা প্রতিবাদ করার দুঃসাহস কেউ দেখায়নি। প্রায় দেড়যুগ থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় লোকের সাথে সখ্যতা ও নিজের ক্ষমতা বলে নানা অপরাধ করেও আইনের ফাঁক দিয়ে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন তিনি।

নানা অপকর্মের হোতা সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার কাজলাসার ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের এই সদস্য আব্দুস সালাম উরফে ফকির মাস্তানকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুলিশ কানাইঘাট উপজেলার কাড়াবাল্লা সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করে। এই ঘটনায় তার অপর তিন সহযোগী এবাদুর রহমান, আনোয়ার হোসেন ও শাহাজাহানকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করে বৃহস্পতিবার সকালে।

জকিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় জানান,  আব্দুস সালাম মেম্বার কর্তৃক একই ইউনিয়নের বড়বন্দ গ্রামের মৃত সফর আলীর ছেলে গিয়াস উদ্দিনকে বাঁশে ঝুলিয়ে হাত পা বেঁধে নির্মম নির্যাতনের প্রায় ১০ মাস পূর্বের একটি  ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে সর্বত্র ব্যাপক ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠে। তাকে গ্রেফতারের দাবী উঠে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি উপজেলার ৩নং কাজলশার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম ওরফে ফকির মাস্তান একই ইউনিয়নের বড়বন্দ গ্রামের মৃত সফর আলীর ছেলে গিয়াস উদ্দিন (৩৫)কে বাঁশের সঙ্গে ঝুলিয়ে হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে পায়ের নিচে বেধড়ক মারপিট করে নির্যাতন করেন। নির্যাতনের শিকার যুবকের চিৎকার, চেচামেচি ও বাঁচার আকুতি করলেও সালামের মন গলেনি। তিনি বেধড়ক পিঠাতে থাকেন গিয়াসকে।

বুধবার রাতে নির্যাতনের এই ভিডিও ভাইরাল হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিনের নির্দেশক্রমে জকিগঞ্জ থানার ওসি মীর আব্দুন নাসের ঘটনার সাথে জড়িত ৪ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত