মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

০৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ ২২:০৮

মৌলভীবাজারে ২ ছাত্রলীগ নেতা হত্যা: নিহতের পরিবারকে হুমকির অভিযোগ

মৌলভীবাজারের ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী শাবাব ও নাহিদ আহমদ মাহি হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিরা প্রকাশ্যে মামলার বাদীর পরিবারকে হুমকি প্রদান করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন নিহতের পরিবার। এদিকে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের দুই বছর অতিক্রান্ত হলেও শেষ হয়নি বিচারকার্য। এ নিয়ে নিহতদের পরিবারের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। বর্তমানে মামলাটির তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

এদিকে চাঞ্চল্যকর ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী শাবাব ও নাহিদ আহমদ মাহি হত্যার দুই বছর অতিক্রান্ত হলেও শেষ হয়নি বিচারকার্য। এনিয়ে নিহতদের পরিবারের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। বর্তমানে মামলাটির তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

নিহত শাবাব মৌলভীবাজার শহরের পুরাতন হাসপাতাল সড়ক এলাকার আবুবক্কর সিদ্দিক ও সেলিনা রহমানর কনিষ্ঠ পুত্র। মাহি সদর উপজেলার কনকপুর ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের বিল্লাল মিয়া ও জুলেখা বেগমর পুত্র।

নিহত শাবাবের মা সেলিনা রহমানের অভিযোগ, জামিনে থাকা আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরা-ফেরা করে তাদের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। নিজের নিরাপত্তা চেয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানায় তিনি জিডি করেছেন তিনি। জিডিতে তিনি আনিসুল ইসলাম তুষারসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে বলেন, শাবাব হত্যা মামলার এ আসামিরা হাজতে থেকে পরবর্তীতে জামিনে মুক্তি পায়। এর পর থেকেই প্রকাশ্যে হুমকি দেয়। তিনি তার ও তার পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি থানায় (জিডি নং-৭১৬) জিডি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে নিরাপত্তার দাবি জানান।

তিনি বলেন, তার পুত্র হত্যার সৃষ্টিকারী হোতা ফাহিম মোনতাছিরকে আইনের আওতায় না এনে চার্জশিট দেয় পুলিশ। সমস্ত চার্জশিট এলোমেলো ভাবে দেয়ার কারণে মামলার তদন্তভার আদালত পিবিআইতে পাঠায়। মামলা তদন্তাধীন থাকা সত্ত্বেও আসামিরা আমাদের হুমকি দিচ্ছে। তারা কার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এতো বেপরোয়া হয়ে গেল? তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পুত্র হত্যার বিচার দাবি করেন।

শাবাবের বাবা আবুবক্কর সিদ্দিক বলেন, পুত্র হত্যা মামলার এখনো কোন সাড়া-শব্দ পাচ্ছিনা। আসামি পক্ষের লোকজন প্রকাশ্যে চলাফেরা করছে। এক আসামি পলিয়ে বিদেশে চলে গেছে। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে বিদেশ পালিয়ে যাওয়া আসামিদের দেশে আনা ও যারা জামিনে আছে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সর্বোচ্চ বিচারের দাবি করেন।

তিনি বলেন, কে বা কারা ফোন করে শাবাবকে নিয়ে গেছে এই ঘটনা এখনও উদঘাটন হয়নি। পুলিশের তদন্তেও তা তুলে ধরা হয়নি। এই বিষয়টা যদি সঠিকভাবে তদন্ত করা হলে মূল ঘটনার রহস্য উদঘাটন হবে। শাবাব তার ফোনে কল পাওয়ার আধা ঘণ্টা পরেই তাকে হত্যা করা হয়। কিন্তু পিবিআই আজ এতদিন ধরে তদন্ত করছে কিন্তু ঘটনার কোন রহস্য এখনও উদঘাটন করতে পারে নি।

জানা যায়, ২০১৭ সালের ৭ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে হত্যা করা হয় ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী শাবাব ও তার কর্মী নাহিদ আহমদ মাহিকে। এ ঘটনায় নিহত শাবাবের মা সেলিনা রহমান চৌধুরী ঘটনার পরের দিন মৌলভীবাজার মডেল থানায় ১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে আলোচিত এ জোড়া খুনের ঘটনায় শাবাবের পরিবার থেকে তার মা সেলিনা রহমান চৌধুরী বাদী হয়ে মামলা করলেও নিহত মাহির পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ মামলা দায়ের করেন নি।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, নিহত শাবাবের গ্রুপের সাথে তুষার গ্রুপের বিরোধের কারণেই তুষার শাবাবকে হত্যা করা হয়েছে । ঘটনার ১০/১২ দিন পূর্বে নিহত মাহি সাথে তুষার গ্রুপের ফাহিমের ঝগড়া হয়। এই বিষয়টি মীমাংসা করার জন্যই ঘটনার দিন ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় শাবাব ও মাহিকে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রাবাস এলাকায় ডাকা হয়। সেখানে তুষার গ্রুপ শাবাব ও মাহিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এসময় ঘটনাস্থলে থাকা শাবাব ও মাহির বন্ধুরা ও পথচারীরা গুরুত্বর আহত শাবাব ও মাহিকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে পৌঁছালে কর্তব্যরত ডাক্তার তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন।

লোমহর্ষক এ হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ প্রায় ১ বছর পর আদালতে চার্জশিট দায়ের করেন মডেল থানার তৎকালীন ওসি সোহেল আহাম্মদ। তিনি তুষারসহ ১০ আসামিকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট জমা দেন। কিন্তু বাকি দুই আসামিকে চার্জশিটের অন্তর্ভুক্ত না করায় বাদিনীর নারাজির প্রেক্ষিতে মামলাটি পিবিআইতে প্রেরণ করেন আদালত। বর্তমানে মামলাটি পিবিআই এখন তদন্ত করছে।

এদিকে মামলার ৩ আসামি পলাতক এবং প্রধান আসামি আনিসুল ইসলাম তুষারসহ সবাই জামিনে। তুষার জামিনে মুক্ত হওয়ার পর বর্তমানে পুরোদমে রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট মৌলভীবাজার জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। আসামিদের একজন ফাহিম মুনতাসির পুলিশের খাতায় পলাতক থাকলেও বর্তমানে সে বিদেশে অবস্থান করছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক নজরুল ইসলাম জানান, ৩ আসামি পলাতক বাকিরা সবাই জামিনে আছেন। বাদীকে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে মৌলভীবাজার থানায় জিডি হয়েছে। আমরা আমাদের মত তদন্ত করছি খুব শীঘ্রই প্রতিবেদন দাখিল করব।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত