মাইদুল রাসেল, সুনামগঞ্জ

২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ১৭:৫৮

প্রতিটি বাড়িই একেকটি গরুর খামার!

হাওরবেস্টিত জেলা সুনামগঞ্জ। বর্ষা মৌসুমে জেলার বেশিরভাগ এলাকাই থাকে জলমগ্ন। চারদিক পানিতে টুইটুম্বুর থাকায় বছরের প্রায় ছয় মাস কর্মহীন থাকতে হয় এ অঞ্চলের কৃষি নির্ভর মানুষদের। তবে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো অপেক্ষাকৃত উঁচু। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে জেলার সীমান্ত এলাকার প্রায় প্রতিটি ঘরে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট গরুর খামার। ঘরের নারী সদস্যরাই দেখাশুনা করেন এসব খামারের।

গত দুই-তিন বছর ধরে আয়ের এই নতুন পথ খোঁজে পেয়েছেন সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর নারীরা। কোরবারি ঈদের মৌসুম এলেই ছোট ছোট গরু কিনে লালন পালন শুরু করেন। এরপর ঈদের ঠিক আগে আগেই বিক্রি করে দেন। এতে করে বর্ষা মৌসুমে ঘরের পুরুষ সদস্য যখন কর্মহীন হয়ে পড়ছেন তখন নারীরাই হয়ে উঠছেন উপার্জনশীল।

এবছরও কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সুনামগঞ্জের সীমান্ত এলাকার ৬টি উপজেলার ঘরে ঘরে গড়ে তুলেছেন ছোট ছোট গরুর খামার। এসব খামারে প্রাকৃতিক উপায়ে দেশি গরু মোটাতাজা করছেন তারা। এতে এ অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষদের সৃষ্টি হচ্ছে বিকল্প কর্মসংস্থান।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দিনদিন দেশী গরুর চাহিদা বাড়তে থাকায় বাড়তি কিছু লাভের আশায় দু’তিনটে করে গরু ঈদের কয়েক মাস আগে থেকেই লালন পালন শুরু করেন তারা। গত দুই তিন বছর থেকেই গরু পালনে মনোযোগী হন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। এতে অনেকে লাভবান হওয়ায় এবছর আরো অধিক সংখ্যক এলাকাবাসী নিজেদের ঘরে ছোট ছোট গরুর খামার গতে তুলেছেন।

জানা যায়, জেলার হাওর অঞ্চলে বছরে প্রায় ৬ থেকে ৮ মাস পানি থাকে। সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলো অপেক্ষাকৃত উচু ও মাটি উর্বর। ফলে এসব এলাকায় প্রচুর ঘাস জন্মায়। এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে জেলার সদর, বিশ্বম্বরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, তাহিরপুর, ধর্মপাশা উপজেলার সীমান্তঘেঁষা গ্রামে গ্রামে ঘরে উঠেছে গরুর খামার। এসব গ্রামের প্রায় প্রতিটি ঘরেই দু’একটি করে দেশি গরু প্রাকৃতিক উপায়ে মোটা তাজা করছেন কৃষাণ-কৃষানিরা। মূলত ঘরের নারী সদস্যরাই গরুর লালন পালনে নিয়োজিত থাকেন।

খামারিরা জানান, কোন ক্ষতিকারক ঔষধ বা ভিটামিন ব্যাবহার না করেই এসব গরু লানন পালন করা হচ্ছে।

তারা জানান, এমনিতেই দেশী গরুর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তার ওপর এবছর ভারত থেকে গরু আসার সম্ভবনা কম থাকায় কৃষকরা বাড়তি দামের আশা নিয়ে গরু পালনে ¦ার অধিক মনোযোগী হয়েছেন।

সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের পার্বতীপুর গ্রামের গৃহবধু কামরুন নাহার জানান, তিনি গত দু’বছর যাবত কোরবানির ঈদের আগে দুই/তিনটি করে গরু কিনে লালন পালন করেন। এবছর তার প্রায় ৪০/৫০ হাজার টাকা তার লাভ হয়েছে বলে জানা কামরুন।

তিনি জানান, এই এলাকার প্রায় কয়েক শ’ নারী এখন এই গরু লালনপালনের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনে ভূমিকা রাখছেন।

এদিকে জরজরিয়া গ্রামের আব্দুর রহিম জানান, তিনি প্রায় ২০ বছর হয় ৪/৫টি করে গরু মোটাতাজা করে বিক্রি করেন। বর্তমানে তার এটিই পেশা। এতে তার লাভও হচ্ছে।

জেলা প্রানি সম্পদ কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম জানান, জেলার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন গ্রামে এবছর প্রায় ৮শ’ গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। এতে উপকৃত হচ্ছে প্রায় কয়েকশ’ পরিবার। পরিবারের নারী সদস্যরাই একাজে নিয়োজিত রয়েছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত