নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ০৩:১১

উন্নত চিকিৎসার জন্য আরিফকে ঢাকায় প্রেরণের নির্দেশ

সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলার আসামী সিলেট সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্তকৃত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল। আরিফের স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে সোমবার বিকেলে সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোঃ মকবুল আহসান এ নির্দেশনা দেন।

ট্রাইবুনাল আরিফুল হক চৌধূরীর নিযুক্ত আইনজীবী এডভোকেট মো. লালাকে আরিফের পক্ষে ট্রাইবুনালে হাজির হয়ে মামলা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। ফলে এখন থেকে আরিফুল হক চৌধূরীকে রায় পর্যন্ত ট্রাইবুনালে হাজির হতে হবে না।

পাশাপাশি গতকাল হবিগঞ্জের বহিষ্কৃত পৌর মেয়র জিকে গৌছের জামিনের আবেদনের উপর শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। শুনানী শেষে তার জামিন নামঞ্জুর করেন ট্রাইবুনাল।

মামলার নির্ধারিত ধার্য তারিখে গতকাল সোমবার আদালতে আসামীদের মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, আরিফুল হক চৌধুরী, জি কে গউছ, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নানসহ ১৪ আসামিকে হাজির করা হয়।

আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মামলার অভিযোগপত্র গঠনের দিন আরিফুল হকের অসুস্থতার কথা জানিয়ে তাঁর চিকিৎসা নিশ্চিত করতে ঢাকা অথবা দেশের বাইরের কোনো হাসপাতালে পাঠানোর জন্য তাঁর পক্ষের আইনজীবীরা আদালতে আবেদন করেছিলেন। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আরিফুলের অসুস্থতার বিষয়ে চিকিৎসকদের প্রতিবেদন দাখিল করতে ওই দিনই কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। আদালতের নির্দেশে আরিফুল হক চৌধুরীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি মেডিকেল বোর্ড। প্রতিবেদনে আরিফুল হকের উন্নত চিকিৎসার মতামত দিয়ে এ ব্যাপারে আদালতের নির্দেশনা চাওয়া হয়। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রতবেদনটি আদালতে পৌঁছায়।

আরিফুল হক চৌধুরীর আইনজীবী এডভোকেট মো. লালা জানান, শুনানী চলাকালে তারা আরিফুল হকের শারীরিক অসুস্থতার বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। কাগজপত্র পর্যালোচনা শেষে আদালত আরিফুল হক চৌধুরীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের নির্দেশনা দেন। পাশাপাশি আরিফুলকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন। তার অনুপস্থিতিতে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলবে। এ অনুযায়ী আরিফের পক্ষে আইনজীবী হিসাবে তিনি হাজিরা দেবেন বলে জানান এডভোকেট লালা।

সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি এডভোকেট কিশোর কুমার কর জানান, সোমবার আদালত মেয়র আরিফুল হককে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণের নির্দেশ দিয়ে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর আলোচিত এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেন। আদালত মামলার অপর আসামী জি কে গৌছের জামিন নামঞ্জুর করেন।

গত ১১ জুন হবিগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ মোঃ আতাবুল্লাহ আলোচিত এই মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর আদেশ প্রদান করেন। এর আগে গত ২ জুন হবিগঞ্জ জেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নিশাত সুলতানার আদালত থেকে মামলাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়েছিল। এর আগে এ মামলায় ৩২ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডি’র সিনিয়র এ এসপি মেহেরুন্নেছা পারুল।

উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের বৈদ্যেরবাজারের জনসভায় গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াসহ পাঁচজন নিহত হন। এ ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাংসদ আবদুল মজিদ খান বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে ঘটনার প্রায় ১০ বছর পর গত ১৩ সেপ্টেম্বর আদালতে ৩২ আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। আরিফুল এ মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি হিসেবে কারাবন্দী আছেন। এ হত্যা মামলার ৩২ আসামীর মধ্যে-১৪ জন কারাগারে, ৮ জন জামিনে এবং ১০ জন পলাতক রয়েছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত