নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, কমলগঞ্জ

১০ ফেব্রুয়ারি , ২০১৫ ২০:৩৯

লাউয়াছড়া উদ্যানে পর্যটক হ্রাস ॥ স্বস্থিতে বন্যপ্রাণী

২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধ আর হরতালে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে হ্রাস পেয়েছে পর্যটকের আগমন। স্থানীয় কিছু পর্যটক ছাড়া দূর দূরান্তের পর্যটকের আগমন রয়েছে শূন্যের কৌঠায়। ফলে বনের শান্ত নিবিড় পরিবেশে জাতীয় উদ্যানে স্বস্থিতে রয়েছে বন্যপ্রাণী।

২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধ আর হরতালে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে হ্রাস পেয়েছে পর্যটকের আগমন। স্থানীয় কিছু পর্যটক ছাড়া দূর দূরান্তের পর্যটকের আগমন রয়েছে শূন্যের কৌঠায়। ফলে বনের শান্ত নিবিড় পরিবেশে জাতীয় উদ্যানে স্বস্থিতে রয়েছে বন্যপ্রাণী।
    সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধ আর হরতালে গত এক মাস যাবত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পর্যটকের উপস্থিতি মাত্রাতিরিক্তহারে হ্রাস পেয়েছে। স্থানীয় এলাকার কিছু সংখ্যক পর্যটক ছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে আগত পর্যটকেরা আসতে পারছেন না। ফলে রাজস্ব আয়ে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও উদ্যানের বন্যপ্রাণিরা স্বস্থিতে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বনকর্মী বলেন, অত্যধিক পরিমাণে পর্যটক বৃদ্ধি পাওয়ায় জাতীয় উদ্যানের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। বন্যপ্রাণি অবাদে বিচরন করতে পারছে না। এছাড়াও কিছু অসামাজিক কার্যকলাপ চলে। পর্যটকেরা হাল্লা-চিৎকার, ঢিল ছোড়া, অবাদে দল বেঁধে চলা, ট্রেনের অতিরিক্ত শব্দ মিলিয়ে বন্যপ্রাণীর জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি সময়ে হরতাল অবরোধের কারণে পর্যটকের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় বন্যপ্রাণী কিছুটা স্বস্থিতে রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
    লাউয়াছড়ায় বন্যপ্রাণি ও পরিবেশ সংরক্ষণে কর্মরত ‘ক্লাইমেট রেসিলিয়েন্ট ইকোসিস্টেমস এন্ড লাইভলিহুডস(ক্রেল)’ প্রজেক্ট এর সাইট অফিসার মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে হরতাল, অবরোধের কারণে পর্যটকের আগমন কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। গত জানুয়ারী মাসে ১ লাখ ৫৪ হাজার পনের জন পর্যটক ভ্রমণ করেছেন। হরতাল, অবরোধ না হলে পর্যটকের উপস্থিতি তিন লাখ ছাড়িয়ে যেত বলে তিনি মনে করেন। অত্যধিক পর্যটকের কারনে বন্যপ্রাণীর হুমকি বিষয়ে তিনি বলেন, জাতীয় উদ্যানের ব্যাপকতা প্রকাশ পাওয়ায় পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। গত ঈদুল আযহার পরদিনই শুধুমাত্র ৮০ হাজার পর্যটকের উপস্থিতি ঘটে। তিনি বলেন, অত্যধিক পর্যটকের উপস্থিতি বন্যপ্রাণীর জন্য অবশ্যই ক্ষতিকর।
    মিশ্র চিরহরিৎ লাউয়াছড়া বনে শুষ্ক মৌসুমে প্রাকৃতিক পানি, খাবার ও নিরাপদ বাসস্থান সংকট দেখা দেয়। তারপর অত্যধিক পরিমাণে পর্যটকের আগমন, হাল্লা-চিৎকার, মাইকের আওয়াজ ও যানবাহনের হুড়োহুড়ি, গাছ চুরি এসব বিভিন্ন অপতৎপরতা জাতীয় উদ্যানে বন্যপ্রাণীর জন্য পরিবেশ প্রতিকূল হয়ে উঠে। নিসর্গ সহায়তা প্রকল্পের আওতায় লাউয়াছড়ায় কয়েকটি ইকো-কটেজ, বাঘমারা এলাকায় স্টুডেন্ট ডরমিটরি স্থাপন, ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে প্রকৃতি সহ-ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রকৃতি ব্যাখ্যা কেন্দ্র স্থাপনের ফলে পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বনের ভেতরে দল বেঁধে মানুষের অবাধ বিচরন বন্যপ্রাণীর জন্য খাবার সংগ্রহ ও চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। সম্প্রতি সময়ে লাউয়াছড়া থেকে ৫টি প্রধান প্রজাতি হারিয়ে গেছে। যাদেরকে দেশের অন্যান্য অংশে দেখতে পাওয়া যায়।
    এসব বিভিন্ন কর্মকান্ডের ফলে বন্যপ্রাণীর খাবার ও আবাসস্থল বিনষ্ট হতে চলেছে। যে কারণে খাবারের সন্ধানে জঙ্গলের দূর্লভ প্রাণীগুলো জনপদে ছুটে এসে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষের হাতে ধরা পড়ে অথবা গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যাচ্ছে। লাউয়াছড়ায় বসবাসরত জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় বনভূমি সংরক্ষণে পরিকল্পিত উদ্যোগ নেয়া অত্যাবশ্যক বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত