জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ থেকে

২৭ জুলাই, ২০১৬ ০০:৩০

আতঙ্কে দেশ ছাড়লেন ২ পুরোহিত, মন্দিরের ফটক লাগিয়ে পূজা অর্চনা

এক মাসের ব্যবধানে ঝিনাইদহে এক হিন্দু পুরোহিত এবং এক সেবায়েত খুনের পর বিভিন্ন মন্দিরে নিরাপত্তা বাড়ানো হলেও আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না পুরোহিত ও সেবায়েতদের। আতঙ্কে দুই পুরোহিতের দেশ ছাড়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও অধিকাংশ মন্দিরে ফটক আটকে পূজা অর্চনা চলছে বলেও জানা গেছে।

জেলার চারটি গুপ্ত হত্যা এবং জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মেলার পর আতঙ্কে রয়েছেন হিন্দু ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষও। পুলিশি নিরাপত্তার পরও তারা নিজেরা সতর্ক হয়ে চলাফেরা করছেন।

ঝিনাইদহের বিভিন্ন স্থান ঘুরে জানা গেছে, শৈলকূপার মঠবাড়ি কালীমন্দিরের পুরোহিত সোনা সাধু এবং রামগোপাল মন্দিরের পুরোহিত স্বপন চক্রবর্তী ভারতে চলে গেছেন।

রামগোপাল মন্দিরের সভাপতি কালাচান সাহা জানান, দুই হত্যাকাণ্ডের পর তাদের মন্দিরের পুরোহিত অন্য একজনকে দায়িত্ব দিয়ে ভারত চলে গেছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তিনি ফিরতে পারেন বলে জানিয়ে গেছেন।

অন্যদিকে মঠবাড়ি কালীমন্দিরের পুরোহিত প্রতাপ চন্দ্র সাহা জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্ক থাকতে বলার পর দেশ ছেড়েছেন তাদের পুরোহিত।

“পুরোহিত হত্যার ঘটনার পর আমাদের মন্দিরে পুলিশ এসেছিল। তারা পুরোহিতকে বলল, আপনার মন্দির দুর্গম এলাকায়, যাতায়াতে সমস্যা, আপনি একটু সাবধানে থাকবেন। এরপর তিনি ভারত চলে যান।”

এছাড়াও ওই এলাকায় গত ১ জুলাই এবং ৭ জুন এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

আতঙ্কে ‘বন্দিজীবন’
দুই খুনের পর ঝিনাইদহের প্রায় সব মন্দিরেই পুরোহিত, সেবায়েত এমনকি পুণ্যার্থীরাও ভয়ে আছেন। মন্দিরগুলোয় পূজা অর্চনা হচ্ছে ফটক আটকে। আর পূজা শেষে বন্ধ রাখা হয় মন্দির।

শহরের শ্রী শ্রী মদনমোহন মন্দিরে গিয়ে সেখানে দুজন পুলিশ সদস্যকে নিরাপত্তায় নিয়োজিত দেখা যায়।

সেখানে কনস্টেবল আরিফুল ইসলাম জানান, একজন এএসআইর তদারকিতে পুলিশের ৬ সদস্য পালাক্রমে এখানে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন।

পাহারায় পুলিশ থাকলেও তাতে আতঙ্ক কাটেনি বলে জানালেন মন্দিরের পুরোহিত মদন গাঙ্গুলী। তার কথাতেই বোঝা গেল আতঙ্ক কতটা চেপে বসেছে।

“বলতে গেলে ভেতরে বন্দি অবস্থায় আছি। পারতপক্ষে বাইরে বের হই না। কারও বাড়িতে ডাক পড়লে ভয়ে ভয়ে দুই একজন সঙ্গে নিয়ে যাতায়াত করি। মাঝে মাঝে পুলিশও নিয়ে যাই।”

তার প্রশ্ন- তারা পুরোহিত, কোনো রাজনীতি করেন না, তারপরও কেন তাদের ওপরই হামলা ?”

গত রোববার শহরের শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরে দেখা যায়, পূজা শেষ হওয়ার পরপরই মন্দির বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই মন্দিরে এখন গেট আটকেই পূজা হয় বলে জানান স্থানীয়রা।

শহরের চাকলাবাড়ি মন্দিরের পুরোহিতও কলাপসিবল গেইটবন্ধ করে পূজা করেন। এভাবে কতদিন বাঁচা যায়- প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, পুলিশ মাঝে মাঝে আসে, তারপরও তারা আতঙ্কে থাকেন। পুরোহিত-সেবায়েত ছাড়াও হিন্দু সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষের মধ্যেও আতঙ্ক রয়েছে।

শহরের প্রতিষ্ঠিত একজন হিন্দু ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “খুব আতঙ্কে আছি। কখন কী হয়, বুঝতে পারছি না। তাই মন খুলে ব্যবসা বাণিজ্যেও মন দিতে পারছি না।”

হিন্দু পুরোহিত, সেবায়েত এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় নেওয়া ব্যবস্থা প্রসঙ্গে জেলার পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন বলেন, “আমরা পুরোহিত ও সেবায়েতদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। জেলা শহর ও উপজেলা সদরে যে সব মন্দিরে নিত্যপূজা হয়, সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

“এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করে দেওয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকরা পূজার আগে পুরোহিতকে মন্দিরে নিয়ে যায়, পূজার পর আবার বাড়ি পৌঁছে দেয়।”

আপনার মন্তব্য

আলোচিত