২০ আগস্ট, ২০১৬ ২৩:০৩
ঝিনাইদহে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে সংসদ সদস্যদের কর্তৃত্ব বহাল রয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শিক্ষক কর্মচারিদের মসিক বেতন ভাতা বিলে স্বাক্ষরসহ শিক্ষক নিয়োগ অব্যাহত রেখেছেন তারা।
এমপিদের অনুপস্থিতিতে জেলা প্রশাসক ও ইউএনদের বেতন বিলে সাক্ষর করার নির্দেশনা থাকলেও এ সংক্রান্ত কোন চিঠি না আসায় সরকারী কর্মকর্তারাও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
অথচ গত ১ জুন উচ্চ আদালত কর্তৃক পদ প্রদত্ত এক রায়ে দেশের সব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে সংসদ সদস্যদের সভাপতি হওয়ার বিধান বাতিল ঘোষণা করেছেন।
অভিযোগ উঠেছে শৈলকূপা, কালীগঞ্জ, হরিণাকুন্ডু, ঝিনাইদহ সদর ও মহেশপুর কোটচাঁদপুর এলাকায় এখনো জনপ্রতিনিধিরাই শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছেন। উচ্চ আদালত রায় প্রদানের পরও স্থানীয় সংসদ সদস্য বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে নিয়োগ বোর্ড গঠন করে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিয়ে যাচ্ছেন। নিয়োগ পরীক্ষার সময় এমপিরা নিজে উপস্থিত থাকছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। হরিণাকুন্ডুর ঘোড়াগাছা হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে একই নিয়মে।
এ সব বিষয় নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিসার মকছেদ আলী, কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আরিফ সরকার বলেছেন, আদালতের রায়ের আলোকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কোন নির্দেশ পাননি তারা। যে কারণে এখনো সংসদ সদস্যগণই আগের মতই নির্দিষ্ট কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি পদে বহাল রয়েছেন মর্মে ধরে নেওয়া যায়।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি (ডিজির প্রতিনিধি ) ঝিনাইদহ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুনীল কুমার অধিকারী ভিন্ন কথা বলেছেন। তিনি শনিবার সাংবাদিকদের জানান, উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ থাকা স্বত্বেও বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির (এমপি) অনুরোধে নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণ করেছেন তারা।
তিনি আরো জানান, নিয়োগ বোর্ডে এমপি, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সহ শিক্ষক প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকছেন। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গত ৯ আগস্ট উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়নে ১৬০ নং স্মারকে একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। পত্রখানা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব সালমা জাহান পত্রটিতে স্বাক্ষর করেছেন।
ওই পত্রের আদেশে গত ১ জুন তারিখে উচ্চ আদালতের প্রদত্ত রায় অনুযায়ি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দেয়া হয়।
এর আগে গত ২৩ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) চৌধুরী মুফাদ আহমদ কর্তৃক স্বাক্ষর করা এক “পরিপত্রে” বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং অধ্যক্ষ/ প্রধান শিক্ষকের যৌথ স্বাক্ষরে উত্তোলন করা যাবে মর্মে নির্দেশ দেয়া হয়।
প্রসঙ্গত: রাজধানীর ভিকারুন নিসা নুন স্কুল ও কলেজ পরিচালনা জন্য গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. মো: ইউনুছ আলী আখন্দ রিট পিটিশন নং ২০৪৩/২০১৩ দায়ের করেন।
এ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে বেসরকারি স্কুল কলেজে এমপির সভাপতি পদে মনোনীত হওয়ার বিধান বাতিল ঘোষণা করা হয়। রায়ের আদেশ অংশে ১২ দফা নির্দেশনা ও পর্যবেক্ষণ দেন আদালত। সরকার এ রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করেও হেরে গেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনও উচ্চ আদালতের প্রদত্ত রায় বহাল থাকায় এমপি সাহেবরা কোন নিয়োগ বোর্ড গঠন কিংবা পরীক্ষা গ্রহণ করতে পারেন না।
ঝিনাইদহ জেলা শহরের অন্যতম বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান “ঝিনাইদহ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মো: বাদশা আলম জানিয়েছেন, সরকারের স্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় গত জুলাই মাসে গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে ঝিনাইদহ-২ আসনের সংসদ সদস্য তাহজিব আলম সিদ্দিকীর স্বাক্ষরে বেতন ভাতা উত্তোলন করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেছেন বেতন ভাতার বিলে জেলা প্রশাসক মো: মাহবুব আলম তালুকদারের স্বাক্ষর গ্রহণের জন্য চেষ্টা করেও হয়নি তিনি (অধ্যক্ষ) দাবী করেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আদালতের রায়ের বিষয়ে আজো কোন নির্দেশ জারি করেননি।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, উচ্চ আদালতের রায় কার্যকর করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর কিংবা শিক্ষা বোর্ড জোরালো কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। জেলা পর্যায়ে প্রশাসনের কাছেও বিষয়টি স্পষ্ট করা হচ্ছেনা। এতে করে আগের নিয়মেই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে সংসদ সদস্য কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন।
আপনার মন্তব্য