সিলেটটুডে ডেস্ক

২৮ আগস্ট, ২০১৬ ২০:৩৯

রিশার খুনিকে ধরতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

রাজধানীর কাকরাইলে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশার (১৫) খুনিকে গ্রেফতার করতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।
 
রোববার প্রতিষ্ঠানটির সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এ আল্টিমেটাম দেয়া হয়। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলে।
 
এ সময় একাদশ শ্রেণির ছাত্র মোন্তাসির মাহমুদ বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামি গ্রেফতার না হলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।
 
উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র রাকিবুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনার পর সব শিক্ষার্থীই এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। শিক্ষার্থীরা যদি নিরাপদ না থাকে তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?
 
এদিকে রোববার দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে স্কুল মাঠে রিশার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল আবুল হোসেন জানান, 'যে দুস্কৃতিকারীর ছুরিকাঘাতে রিশার মৃত্যু হয়েছে তার ফাঁসি দাবি করছি।'
 
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় স্কুলে শোকসভা অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, রিশার স্মৃতি রক্ষার্থে প্রতিষ্ঠানের একটি ডিজিটাল রুম তার নামে নামকরণ করা হবে।
 
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আবুল হোসেন বলেন, 'আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেবল প্রতিষ্ঠানের ভেতরে। রিশা ছুরিকাঘাতের শিকার হয়েছে প্রতিষ্ঠানের বাইরে। আমরা প্রতিষ্ঠানের বাইরের সড়ক এবং ফুট ওভারব্রিজেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা রেখেছিলাম। কিন্তু পুলিশ এতে বাধা দিয়ে বলেছে, বাইরের বিষয়টি তারা দেখবে। তাই বেশ কিছুদিন আগেই সেখান থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।'
 
রিশার মা তানিয়া হোসেনের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ৬ মাস আগে ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং মলে বৈশাখী টেইলার্স নামে একটি দোকানে জামা বানাতে দেয় রিশা। ওই সময় তার মোবাইল নম্বরটিও দেয়া হয়। এরপর থেকে ওই টেইলার্সের কাটিং মাস্টার ওবায়দুল রিশাকে প্রায়ই ফোনে উত্ত্যক্ত করত।
 
ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল আবুল হোসেন জানান, বুধবার সকাল ১০টায় রিশার পরীক্ষা শেষ হয়। আগে সাধারণত তার সঙ্গে মা অথবা বাবা আসতেন। কয়েকদিন ধরে রিশা একাই স্কুলে আসা যাওয়া করতো। রাস্তার ওপার থেকে স্কুলভ্যানে উঠতে রিশা ফুট ওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিল। ওভারব্রিজের ওপরই রিশা ছুরিকাঘাতের শিকার হয়।
 
তিনি জানান, স্কুলের ভেতর ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা থাকলেও বাইরে বা ওভারব্রিজের ওখানে ছিল না।
 
এক প্রশ্নের জবাবে প্রিন্সিপাল বলেন, 'ঘটনার পরদিন থেকে গত তিনদিন সরকারি ছুটি ছিল। আমার মেবাইলটিও নষ্ট ছিল। এ কারণে রিশার অভিভাবক বা সংশ্লিষ্টরা আমাকে পায়নি। মোবাইল নষ্ট থাকলেও এখন স্কুল খোলা। তাই ল্যান্ডফোনে ফোন করলে এখন সবাই আমাকে পাবে।'
 
আবুল হোসেন বলেন, কয়েক বছর আগে এক শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানের সামনের রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়। ওই ঘটনায় শিক্ষার্থীর মা-ও আহত হয়েছিল। স্কুলে তার নামে একটি লাইব্রেরি করা হয়।
 
তিনি বলেন, 'রিশা ছুরিকাঘাতের পর আমাদের শিক্ষার্থীরাই প্রথমে তাকে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ঢামেকের অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে রিশার ক্ষতস্থান দেখে আমি মাথা ঠিক রাখতে পারছিলাম না। তার পেটের ডান পাশে মারাত্মক ক্ষত হয়েছিল।'
 
তিনি আরও বলেন, রিশাকে বাঁচিয়ে রাখতে সব ধরণের চেষ্টা করা হয়েছিল। তার উন্নত চিকিৎসার জন্যে স্কুল থেকে ৭০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছিল। স্কুলের সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা হচ্ছিল। অনেকে তাকে রক্ত দিয়েছে। কিন্তু সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে চলে গেল রিশা।
 
স্কুলের শিক্ষক ফকর উদ্দীন জানান, অভিভাবকসহ নানা পরিচয়ে অনেকে স্কুলের সামনে ও ওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের সামলাতে পুলিশকেও বেগ পেতে হয়। অনেক সময় পুলিশ অসহায়ত্ব প্রকাশ করে।
 
তিনি জানান, রিশার মৃতু্র খবর শুনে শিক্ষার্থীরা রোববার প্রতিষ্ঠানের সামনে মানবন্ধন কর্মসূচী পালন করে। এ কারণে গোটা এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়ে যায়। এক পর্যায়ে পুলিশ এ বিষয়ে স্কুল কর্তপক্ষের সহায়তা চায়। পরে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভেতর নিয়ে আসেন।
 
নিহত রিশা উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়তো। তার বাবার নাম মো. রমজান আলী। তিনি একজন ক্যাবল ব্যবসায়ী। রাজধানীর বংশালে তাদের বসবাস।
 
গত ২৪ আগস্ট দুপুর পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর কাকরাইল ফুটওভার ব্রিজে রিশাকে ছুরিকাঘাত করে এক যুবক। ওইদিন রমনা থানায় রিশার মা তানিয়া হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।
 
মামলায় ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং কমপ্লেক্সের বৈশাখী টেইলার্সের কাটিং মাস্টার ওবায়দুল খানকে (২৯) আসামি করা হয়। পুলিশ এখনও তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত