প্রেমের টানে বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন এক থাই-কন্যা। বিয়ে করেছেন ভালোবাসার মানুষটিকে। বুধবার (১৭ মে) নাটোরের আদালতে বিয়ের কাজটি সম্পন্ন করেন তাঁরা।

এই দম্পতি হলেন থাইল্যান্ডের সুপুত্তো ওরফে ওম ওরফে সুফিয়া খাতুন (৩৬) এবং বাংলাদেশের অনিক খান (২২)।

বিয়ের পর আদালত চত্বরে সুপুত্তো জানান, থাইল্যান্ডের সমাজে বহু বিবাহ একটা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি এটা পছন্দ করি না। তাই বিয়ে করছিলাম না। হঠাৎ করে ফেসবুকে বাংলাদেশের অনিকের সঙ্গে পরিচয় হয়। ওর সরলতা আমাকে মুগ্ধ করে। ধীরে ধীরে ওর প্রতি আমার আস্থা জন্মেছে। আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। ওকে আপন করে নেওয়ার জন্য বারবার এ দেশে ছুটে এসেছি। এবার সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। বিয়ে করে আমি এখন দারুণ সুখী।

সুপুত্তো বলেন, পড়াশোনা শেষ করে তিনি প্রথমে ব্যাংকে চাকরি করতেন। সেটা ছেড়ে দিয়ে এখন ফাস্ট ফুডের ব্যবসা করেন। দোকানে বসে ফেসবুক ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে বাংলাদেশের তরুণ অনিক খানকে বন্ধুত্বের প্রস্তাব (ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট) পাঠান। প্রথমে দুজনের মধ্যে ফেসবুকে কথা হতো। পরে ফোনেও কথাবার্তা হয়। এভাবেই পরস্পরের প্রেমে পড়ে যান তাঁরা। গত ফেব্রুয়ারিতে বাবা-মায়ের অনুমতি নিয়ে তিনি প্রেমের টানে বাংলাদেশে ছুটে আসেন। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান অনিক। এত দিন যাঁর সঙ্গে পরিচয় ছিল ভার্চ্যুয়াল জগতে, বাস্তবে তাঁকে দেখে আরও ভালো লেগে যায়।

অনিকের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে নিজেই বিয়ের প্রস্তাব দেন জানিয়ে সুপুত্তো বলেন, তখন অনিকের পরিবারের লোকজন বিয়ের প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। মাত্র পাঁচ দিনের ভিসা নিয়ে আসায় ‘না’ সূচক উত্তর নিয়েই বাড়ি ফিরে যাই।

এ মাসের প্রথম দিকে আবার তিনি বাংলাদেশে ছুটে আসেন। এবার সম্মতি দেয় অনিকের পরিবার। তবে বিষয়টা খুব সহজ ছিল না। তিনি জানান, অনিকের পরিবারের সদস্যদের হাতে-পায়ে ধরেছি। দিনের পর দিন কান্নাকাটি করেছি। না খেয়ে অনশন করেছি। ১৮ মে পর্যন্ত ভিসার মেয়াদ। এর এক দিন আগে ধর্মীয় ও আইনিভাবে বিয়েটা সম্পন্ন করলাম। নাম নিয়েছি সুফিয়া খাতুন।

সুপুত্তোর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে অনিক খান বলেন, তাঁর বাড়ি নওগাঁ আত্রাই উপজেলার শাহগোলা গ্রামে। পড়ালেখা তেমন একটা করেননি। তবে ভাঙা ভাঙা ইংরেজি বলতে ও লিখতে পারেন। সেখানে তাঁর একটা মুঠোফোন মেরামতের দোকান আছে। দোকানে বসে অলস সময় কাটাতে গিয়ে ফেসবুকে থাই-কন্যার সঙ্গে পরিচয়। তাঁরা এক অপরের সঙ্গে যোগাযোগ না রেখে থাকতে পারেন না।

তিনি বলেন, ওম আমাকে একটা ভালো মোবাইল ফোন সেট উপহার দিয়েছে। দুজনের ফোনেই সব সময় ইন্টারনেট সংযোগ থাকে। আমরা ভিডিও কল করে দীর্ঘ সময় কথা বলি। এভাবেই পরস্পরকে ভালোবেসে ফেলেছি।

অনিকের বাবা আজাদ হোসেন বলেন, মেয়েটি খুব ভালো। আমাদের আপন করে নিয়েছে। আমরা গরিব, শিক্ষিতও না। কিন্তু এ নিয়ে ওর কোনো কষ্ট নেই। পুত্রবধূ তাদের ছেড়ে যাচ্ছে, এ জন্য তাদেরও কষ্ট হচ্ছে বলে জানান তিনি।

সূত্র: প্রথম আলো