সিলেটটুডে ডেস্ক

০৩ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০২

রণেশ মৈত্র ও সাবিরুল ইসলামকে পাবনায় সংবর্ধনা

সাংবাদিকতায় একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষাসৈনিক, মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক কলামিস্ট রণেশ মৈত্র এবং সুনামগঞ্জ জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর ও লাইব্রেরি স্থাপন করে জনপ্রশাসন পদকপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব সাবিরুল ইসলাম বিপ্লবকে পাবনায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।

গত বুধবার সন্ধ্যায় পাবনার নাগরিক সমাজ ও কর্মরত সাংবাদিক পরিবারের পক্ষ থেকে পাবনা ডায়াবেটিক সমিতি মিলনায়তনে এই সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বে করেন পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পাবনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল রহিম লাল, পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ, পাবনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আতিয়ুর রহমান, পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদ, পাবনা ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি লায়ন বেবী ইসলাম, পাবনা চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহসভাপতি আলী মর্তুজা বিশ্বাস সনি, রানা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও পাবনা চেম্বারের পরিচালক রুহুল আমিন বিশ্বাস রানা, গণতন্ত্রী পার্টি পাবনা জেলা শাখার সভাপতি সুলতান আহমেদ বুড়ো, পাবনা সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি আব্দুল মতীন খান, পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সম্পাদক এবিএম ফজলুর রহমান, মাছরাঙা টেলিভিশনের উত্তরাঞ্চলীয় ব্যুরো প্রধান উৎপল মির্জা, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি আওয়াল কবির জয়, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুন্নাহার জলি, পাবনা সংবাদপত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শহীদুর রহমান শহীদ, পাবনা টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদ। পাবনা প্রেসক্লাবের সদস্য পাবনা বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) ফারুক হোসেন চৌধুরীর সঞ্চালনায় পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করে দৈনিক আমাদের অর্থনীতি প্রতিনিধি মিজান তানজিল এবং গীতা পাঠ করেন বাংলাদেশ বেতারের প্রতিনিধি শ্রী শুশিল তরফদার।

অনুষ্ঠান শেষে সংগীত পরিবেশন করেন ওয়াশিংটন থেকে আগত মধুমিতা মৈত্র, শেখ তোজা ফাহমিদা চাঁদনী এবং গজলসম্রাট আলাউদ্দিন আলো।

একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত সাংবাদিক, কলামিস্ট ও রাজনীতিক রণেশ মৈত্র মহান ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন জনস্বার্থের আন্দোলনে সব সময় সাহসী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে তিনি পাবনা জেলার অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ১৯৫১ সালে সিলেট থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক নওবেলাল পত্রিকায় সাংবাদিকতার মাধ্যমেই তার সাংবাদিকতা জীবন শুরু হয়। এরপর কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সত্যযুগে তিন বছর সাংবাদিকতার পর ১৯৫৫ সালে তিনি যোগ দেন দৈনিক সংবাদে। ১৯৬১ সালে ডেইলি মর্নিং নিউজ এবং ১৯৬৭ সাল থেকে তিনি ১৯৯২ সাল পর্যন্ত দৈনিক অবজারভারে পাবনা প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯২ সালে দি নিউ নেশনের মফস্বল সম্পাদক হিসেবে যোগ দেয়ার পর ১৯৯৩ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি দি ডেইলি স্টারের পাবনা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। পরে তিনি স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়ে একজন ফ্রি-ল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে দেশের শীর্ষ পত্র পত্রিকায় কলাম লিখে সারা দেশে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৬১ সালে পাবনায় পূর্ব পাকিস্তান মফস্বল সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত পূর্ব-পাকিস্তান সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এই সম্মেলনের মাধ্যমে মফস্বল সাংবাদিকরা তাদের পেশার স্বীকৃতি পায়। তিনি সেই বছরেই প্রতিষ্ঠিত পাবনা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ ছাড়া তিনি দীর্ঘদিন পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে জেলার সাংবাদিকদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০১৭ সালে তিনি সাংবাদিকতায় একুশে পদক লাভ করেন।

জনপ্রশাসন পদকপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব সাবিরুল ইসলাম বিপ্লবের জন্ম পাবনা শহরের কৃষ্ণপুর মহল্লায়। তার পিতা দেশখ্যাত প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ ও বীরমুক্তিযোদ্ধা, ভাষা সৈনিক আমিনুল ইসলাম বাদশা এবং মা নিলুফা ইসলাম সাজু। তার বাবা আমিনুল ইসলাম বাদশা মহান মুক্তিযুদ্ধে বাড়ি ছাড়া থাকায় জন্মের ছয় মাস পর বাবার মুখ দর্শন করেন ছেলে সাবিরুল। পাবনা জেলা স্কুলে পড়াশুনা করা অবস্থায় ঢাকায় চলে যান। ঢাকার মতিঝিল বয়েজ স্কুল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পাশ করেন। ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স করেন। পরে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ইন পাবলিক পলিসি এন্ড ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সুনামগঞ্জ জেলার ৩১টি ইউনিয়ন পরিষদে ইউনিয়ন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও লাইব্রেরি স্থাপন করার জন্য ও একজন সৎ জেলা প্রশাসক হিসেবে ২০১৮ সালে তিনি জনপ্রশাসন পদক লাভ করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত