সিলেটটুডে ডেস্ক

২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ২২:১৩

বিয়ে করতে বরের বাড়িতে কনে

ছবি: সংগৃহীত

বিয়ে করতে কনের বাড়িতে যাচ্ছেন বর- এমনটাই পরিচিত দৃশ্য, প্রথাও। বিয়ের এই পুরনো প্রথা ভেঙে দিলেন মেহেরপুরের ছেলে আর চুয়াডাঙ্গার এক তরুণীর অভিভাবক। 'কনেযাত্রী' নিয়ে গাড়ি করে বরের বাড়িতে গিয়ে বিয়ে করলেন তরুণী। বিয়ে শেষে বরকে নিয়ে গেলেন নিজের বাড়িতেও।

ঘটনাটি শনিবারের। সকাল থেকেই মেহেরপুরের গাংনী পৌরসভার চৌগাছা গ্রামে চলছিল আড়ম্বরপূর্ণ বিয়ের আয়োজন। দুপুরে ৭টি মাইক্রোবাস ও ৩০টি মোটরসাইকেল বহর নিয়ে কনে এসে নামলেন বরের বাড়ির গেটের সামনে। এ সময় কনেকে ফুল ও মিষ্টি মুখ করিয়ে বরণ করে নেয় বর পক্ষ।

এরপর শুরু হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী একজন মাওলানা তাদের দু’জনকে কবুল পড়ান। প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিয়ের রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করান স্থানীয় কাজি। এরপরে বর পক্ষের দাওয়াতি আত্মীয় স্বজন ও কনে যাত্রীদের ভুড়িভোজ করানো হয়।

পাত্রী চুয়াডাঙ্গার কামারুজ্জামানের মেয়ে খাদিজা আক্তার খুশি; খুশি কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজে স্নাতকের শিক্ষার্থী। বাড়ির ছোট মেয়ে, তাই তার বিয়েতে বিশেষ কিছু ব্যবস্থা করতেই প্রথা ভেঙে অভিভাবকদের সম্মতিতে বরের বাড়িতে আসেন কনে। ফুল দিয়ে সজ্জিত একটি জিপ। সেই জিপের পেছনে বসে আছেন কনের বান্ধবী ও বোনেরা। আর কনে বসে আছেন জিপের সামনে। জিপে ফুল ভলিউমে বাজছে বিয়ের গান। বর গাংনী উপজেলার চৌগাছার কমরেড আব্দুল মাবুদের ছেলে তরিকুল ইসলাম জয় একজন ব্যবসায়ী।

বিয়ে প্রসঙ্গে কনের বাবা কামরুজ্জামান বলেন, ছেলে-মেয়েদের সমঅধিকার বাস্তবায়নেই আমরা অভিভাবকরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে মেয়েকে ছেলের বাড়িতে এনে বিয়ের আয়োজন করি।

পাত্রের বাবা আবদুল মাবুদ জানান, ব্যতিক্রম সব সময়ই চমকের। প্রথা ভাঙ্গতেই এমন আয়োজন। আগামীতে যাতে মেয়েরাও ছেলেদের বাড়ি এসে বিয়ে করতে উৎসাহী হয় এ জন্য এমন বিয়ের একটি ইতিহাস গড়তে চেয়েছিলাম। সফল হতে পেরে ভালো লাগছে।

বর তরিকুল ইসলাম বলেন, এটা একটা আনন্দের খবর যে, বরের বাড়িতে কনেযাত্রী এসে বরকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে যাবে। সেখানে আবার বউভাত না হয়ে বরভাত অনুষ্ঠান হবে। বিষয়টি বেশ আনন্দের এবং তিনি মনে করেন, পুরনো রীতি ভেঙ্গে এ নতুন নিয়মে বিয়ে হওয়া উচিত। আগে বিয়ের পর মেয়েপক্ষ মেয়ে জামাতা আনতে যেত। এখন বিয়ের পর ছেলে কনে আনতে যাবে।

বিকেলে বর তরিকুল ইসলাম জয়কে নিয়ে কনে খাদিজা আক্তার খুশি চলে গেছেন তার বাবার বাড়িতে। সেখানে কয়েকদিন কাটানোর পর কনেকে সাথে নিয়ে বর ফিরে আসবেন নিজের বাড়িতে।

কনে খাদিজা আক্তার খুশি বলেন, নারী-পুরুষের সমান অধিকার হিসেবে একজন মেয়ে একজন ছেলেকে বিয়ে করতে তার বাড়িতে যেতে পারেন, তা কখনো বাস্তবায়ন হয়নি। সেই বাধার বৃত্ত ভেঙে আমরা শুরু করেছি। আশা করছি আরও অনেকেই এখন এটি করবেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত