দোদুল খান

১৩ নভেম্বর, ২০১৮ ০১:০২

সংসদ নির্বাচন ২০০১: সিলেট বিভাগে বিএনপির আধিপত্য

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসছে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত পুণঃতফশিল অনুযায়ী, ২৩ ডিসেম্বর হবে ভোটগ্রহণ। সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ১৯৯১ সাল থেকে মোট ৫টি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেমন ছিল সেসব নির্বাচন? সিলেট বিভাগের ১৯টি সংসদীয় আসনে কোন দল কোন আসন জিতেছিলো?

সেসকল তথ্য ও উপাত্ত নিয়ে সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকম এর ধারাবাহিক আয়োজন।

ফিরে দেখা ২০০১:
আওয়ামী লীগের পাঁচ বছরের সংসদ পরিচালনার পর ২০০১ সালের অক্টোবরের ১ তারিখে অনুষ্ঠিত হয় ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর এ নির্বাচনের আগে বিএনপি গঠন করে ৪ দলীয় ঐক্যজোট যার মধ্যে ছিলো জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এবং জাতীয় পার্টি।

এ নির্বাচনে বিএনপিসহ সবকয়টি বড় রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে এবং প্রথমবারের মতো জোটবদ্ধ দলগুলোর মধ্যে আসন ভাগাভাগি হয়।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সালের নির্বাচনে মোট ৫৪টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে এবং দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মোট ১৯৩৯ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন।

এ সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ একা ৩০০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। বিএনপি ২৫২টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে বাকি আসনগুলো জোটের শরীকদের ছেড়ে দেয়। ইসলামী জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট ২৮১টি আসনে, ৪দলীয় জোটের শরীক জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ৩১টি আসনে, জোটের শরীক জাতীয় পার্টির একাংশ ১১টি আসনে, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) ১৪০টি আসনে অংশগ্রহণ করে। এ নির্বাচনে মোট ৪৮৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন।

এ নির্বাচনে সারাদেশে ৩০০ আসনের ভোটগ্রহণের জন্য মোট ২৯,৯৭৮টি টি ভোটকেন্দ্রে ১,৪৯,২৮৮ টি ভোটকক্ষ স্থাপন করা হয় এবং মোট ৭,৪৯,৪৬,৩৬৪ জন ভোটারের মধ্যে ৫,৬১,৮৫,৭০৭ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন যা মোট ভোটারের ৭৫.৫৯ শতাংশ।

এ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সংসদ গঠন করে এবং আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় অবস্থানে থেকে বিরোধী দল হিসেবে সংসদে যোগ্যতা অর্জন করে।

৩০০টি আসনের মধ্যে বিএনপি ২৫২টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে ১৯৩ টি আসনে (মোট ৪০.৯৭ শতাংশ ভোট) জয়লাভ করে। আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে ৬২ টি আসনে (মোট ৪০.১৩ শতাংশ ভোট) বিজয়ী হয়।

সিলেট বিভাগের নির্বাচনী অবস্থা
২০০১ এর নির্বাচনে সিলেটের ১৯টি আসনের মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার ৫ টি আসনে ৮,৮৮,৩৪৫ জন ভোটার, সিলেট জেলার ৬টি আসনে ১০,৫৩,২১১ জন ভোটার, মৌলভীবাজার জেলার ৪টি আসনে ৭,০৯,৬৭৫ জন ভোটার এবং হবিগঞ্জ জেলার ৪টি আসনে ৭,৬৭,৫৪৩ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

এ নির্বাচনে সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের মধ্যে বিএনপি ৯টি আসন, আওয়ামী লীগ ৭টি, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ২টি এবং জামায়াতের প্রার্থী ১টি আসনে জয়লাভ করে।

সুনামগঞ্জ ১ (ধর্মপাশা, তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলা)
এ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে ১,২৮,৪৪৮ ভোটে জয়লাভ করেন নজির হোসেন। তিনি ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন এবং ১৯৯৬ সালের বিএনপির প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হন। এ নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তিনি ৯৫,৫৭৮ ভোট পান। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ১৯৯১ সালের নির্বাচনে গণতন্ত্রী পার্টির প্রার্থী হিসেবে সুনামগঞ্জ ২ আসন থেকে নির্বাচিত হন এবং ১৯৯৬ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ওই আসনে দ্বিতীয় হন।

সুনামগঞ্জ ২ (দিরাই ও শাল্লা উপজেলা)
আওয়ামী লীগের প্রার্থী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এ আসনে ৮২,৮৩৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরী ৬৬,৫৫৮ ভোট পান। নাসির উদ্দিন চৌধুরী ১৯৯৬ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন।

সুনামগঞ্জ ৩ (জগন্নাথপুর উপজেলা ও তৎকালীন সদর উপজেলার আংশিক)
সুনামগঞ্জ ৩ আসনে টানা তৃতীয়বারের মতো বিজয়ী হয়েছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সামাদ আজাদ।  ৬৯,৪২১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন তিনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী চার দলীয় জোটের শরীক ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী ৬৩,৪৭৫ ভোট পান।

সুনামগঞ্জ ৪ (বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা এবং সদর উপজেলার আংশিক)
এ আসনে বিএনপির প্রার্থী মো. ফজলুল হক আসপিয়া ৬১,৮০৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেওয়ান শামসুল আবেদীন পান ৫১,৮৬৪ ভোট।

সুনামগঞ্জ ৫ (ছাতক ও দোয়ারা উপজেলা)
এ আসনে বিএনপির প্রার্থী কলিম উদ্দিন আহমেদ ১,১৩,৬৬০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুহিবুর রহমান মানিক পান ৮৩,৫০০ ভোট।

সিলেট ১ (সদর উপজেলার আংশিক এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার আংশিক)
সিলেটের অন্যতম এ আসনে বিএনপির এম সাইফুর রহমান ১,৩৩,৮২৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আবুল মাল আবদুল মুহিত পান ৯৫,০৮৯ ভোট।

সিলেট ২ (বিশ্বনাথ ও বালাগঞ্জ উপজেলা)
এ আসনে বিএনপির এম ইলিয়াস আলী ১,০৩,৪৬০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন এবং আওয়ামী লীগের শাহ আজিজুর রহমান পান ৫৫,২৯১ ভোট।

সিলেট ৩ (ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা এবং সদর উপজেলার আংশিক)
বিএনপির শাফি উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ৫৫,৯৯৪ ভোট পেয়ে এ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী পান ৪৪,৩৪২ ভোট।

সিলেট ৪ (গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর উপজেলা এবং কোম্পানীগঞ্জের আংশিক)
এ আসনে বিএনপির প্রার্থী দিলদার হোসেন সেলিম ৬২,৩২৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং তার নিকটতম প্রার্থী আওয়ামী লীগের ইমরান আহমদ পান ৪৭,৬০৮ ভোট।

সিলেট ৫ (কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলা)
এ আসনটিতে বিএনপির জোটের শরীক জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের প্রার্থী মোহাম্মদ ফরিদউদ্দিন চৌধুরী ৭৭,৭৫০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের হাফিজ আহমদ মজুমদার পান ৫২,৮৮৫ ভোট।

সিলেট ৬ (বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা)
এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. সৈয়দ মকবুল হোসেন (লেচু মিয়া) ৭৬,৫১৩ ভোটে নির্বাচিত হন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম নাহিদ পান ৭১,৫১৭ ভোট। এ আসনে বিএনপির জোটের শরীর জাতীয় পার্টির একাংশের প্রার্থী আবদুল হাসিব পান ৬০৭ ভোট।

মৌলভীবাজার ১ (বড়লেখা উপজেলা)
মৌলভীবাজার ১ আসনে বিএনপির এবাদুর রহমান চৌধুরী ৪৭,৫৩৯ ভোটে নির্বাচিত হন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহাব উদ্দিন পান ৪২,২৮১ভোট।

মৌলভীবাজার ২ (কুলাউড়া উপজেলা)
এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এমএম শাহীন ৭৮,৬৬৭টি ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আওয়ামী লীগের সুলতান মো. মনসুর আহমদ পান ৭১,৮০৩ ভোট। এ আসনে বিএনপির শরীক জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের প্রার্থী ড. শফিকুর রহমান ১২,৪১৫ ভোট পান।

মৌলভীবাজার ৩ (রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলা)
মৌলভীবাজার ৩ আসনে টানা দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী এম সাইফুর রহমান। ১,০৮,৫১৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন তিনি এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আজিজুর রহমান পান ৯৫,৩১৯ ভোট।

মৌলভীবাজার ৪ (কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা)
এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আব্দুশ শহীদ ৯৬,৩২৯ ভোট পেয়ে পুণরায় নির্বাচিত হন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমান চৌধুরী ৭০,৩৬৪ ভোট পান। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী মহসিন মিয়া মধু পান ৩৪,৭২৬ ভোট।

হবিগঞ্জ ১ (নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলা)
এ আসনে আওয়ামী লীগের দেওয়ান ফরিদ গাজী ৭৪,৬৯৩ ভোট পেয়ে পুণরায় নির্বাচিত হন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শেখ সুজাত মিয়া পান ৬৬,১৩৭ ভোট।

হবিগঞ্জ ২ (আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলা)
এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নজমুল হাসান জাহেদ ৫০,৩৬১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রার্থী বিএনপির নুরুল আলম চৌধুরী পান ৫০,০১৪ ভোট।

হবিগঞ্জ ৩ (সদর ও লাখাই উপজেলা)
এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহ এএমএস কিবরিয়া ৮৩,১১০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী আবু লেইছ মো. মুবিন চৌধুরী ৬৯,৩০৬ ভোট পান।

হবিগঞ্জ ৪ (চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলা)
এ আসনেও পূর্বের দুই নির্বাচনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুল হক ১,০৭,৩৭৬ ভোট পেয়ে পুণরায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রার্থী বিএনপির সৈয়দ মো. ফয়সল পেয়েছিলেন ৯৩,০৩১ ভোট।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত