দোদুল খান

১৫ নভেম্বর, ২০১৮ ০১:১৩

সংসদ নির্বাচন ২০১৪: সিলেটে ১৯ আসনের ৯টিতেই ভোট হয়নি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসছে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত পুনতফশিল অনুযায়ী, ৩০ ডিসেম্বর হবে ভোটগ্রহণ। সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ১৯৯১ সাল থেকে মোট ৫টি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেমন ছিল সেসব নির্বাচন? সিলেট বিভাগের ১৯টি সংসদীয় আসনে কোন দল কোন আসন জিতেছিলো?

সেসকল তথ্য ও উপাত্ত নিয়ে সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকম এর ধারাবাহিক আয়োজন।

ফিরে দেখা: সংসদ নির্বাচন ২০১৪
২০০৮ সালের নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ৯ম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষে ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারি শেষে এ সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হয় এবং সে অনুযায়ী তার আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৫ জানুয়ারি দিন নির্ধারণ করে নির্বাচন কমিশন।

১৯৯৬ সালের ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আন্দোলনের মধ্যে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিলো, আওয়ামী লীগের এ ক্ষমতাকালীন এ সময়ে সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সে প্রথা বাতিল করা হয়, ফলে ১০ম এ সংসদ নির্বাচনের আগে কোন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়নি।

৯ম সংসদের বিরোধী দল বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ২০১৩ সালে সারাদেশে আন্দোলন শুরু করে এবং এ সময় সারাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে উঠে। তবুও এর মধ্যেই নির্বাচনের দিন ঠিক করা হয় এবং বিএনপি ও তার শরীক দলগুলো নির্বাচন বর্জন করে।

উত্তপ্ত ও সহিংস পরিস্থিতির মধ্যেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং সারাদেশের ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৪৭টি আসনে ভোটগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং বাকি আসনগুলোতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নির্বাচিত হন।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের নির্বাচনে মোট ১২টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে এবং ১৪৭টি আসনে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মোট ৩৯০ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন।

এ নির্বাচনে সারাদেশের ৩০০ আসনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া ১৪৭টি আসনে ভোটগ্রহণের জন্য মোট ১২,২০৮টি ভোটকেন্দ্রে ৯১,২১৩ টি ভোটকক্ষ স্থাপন করা হয়।

সেসময় সারাদেশে মোট ৯,১৯,৬৫,১৬৭ জন ভোটার ছিলেন। নির্বাচন হওয়া ১৪৭টি আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৪,৩৯,৪৩,১৮৪জন যার মধ্যে ১,৭৩,৯২,৮৮৭ ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন যা এ সকল আসনের মোট ভোটারের ৪০.০৪ শতাংশ।
এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সংসদ গঠন করে এবং কোন আনুষ্ঠানিক বিরোধী দল না থাকায় জোটের শরীক জাতীয় পার্টিই সংসদে বিরোধী দল হিসেবে অংশগ্রহণ করে।

৩০০টি আসনের মধ্যে মোট ১৬৩ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মোট ২৩৪টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী, ৩৪টি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী, ৬টি আসনে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, ৫টি আসনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ২টি আসনে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, ২টি আসনে জাতীয় পার্টি-জেপি এবং ১টি আসনে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট জয়লাভ করে।

সিলেট বিভাগের নির্বাচনী অবস্থা
২০১৪ এর নির্বাচনে সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৪টি আসনে, জাতীয় পার্টি ৪টি আসনে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ১টি আসনে জয়লাভ করে। এর মধ্যে সিলেটের ৯টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৬জন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং ৩জন জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্বাচিত হন।

সুনামগঞ্জ ১ (ধর্মপাশা, তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলা)
এ আসনে আওয়ামী লীগের মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ৮৮,৯৮১ ভোটে জয়লাভ করেন এবং তার নিকটতম স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সৈয়দ রফিকুল হক ৩২,৫৮১ ভোট পান।

সুনামগঞ্জ ২ (দিরাই ও শাল্লা উপজেলা)
সুনামগঞ্জ ২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ও বিনা ভোটে আবারো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

সুনামগঞ্জ ৩ (জগন্নাথপুর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা)
সুনামগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এমএ মান্নান ৫০,৪৩৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুস সামাদ আজাদ পান ৪১০০৩ ভোট। আজিজুস সামাদ এ আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ আবদুস সামাদ আজাদ এর ছেলে।

সুনামগঞ্জ-৪ (সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা)
এ আসনে আওয়ামী লীগের সাথে থাকা জোটের শরীক জাতীয় পার্টির প্রার্থী পীর ফজলুর রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন।

সুনামগঞ্জ ৫ (ছাতক ও দোয়ারা উপজেলা)
এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুহিবুর রহমান মানিক ১,৬৪,৪৯৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট এর প্রার্থী মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন ৩২৬৪ ভোট পান।

সিলেট ১ (সিলেট সিটি কর্পোরেশন এবং সদর উপজেলা)
এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ও বিনা ভোটে আবারো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

সিলেট ২ (বিশ্বনাথ ও বালাগঞ্জ উপজেলা)
এ আসনে আওয়ামী লীগের শরীক জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. ইয়াহইয়া চৌধুরী ৪৮,১৫৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান ১৭,৩৮৯ ভোট পান।

সিলেট ৩ (ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা এবং দক্ষিণ সুরমা উপজেলা)
সিলেট ৩ আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং বিনা নির্বাচনে আবারো সাংসদ নির্বাচিত হন।

সিলেট ৪ (গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ এবং জৈন্তাপুর উপজেলা)
এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইমরান আহমদ ৬৩,৩২৩ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ২৪,২৭৮ ভোট পান।

সিলেট ৫ (কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলা)
সিলেট ৫ আসনে আওয়ামী লীগের জোটের শরীক জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম উদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ও বিনা ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

সিলেট ৬ (বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা)
এ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম নাহিদ বিনা ভোটে আবারো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

মৌলভীবাজার ১ (বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলা)
মৌলভীবাজার ১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহাব উদ্দিন ১,০৪,০২০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী আহমেদ রিয়াজ উদ্দিন ৯৬৪৯ ভোট পান।

মৌলভীবাজার ২ (কুলাউড়া উপজেলা)
মৌলভীবাজার ২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আব্দুল মতিন ৩০,৮৭১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির মহিবুল কাদির চৌধুরী পান ২৫,২৪১ ভোট।

মৌলভীবাজার ৩ (রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলা)
মৌলভীবাজার ৩ আসনে আওয়ামী লীগের সৈয়দ মহসিন আলী বিনা ভোটে ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবারো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

মৌলভীবাজার ৪ (কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা)
মৌলভীবাজার ৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আব্দুস শহীদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবারো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

হবিগঞ্জ ১ (নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলা)
এ আসনে আওয়ামী লীগের শরীক জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুর মুনিম চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

হবিগঞ্জ ২ (আজমিরিগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলা)
এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আব্দুল মজিদ খান ৬৫,৩৬২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন এবং তার নিকটতম প্রার্থী জাতীয় পার্টির শংকর পাল ২১,৫৫৯ ভোট পান।



হবিগঞ্জ ৩ (সদর ও লাখাই উপজেলা)
হবিগঞ্জ ৩ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. আবু জাহির ৯৮,১৫৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী ২০৮৩৭ ভোট পান।

হবিগঞ্জ ৪ (চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলা)
এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মাহবুব আলী ১,২২,৪৩৩ ভোট পেয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন এবং তার নিকটতম স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ তানভীর আহমেদ ১৪,৭৬০ ভোট পান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত