নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ নভেম্বর, ২০১৮ ০১:৫৪

কোন মুখে আওয়ামী লীগাররা আমার সমালোচনা করে?

সাক্ষাতকারে ড. রেজা কিবরিয়া

নির্বাচনের আগে দল পাল্টে আলোচনায় এসেছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া, যিনি নিজেও একজন অর্থনীতিবিদ। এবার ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে গণফোরাম থেকে মনোনয়ন কিনেছেন তিনি।

নির্বাচন, দল পরিবর্তন আর দেশের অর্থনীতি নিয়ে সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকম'র সঙ্গে কথা বলেছেন রেজা কিবরিয়া।

  • জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে হবিগঞ্জ-১ আসন থেকে প্রার্থী হতে আপনি গণফোরামের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। হঠাৎ করে ঐক্যফ্রন্টে যুক্ত হলেন কি করে?

ড. রেজা কিবরিয়া: ড. কামাল হোসেনের সাথে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। তাঁর অনুরোধেই আমি গণফোরাম থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছি।

তাছাড়া দেশের যে পরিস্থিতি, গত ১০ বছরে দেশ যেভাবে চালানো হয়েছে, আমি মনে করি তাতে অনেক ভুলত্রুটি রয়েছে। দেশটা ভুলপথে চলে যাচ্ছে। খারাপ পথে যাচ্ছে।

আমাকে এই দেশে থাকতে হবে। আমার আর কোনো দেশের নাগরিকত্ব নাই। আর কোনো দেশের পাসপোর্ট নাই। ফলে দেশকে ঠিকভাবে পরিচালনায় সহযোগিতা করা আমারও দায়িত্ব। আমি মনে করি, এখন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বেই এটা সম্ভব।

  • আপনার বাবা আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ছিলেন। এখন আপনি ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী হতে যাচ্ছেন। এলাকার জনগণ বিষয়টি কিভাবে নেবে?

ড. রেজা কিবরিয়া: আমি আমার এলাকার মানুষকে বলেছি, আমার কাছে দল মুখ্য নয়। আপনারা দলটল ভুলে যান। আমাদের কাছে মুখ্য হলো এলাকার উন্নয়ন। নবীগঞ্জ-বাহুবলের সকল মানুষ আমার দলের। এরবাইরে আমার কোনো দল নেই। উন্নয়নের স্বার্থেই তারা আমার সঙ্গে আছেন। এখানে দলীয় পরিচয় কোনো ফ্যাক্টর হবে না। আওয়ামী লীগ বিএনপিসহ সব দলের নেতাদের সাথে আমার কথা হচ্ছে। তারা আমাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছেন।

  • বলা হচ্ছে মনোনয়ন না পেয়েই আপনি আওয়ামী লীগ ছেড়ে ঐক্যফ্রন্টে গিয়েছেন?

ড. রেজা কিবরিয়া: এমন কথা সত্য নয়। আমার বাবা আওয়ামী লীগ করতেন। আমি কখনো আওয়ামী লীগ করিনি। ফলে আওয়ামী লীগ ছেড়ে যাওয়ার কথা সত্য নয়। তাছাড়া এতোবছরেও আমার বাবা হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়নি। বিএনপি করেনি, ১/১১-এর মেরুদণ্ডহীন সরকার করেনি। যে আওয়ামী লীগের জন্য বাবা জীবন দিয়েছেন সেই আওয়ামী লীগও দশ বছরে এই হত্যার বিচারে কিছুই করেনি, তারপরও তাদের উপর আমি সন্তুষ্ট থাকবো- এটি তারা ভাবে কি করে? ফলে আমার ক্ষোভ থাকতেই পারে। যারা ১০ বছরে একটি হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ করতে পারে না, তাদের তো সরকারে থাকাই উচিত না। তারা কি করে আমার সমালোচনা করে? কোন মুখে আওয়ামী লীগাররা আমার সমালোচনা করে? যারা আমার সমালোচনা করছে আমি তাদের সাথেও সরাসরি কথা বলতে আগ্রহী।

  • আপনার বাবা হত্যা মামলায় সর্বশেষ যে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে তাতে বিএনপির একাধিক নেতাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আপনি যে জোটের প্রার্থী হতে যাচ্ছেন তার প্রধান শরীক দল বিএনপি। এই বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?

ড. রেজা কিবরিয়া: আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি, এই অভিযোগপত্রটি অসম্পূর্ণ। অসমাপ্ত তদন্তের ভিত্তিতে অভিযোগপত্র তৈরি হয়েছে। আমার বাবা হত্যায় কারা গ্রেনেড দিয়েছে, কারা অর্থের যোগান দিয়েছে- তা এই চার্জশীটে উঠে আসেনি। ফলে আমি সবসময় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ অভিযোগপত্র প্রদানের দাবি জানিয়ে আসছি। হত্যাকারী কোন দলের তা আমার জানার দরকার নাই। আমি আমার বাবার খুনিদের শাস্তি চাই। আমার মাও এ দাবিতে আন্দোলন করে গেছেন।

অভিযোগপত্রে বিএনপির যেসব নেতাদের নাম উঠে এসেছে, তারা যদি সত্যিই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থেকে থাকেন, বিচারে যদি তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই তাদের বিচার হবে। এতে বিএনপিও নিশ্চয়ই আপত্তি করবে না। বাবার হত্যার ব্যাপারে আমি কোনো আপোষ করতে পারবো না। কোনো ছেলেই এটা করতে পারবে না।

  • আপনার বাবা অর্থমন্ত্রী ছিলেন। আপনি নিজেও অর্থনীতিবিদ। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?

রেজা কিবরিয়া: বলা হয়ে থাকে গত ১০ বছরে দেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। যদি বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়ে থাকে, তবে তা হয়েছে একটি গোষ্ঠীর, একটি দলের, ব্যবসায়ীদের ছোট একটা গ্রুপের। দেশের গরীব মানুষের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। এটা উন্নয়ন নয়। আমার কাছে এটা গ্রহণযোগ্য না। আমার বাবা থাকলেও এটা মেনে নিতেন না।

আমরা চাই যদি উন্নয়ন হয় তার ফসল যেন সবার কাছে যায়। যেন হতদরিদ্রদেরও অবস্থার পরিবর্তন হয়। কিন্তু এখন এটা হচ্ছে না। এটাতে আমার ঘোর আপত্তি আছে। এজন্য আমি মনে করি, একটা পরিবর্তন দরকার। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন দরকার। যাতে ব্যবসায়ীদেরও ভালো হবে, ইকোনোমিক এফিসিয়েন্সি বাড়বে। আর মাইক্রো ইকোনোমিক ম্যানেজমেন্টের কোয়ালিটি বাড়াতে হবে।

ব্যাংকিংখাত অর্থনীতির কয়েকটি সেক্টরের অবস্থা এখন খুবই খারাপ। এর প্রকৃত অবস্থা যদি মানুষের চোখের সামনে তুলে ধরা যায় তাহলে মানুষ রেগে যাবে। এতো খারাপ অবস্থা। এটা ঠিক করতে সময় লাগবে। তবে ঠিক করা সম্ভব। আমি অনেক দেশে কাজ করেছি। ৩৫ বছর ধরে এই সেক্টরে আছি। ৪০ দেশে কাজ করেছি। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করেছি। ফলে আমি আশাবাদী। এই অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব।

  • নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আপনি কতোটুকু আশাবাদী

ড. রেজা কিবরিয়া: আমি কেবল প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রার্থী হতে এখানে আসিনি। হারার জন্য আসিনি। জয়ের জন্যই মাঠে নেমেছি। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের বৈদ্যেরবাজারে এক জনসভায় গ্রেনেড হামলায় নিহত হন। এরপর ২০০৬ সালে রেজা কিবরিয়া আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান। পরে সংস্কারপন্থী আখ্যা দিয়ে ২০০৮ সালে তাকে মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। তাঁর পরিবর্তে এ আসনে মনোনয়ন পান সাবেক প্রতিমন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজী। রেজা কিবরিয়া বর্তমানে জাতিসংঘ ও কম্বোডিয়া সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত আছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত