এস আলম সুমন, কুলাউড়া

১৮ নভেম্বর, ২০১৮ ২৩:৫০

ভিন্ন সমীকরণে মৌলভীবাজার-২ আসনের নির্বাচনী হাওয়া

একাদশ নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীদের নিয়ে কুলাউড়ার শহর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষের মুখে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। এ আসনে কে হচ্ছেন আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী আর কে হচ্ছেন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী? ব্যক্তি ইমেজ নিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন কী কেউ? এমন নানা প্রশ্ন ঘোরপাক খাচ্ছে ভোটারদের মনে।

আওয়ামী লীগ ঘরানার রাজনীতির সাথে জড়িত ও বিএনপি রাজনীতির সাথে জড়িত দুই প্রার্থী এবার ঠিক উল্টো ধারার রাজনৈতিক প্রার্থী হওয়ার খবরে ভিন্ন সমীকরণে মৌলভীবাজার-২ আসনের নির্বাচনী হাওয়া।  

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা, সাবেক এমপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ ঐক্যফ্রন্টের একক প্রার্থী হিসেবে এলাকায় চাউর হলেও এম এম শাহীন না নবাব আলী আব্বাস খান মহাজোটের প্রার্থী হবেন তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। নাকি আওয়ামীলীগের কোন প্রার্থী নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবেন তাও বলা যাচ্ছে না। এদিকে প্রতিপক্ষ জোটের নেতারা হঠাৎ মহাজোটে এসে যদিও প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান সেক্ষেত্রে আওয়ামীলীগের দলীয় নেতারা কি সিদ্ধান্ত নিবেন সেটাও দেখার বিষয়। শেষ পর্যন্ত আওয়ামীলীগের নেতাদের মধ্যে যে কেউ বিদ্রোহী হিসেবেও স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে পারেন।

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় থাকলেও দীর্ঘদিন দলীয় (আওয়ামী লীগের) রাজনৈতিক কর্মকান্ড থেকে নির্বাসিত থেকেও হঠাৎ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ও বিএনপি মিলে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে আসেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। বিএনপিকে সাথে নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের কারনেই সুলতান মনসুরকে মৌলভীবাজার-২ আসনের প্রার্থী হিসেবে ছাড় দিতে হচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীতা ঘোষণায় স্থানীয় রাজনীতিতে পট পরিবর্তন হয়েছে। মনোনয়ন পাবেন না এমনটি নিশ্চিত হয়ে বিএনপি থেকে মহাজোটের মনোনয়নের আশায় বিকল্পধারায় পাড়ি দিলেন এমএম শাহীন। কিন্তু সেখানেও বাধ সেধেছেন (জাতীয় পার্টির) ও ২০০৮ সালের মহাজোট থেকে নির্বাচিত সাবেক এমপি নওয়াব আলী আব্বাস খান। মহাজোটরে প্রার্থীতা পেতে তিনিও আবার জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সাথে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন।

ইতোমধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা, ডাকসু সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ ঐক্যফ্রন্টের একক প্রার্থী হিসেবে অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। যদিও বিএনপি থেকে এড. আবেদ রাজা, শওকতুল ইসলাম শকু, কামরুজ্জামান জুবেদ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তবে গুঞ্জন আছে, শেষ পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্তকে মেনে ঐক্যবদ্ধভাবে সুলতান মনসুরের পক্ষে কাজ করবে বিএনপি। বেশীরভাগ বিএনপির তৃণমূল নেতৃবৃন্দ সুলতানকে সাদরে গ্রহণ করছেন বলে জানিয়েছে দলের একাধিক সূত্র।

এদিকে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ১১ জন প্রার্থী। তারা হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেনু, উপজেলা চেয়ারম্যান আসম কামরুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ বজলুল করিম, সিলেট বিএমএ সভাপতি ও স্বাচিপের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. রুকন উদ্দিন আহমদ, আওয়ামীলীগ নেতা আতাউর রহমান শামীম, বিসিবি পরিচালক শফিউল আলম নাদেল, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফি আহমদ সলমান, আব্দুল মুক্তাদির তোফায়েল ও সাংবাদিক কামাল হাসান।

তবে তাদের হাড়িতে পানি ঢেলে হযবরল পরিস্থিতি তৈরী করেছেন সদ্য বিএনপি থেকে বিকল্পধারায় যোগদানকারী সাবেক এমপি এম এম শাহীন। এদিকে হঠাৎ দল পরিবর্তনের পর থেকেই তাঁর অনুসারী বিএনপি একাংশের নেতাকর্মী হতাশা ও চাপা ক্ষোভে রয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
তিনি মহাজোটের শরীক বিকল্পধারার হয়ে প্রার্থীতা দাবি করেছেন। বিকল্পধারা এই আসনটি আওয়ামীলীগ জোটের কাছে দাবী করবে। এতে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।

কেউ কেউ জনপ্রিয়তার কথা চিন্তা করে শাহীনকে মানতে চাইলেও দীর্ঘদিন আওয়ামীলীগের নেতারা এই আসনে উপেক্ষিত, ফলে তারা এম এম শাহীনকে এখনো প্রকাশ্যে মানতে রাজি হচ্ছেন না। তবে শেষ পর্যন্ত দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে যা সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তাই বাস্তবায়নের জন্য অঙ্গিকারবদ্ধ কুলাউড়ার আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ।

অন্যদিকে সাবেক এমপি নবাব আলী আব্বাস খান এখনো নিজের অবস্থান গণমাধ্যকে খোলাসা করেননি। তিনি অনেকটা কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী নীতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন বলে স্থানীয় ভোটারদের ধারনা। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক জাতীয় পার্টির কাজী জাফর গ্রুপ থেকে সদ্য আবার জাতীয় পার্টি (এরশাদ)-এ যোগ দিয়েছেন এমন খবর এলাকায় চাউর হয়েছে। তবে তিনি এখনো বিষয়টি স্থানীয় কোন গণমাধ্যমে প্রকাশ করেননি। তবে গুঞ্জন আছে তিনি জাতীয় পার্টি (এরশাদ)-এর লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন।

দুই একদিনের মধ্যে এই প্রার্থী সম্ভাব্য অবস্থা কাটিয়ে একটি নির্দিষ্ট গন্তব্যে এগোবে কুলাউড়ার নির্বাচনী হাওয়া এমনটি বিশ্বাস করেন স্থানীয় ভোটাররা। ভোটাররা জানান, এই আসনে একটি প্রতিযোগীতামূলক নির্বাচনী হাওয়া বইছে সর্বত্র।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত