সিলেটটুডে ডেস্ক

২০ নভেম্বর, ২০১৮ ১৮:০৩

বাংলাদেশের ইতিহাসে আমার চেয়ে দুঃখী আর কেউ নাই: এরশাদ

‘বাংলাদেশের ইতিহাসে আমার চেয়ে দুঃখী আর কেউ নাই। তাই আমি যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি তা তোমরা গ্রহণ করবে তো?’, দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশে এমনই মন্তব্য করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে ইমানুয়েল কনভেনশন সেন্টারে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশে এরশাদ বলেন, ‘তোমরা আমার ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দাও। আমি যা করব পার্টির স্বার্থেই করব, তোমাদের স্বার্থেই করব। সময়মত আমি আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব।’

এরশাদ আরও বলেন, ‘আল্লাহ সুযোগ দিয়েছেন আমাদের। আমাদের তো বিলীন হয়ে যাওয়ার কথা। দেশে এখন দুটি দল মাত্র- আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি। আর কোনো দল নেই। আমার দুঃখ-কষ্টের কথা স্মরণ করে আমি যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব তা তোমরা গ্রহণ করবে বলে আশা করি।’

তিনি বলেন, ‘এই পার্টির জন্য আমার চেয়ে কেউ এত দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে নাই। একটা দিনের জন্যও মুক্ত ছিলাম না আমি। এখনও নই। একটা দিনের জন্যও শান্তিতে ছিলাম না। এখনও মামলা চলছে আমার। মামলার নিষ্পত্তি হয় নাই। এই মামলার ভার মাথায় নিয়ে আমি তোমাদের নেতৃত্ব দিয়েছি।’

সাড়ে ৭ বছর জেলে ছিলেন জানিয়ে এরশাদ বলেন, ‘অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করেছি। তাও বেঁচে আছি। আমার অসুখ হয়েছে তারা চিকিৎসা করে নাই। খালেদা জিয়া বলেছিল, মরতে দাও এরশাদকে। এরশাদ মরে নাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি সৎপথে ছিলাম, সঠিক পথে ছিলাম। সে জন্য জাতীয় পার্টি আজ বেঁচে আছে।’ নেতাকর্মীদের দেখে নিজে উৎসাহিতবোধ করছেন বলেও জানান এরশাদ।

তিনি বলেন, ‘আল্লাহ আমাদের রহমত করেছেন। জাতীয় পার্টি আবার জেগে উঠেছে।’ বক্তৃতার শেষে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে নিজের সব কষ্ট এবং বেদনা দূর হয়ে গেল বলে জানান সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।

তিনি বলেন, ‘তোমরা ঘরে ফিরে যাও, ভালো থাক। আমার জন্য সবাই দোয়া কর।’

এরশাদ বলেন, দেশ, পার্টি এবং দলের নেতাকর্মীদের কথা বিবেচনা করেই ৩০০ আসনে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হবে। আমি ৩০০ আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত করব, এখনও আর কারো দায়িত্ব নেই। আমি দেখতে চাই ৩০০ আসনেই জাতীয় পার্টির যোগ্য প্রার্থী আছে। প্রাথমিকভাবে ৩০০ প্রার্থী ঘোষণা করব। তারপর সম্মিলিত জাতীয় জোটের সঙ্গে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হবে। রাজনৈতিক মেরুকরণে যদি অন্য কোনো জোটে যেতে হয়, আমি এককভাবে সিদ্ধান্ত নেব।

নেতাকর্মীদের বলেন, তোমরা নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যাবে, সময়মত আমি সিদ্ধান্ত জানাব। বলেন, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব, আশা করি তোমরা তা মেনে নেবে। আমাদের সুদিন এসেছে, জাতীয় পার্টি আবার জেগে উঠেছে। ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার পর এবার সর্বোচ্চ মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে। এটা আমাদের বড় অর্জন। জাতীয় পার্টি এখনো বেঁচে আছে।

তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিকে বাঁচিয়ে রেখেছি, আজকের দিনটির জন্য। আজ মাঠে আছে আওয়ামী লীগ আর জাতীয় পার্টি। আর কোনো দল নেই মাঠে।

সমাপনী বক্তব্যে পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেন, ‘আজ আমাদের আনন্দের দিন। অনেক নবীন এখানে উপস্থিত। দেখে বেশি খুশি হলাম। জাপার ক্ষমতার সময় যে উন্নয়ন হয়েছে, তা আর কেউ করতে পারেনি।’

তিনি বলেন, ‘সবাই তো আর মনোনয়ন পাবেন না, এক এলাকায় একজন প্রার্থী হবেন, বাকি সবাইকে জাপার প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে একযোগে কাজ করতে হবে।’

গত ১১ নভেম্বর থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু হয়। চলে পাঁচ দিন। এরই ধারাবাহিকতায় মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ আজ শুরু হয়েছে। জাতীয় পার্টি থেকে এবার ২৮৬৫ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। প্রাথমিকভাবে সেখান থেকে বাছাই করে ৭৮০ প্রার্থীর সাক্ষাৎকার নেয়া হবে। সেখান থেকে ৩০০ আসনের প্রার্থী নির্ধারণ হবে। তবে রাজনৈতিক কারণে দলের চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা সবাই মেনে নেবেন- মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে এমন শর্তও যুক্ত করে দেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশান ১ নম্বরে অবস্থিত ইমানুয়েলস মিলনায়তনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়। এ উপলক্ষে সকাল থেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ইমানুয়েলস মিলনায়তনের বাইরে ভিড় করতে থাকেন। তবে মিলনায়তনের ভেতরে শুধু মনোনয়ন প্রত্যাশীরাই প্রবেশ করতে পারেন।

দুপুর পৌনে ১২টার দিকে মিলনায়তনে প্রবেশ করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার।

সাক্ষাৎকার গ্রহণ কার্যক্রমের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্ধারণে যে ধরনের সিদ্ধান্ত নেবেন তা পার্টির সবাই মেনে নেবেন।

একই সঙ্গে পার্টির চেয়ারম্যানকে তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, ‘যে কোনো সিদ্ধান্তে পার্টির কেউ তাকে (এরশাদ) ছেড়ে যাবেন না। কারণ আপনাকে সবাই বিশ্বাস করেন’।

মহাসচিব আরও বলেন, ‘বৃহত্তর স্বার্থে মহাজোট কিংবা অন্য কোনো জোটে আপনি (এরশাদ) যাবেন কিনা- সেটা একান্ত আপনার সিদ্ধান্ত। আপনি নির্ভুল পথে হাঁটছেন’।

জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বন ও পরিবেশমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু এমপি, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, শেখ মুহম্মদ সিরাজুল ইসলাম, ফখরুল ইমাম এমপি, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, নুর-ই- হাসনা লিলি চৌধুরী এমপি, মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, সুনীল শুভ রায়, এসএম ফয়সল চিশতী, মীর আবদুস সবুর আসুদ, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, মো. আজম খান, এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙা, আতিকুর রহমান আতিক, নাসরিন জাহান রতনা এমপি, আবদুর রশীদ সরকার, মেজর (অব.) খালেদ আখতার প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত