নিজস্ব প্রতিবেদক

১২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:৩৩

সিলেটে দুই জোটেই জট

নানা চেষ্টা সত্ত্বেও সিলেটে একক প্রার্থী দিতে পারেনি প্রধান দুই জোট। সিলেটের ৬টি আসনের ৫টিতে মহাজোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। এই প্রার্থীজটের কারণে দুই জোটের ভোট বিভক্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন জোটভুক্ত দলগুলোর নেতাকর্মীরা।

সিলেটের ছয়টি আসনের মধ্যে ৫টিতে নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। একটি ছেড়ে দিয়েছে জাতীয় পার্টিকে। ওই আসন ছাড়াও আরও তিনটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিপরীতে প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় পার্টি। একটি আসনে আলাদা প্রার্থী দিয়েছে বিকল্পধারা।

স্বস্তি নেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টেও। একক প্রার্থী ঠিক করতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আলোচনা চালিয়েও সুফল মিলেনি। ঐক্যফ্রন্ট থেকে সিলেটে বিএনপির প্রার্থীর বিপরীতে দুটি আসনে খেলাফত মজলিস, দুটি আসনে গণফোরাম ও দুটি আসনে ইসলামী ঐক্যজোট আলাদা প্রার্থী দিয়েছে। ফলে বিএনপির প্রার্থীরাও রয়েছেন অস্বস্তিতে।

যদিও আওয়ামী লীগ বিএনপি ও জাতীয় পার্টির একাধিক প্রার্থী ও শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না।

সিলেট-১ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরকে একক প্রার্থী দেওয়া হলেও মহাজোটে রয়েছেন একাধিক প্রার্থী। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন জাতিসংঘের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আব্দুল মোমেন। এ আসনে জাতীয় পার্টির মাহমুদুর রহমান চৌধুরীও প্রার্থী হয়েছেন। এতে মর্যাদাপূর্ণ এ আসনের ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মহাজোটের কর্মী সমর্থকরা।

তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. আব্দুল মোমেন এমন শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, আলাদা প্রার্থী দিয়ে জাতীয় পার্টিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটি আমাদের বিজয়ে কোনো প্রভাব ফেলবে না। আওয়ামী লীগ গত ১০ বছর দেশে যে উন্নয়ন চালিয়েছে জনগণ তার মূল্যায়ন করবে।

সিলেট-১ আসন ছাড়াও সিলেট-৩, ৪ এবং ৫ আসনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির আলাদা প্রার্থী রয়েছেন। সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর কয়েসের সাথে প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টির উসমান আলী, সিলেট-৪ আসনে আওয়ামী লীগের ইমরান আহমদের সাথে জাতীয় পার্টির এটিইউ তাজ রহমান ও সিলেট-৫ আসনে আওয়ামী লীগের হাফিজ আহমদ মজুমদারের সাথে প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টি নেতা সেলিম উদ্দিন। সেলিম উদ্দিন এই আসনের বর্তমান সাংসদ ও সংসদের বিরোধীদলীয় হুইপ।

সিলেট-২ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ আসনে জাতীয় পার্টির বর্তমান সাংসদ ইয়াহইয়া চৌধুরীর সাথে মহাজোটের আর কেউ প্রার্থী হননি। সিলেট-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ আসনে জাতীয় পার্টির কেউ প্রার্থী না হলেও জোটসঙ্গী বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য শমসের মবিন চৌধুরী কুলা প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন।

কোনো বিভেদ নয়, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন আসনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি আলাদা প্রার্থী দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি গিয়াস উদ্দিন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সম্মতিতেই বিভিন্ন আসনে আলাদা প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। এতে জোটের মধ্যে কোনো চিড় ধরবে না। বরং একটি অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন নিশ্চিতের লক্ষ্যেই এটি করা হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি দু’দলই লাভবান হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সিলেট-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী দলটির নিখোঁজ হওয়া নেতা এম. ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসীনা রুশদীর লুনা। তার আসনে আলাদাভাবে প্রার্থী হয়েছেন ২৩ দলীয় জোটের সঙ্গী খেলাফত মজলিসের মুনতাসির আলী ও ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গী গণফোরামের মোকাব্বির খান।

এ আসনে প্রার্থী নির্ধারণে বিএনপি ও গণফোরামের মধ্যে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দরকষাকষি চলেছে বলে জানা গেছে। এতে একমত হতে না পেরে আলাদা প্রার্থী দিয়েছে ঐক্যফ্রন্টের প্রধান এই দুই দল। আর নিজস্ব ভোটব্যাংক থাকার কথা বলে অনেকদিন থেকেই সিলেট-২ আসনে নিজেদের প্রার্থী দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল খেলাফত মজলিস। এই দাবি না টেকায় আলাদা প্রার্থী দিয়েছে দলটি।

এ ব্যাপারে তাহসীনা রুশদীর লুনা বলেন, যার হাতে ধানের শীষের প্রতীক আছে তিনিই ঐক্যফ্রন্ট তথা ২৩ দলীয় জোটের প্রার্থী। অন্যদের সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে জনগণ প্রতীক দেখেই ভোট দেবে।

সিলেট-৩ আসনেও আলাদা প্রার্থী দিয়েছে খেলাফত মজলিস। এ আসনে বিএনপির শফি আহমদ চৌধুরীর সাথে খেলাফত থেকে প্রার্থী হয়েছেন দিলওয়ার হোসেইন। সিলেট-৫ আসনে ২৩ দলীয় জোটের প্রার্থী হয়েছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা উবায়দউল্লাহ আল ফারুক। তার সাথে গণফোরামের বাহার উদ্দিন আল রাজীও প্রার্থী হয়েছেন। এ আসনে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী হয়েছেন এমএ মতিন চৌধুরী।

তবে একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট-৩ আসনের প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরী। তিনি বলেন, সারাদেশ, বিশেষত সিলেটের সব আসনের মানুষজন ধানের শীষে ভোট দিতে মুখিয়ে আছে। জনগণ দশ বছরের দুঃশাসন থেকে মুক্তি চায়। ফলে কোনো প্রতিবন্ধকতাই ধানের শীষের বিজয় ঠেকাতে পারবে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত