দেবজ্যোতি দেবু

১১ মার্চ, ২০১৬ ০২:৪১

প্রসঙ্গ আইসিসি এবং আমাদের বোলাররা

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের দুই বোলার তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানি সন্দেহজনক বোলিং অ্যাকশন সহযোগে বল করছেন এ অভিযোগ ওঠার পর প্রতিবাদ, নিন্দা ও বিক্ষোভে টালমাটাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক।

সংস্কৃতি কর্মী ও অনলাইন এক্টিভিস্ট দেবজ্যোতি দেবু শুক্রবার (১১ মার্চ) ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তাসকিন ও সানির বিরুদ্ধে এ অভিযোগকে আইসিসির নতুন এক খেলা হিসেবে চিহ্নিত করে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের চুপ করে থাকায় নিজের অস্বস্তির কথা জানিয়েছেন।

দেবজ্যোতি দেবু লিখেন-

বাংলাদেশের তরুণ বোলার তাসকিন এবং সানিকে নিয়ে নতুন খেলায় মেতেছে আইসিসি। যে খেলাটা গত বিশ্বকাপের আগে খেলেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের সুনীল নারাইনকে নিয়ে। অবশ্য এর নেপথ্য নায়ক হিসেবে সন্দেহের তীর ভারতের দিকেই যায়।

বাংলাদেশের বোলিং ডিপার্টমেন্টে সবচাইতে দ্রুত গতির বোলার হচ্ছে তাসকিন। তাই তাকে কোনভাবে আটকে রাখতে পারলে বাংলাদেশের বোলিং দিকটা কিছুটা হলেও দুর্বল হবে। আর স্পিন সাইডে আছে নতুন মুখ সানি। যার বোলিং সেন্স অনেক বড় মাপের বোলারের চেয়েও ধারালো। ওকে আটকে দিতে পারলে সাকিব ছাড়া বাঁ-হাতি অফ স্পিনার বাংলাদেশের আর নাই। আর সাকিবকে তো অনেক আগেই তারা মুখস্থ করে ফেলেছে। তাই নতুন করে সাকিব নিয়ে ওদের মাথা ব্যথা নাই।

বলতে পারেন, মাত্র ৭ দিনের জন্য ওদের বাঁধা হয়েছে। তাতে করে মূল পর্বের খেলায় তো সমস্যা হচ্ছে না। তাহলে এতো ঘ্যান ঘ্যান করছি কেন?

উত্তর হচ্ছে, এই ৭ দিনে অনেক কিছুই হতে পারে। ৭ দিনে বাংলাদেশের অন্তত দুইটি ম্যাচ এই দুই বোলার মিস করবে। চাপ পড়বে বাংলাদেশের বোলিং ডিপার্টমেন্টে। চাপ সামলাতে না পারলে হয়তো কোন ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেও যেতে পারে। আর যদি হেরে যায় তাতে মূল পর্বে খেলাটাও অনেক সমস্যার হয়ে যাবে। তাই এই ৭ দিন অনেক জরুরী।

এর বাইরেও আছে বোলারদের মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ার দুশ্চিন্তা। বোলিং নিয়ে যখন আইসিসি গবেষণা শুরু করবে তখন খেলার বাইরে বোলারদের মাথায় এই বাড়তি দুশ্চিন্তাটা বোলারদের খেলার মনোযোগ নষ্ট করার জন্য অনেক বড় একটা কারণ হিসেবে কাজ করবে। যার বাজে একটা ছাপ পড়বে খেলায়।

বলতে পারেন এতো দল থাকতে বাংলাদেশকেই কেন টার্গেট করবে?

উত্তর হচ্ছে, বাংলাদেশ বর্তমান সময়ে যে দৃঢ়তার সাথে তাদের খেলা চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের মনোবল যেভাবে দিন দিন বাড়ছে, তাতে করে বিশ্বের সকল দেশের কাছে বাংলাদেশ একটি ত্রাসের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন বাংলাদেশ সম্মানজনক হারের চিন্তা নিয়ে খেলায় নামে না। এখন এরা প্রতিপক্ষকে সম্মানের সাথে হারানোর জন্য খেলে। তাই অন্য দল ছেড়ে সবার মনোযোগ এইবার বাংলাদেশের উপরেই বেশি।

বলতে পারেন, আইসিসি যে ষড়যন্ত্র করছে তার প্রমাণ কি?

উত্তর হচ্ছে, কোন প্রমাণ নাই। তবে সন্দেহের অনেক কারণ আছে। বলে দেয়া হয়েছে ৭ দিনের মধ্যেই এই দুই বোলারকে পরীক্ষা দিতে হবে। তাও ধর্মশালা থেকে চেন্নাই গিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী এরকম কোন অভিযোগ কোন বোলারের উপরে করা হলে সেটার পরীক্ষার জন্য অন্তত এক মাস সময় দেয়া হয় এবং এই এক মাসের মধ্যে তার খেলার উপরে কোন নিষেধাজ্ঞা থাকে না। কিন্তু বাংলাদেশের বেলায় এর কোন নিয়মই কাজ করছে না। সময় দেয়া হয়েছে ৭ দিন। আবার খেলার উপরে দেয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। যার পুরোটাই নিয়ম বহির্ভূত।

সব মিলিয়ে আইসিসি'র নতুন চাপাবাজি বেশ চোখে লাগছে। সেই সাথে পাপন সাহেবের চুপচাপ সব মেনে নেয়াও মনকে আরো বিষিয়ে তুলছে। এরকম ধান্দাবাজি বন্ধ হোক। সুস্থ, সুন্দর পরিবেশে বাংলাদেশকে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ করে দেয়া হোক এই প্রত্যাশাই করি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত