সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক

১২ মার্চ, ২০১৬ ১৭:৩৭

‘কবিশূন্য হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’, শোকস্তব্ধ অনলাইন

‘প্রতীক্ষা’ কবিতায় কবি রফিক আজাদ লিখেছিনে, এক শনিবার রাতে খুব ক্যাজুয়ালি/ কোনো বন্ধু ঘোরের মধ্যে গোঙানির মতো/ উচ্চারণ করেছিলো, ‘বাড়ি থেকো/ ভোরবেলা তোমাকে তুলে নেবো।’- হ্যাঁ, শনিবার এসেছে, ভোরও এসেছে। ঠিক ঠিক শনিবার ভোরের পর কবি চলে গেছেন কবিতার এক দেশ ছেড়ে অন্য এক কবিতার দেশে।

কবি, মুক্তিযোদ্ধা রফিক আজাদ ৭৪ বছর বয়সে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় এ কবিকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছে অনলাইন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কবিকে নিবেদিত স্ট্যাটাস আর কবির লেখা কবিতা কালো অক্ষরে জানিয়ে যাচ্ছে শোকের বার্তা।

কলাম লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাব্বির খান ফেসবুকে লিখেছেন,

যা শোনা যেতো, বহুদূর থেকে...
বাংলাদেশ দিন দিন কবিশুন্য হয়ে যাচ্ছে। আজাদও চলে গেলেন। যাদের রেখে গেলেন, তারা প্রায় সবাই স্বার্থপর আত্নকথিত স্বরলিপির অসম্পুর্ন 'ব্যজ্ঞনবর্ন'।
কবি রফিক আজাদ ছিলেন 'স্বর'-বর্ন, যা শোনা যেতো, বহুদূর থেকে, এখনো যায়...!

কথাসাহিত্য্যিক রেজা ঘটক লিখেছেন,

আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো এখন এমন এক জঘন্য দুরারোগে আক্রান্ত যে তার কোনো টীকা বা বটিকা নাই! সত্যিই কী নেই!!
কবি রফিক আজাদ গত জানুয়ারি মাস থেকেই অসুস্থ ছিলেন। কবি'র উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হবে, এমন নানান তালবাহানা শেষে রাষ্ট্রই কবিকে সোজা মৃত্যুর পথ দেখিয়ে দিলেন। দলীয় প্রমাণ না হলে সেই কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীদের জন্য এই রাষ্ট্র এখন বধির!
'ভাত দে হারামজাদা নইলে মানচিত্র খাবো' এমন দুঃসাহসী উচ্চারণের জন্য কবি রফিক আজাদ হাজার বছর বাঙালির হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। রেড স্যালুট কবি রফিক আজাদ। শুধু জানি রফিক ভাই'র মত আপন করে আর কেউ আমাকে 'ব্যাটা' ডাকবে না!!

সাহিত্যিক মাসকাওয়াথ আহসান লিখেছেন,

কবি রফিক আজাদ চলে গেলেন নিঃসীম শূণ্যতার জগত ভ্রমণে। এ "সীমাবদ্ধ জলে সীমিত সবুজে" বড্ড হাসফাঁস লাগতো তার। আশাভঙ্গের বেদনায় যে রফিক আজাদ চিতকার করে বলেছিলেন, ভাত দে হারামজাদা তা না হলে মানচিত্র খাবো; এ তার তীব্র আক্ষেপের আর অভিমানের কথা ছিলো।

যে সুষম সমাজের স্বপ্ন নিয়ে রফিক আজাদেরা কাটিয়েছিলেন তাদের দাপুটে তারুণ্য; তা অধরা রয়ে যায়। তার পদ্যে উল্লেখ করা "হারামজাদা"-দের চিকিতসা হয় বিদেশে মাউন্ট এলিজাবেথে; আর রফিক আজাদ তার অর্ধেক এই জীবনের শেষ দিনগুলো কাটালেন দেশেরই হাসপাতালে; কারণ মানচিত্রকে তিনি খাননি; একে খুব ভালোবেসে সেখানেই খুঁজে নিয়েছেন মায়ের আঁচল।

যে নগরে রফিক আজাদের কবিতায় উল্লেখ করা "হারামজাদারা" গলি থেকে উঠে এসে রাজপ্রাসাদ গড়েছে চেরাগে ঘষা দিয়ে; সেখানে দমবন্ধ হয়ে এলে উনি চলে যান বিরিশিরিতে; চাঁদের আলো গলে পড়া রাতে খুঁজতে থাকেন অমল পদ্যের পংক্তিমালা।

রফিক আজাদ আপাদমস্তক এক শিল্পী; কবিতার ঘোরে কেটেছে তার পার্থিব জীবন। জীবনের ওপারে বাকি অর্ধেক জীবনে আবার কোন বিরিশিরির চাঁদের আলোগলা রাতে নিঃশ্চয়ই দেখা হবে সীমিত জল-সীমাবদ্ধ সবুজ পেরিয়ে নতুন কোন পদ্য পাঠের আসরে। আপাততঃ বিদায় প্রিয় কবি রফিক আজাদ।

কবি সরদার ফারুক ফেসবুকে লিখেন,

কবি রফিক আজাদ আর নেই! প্রিয় কবির জন্য শ্রদ্ধাঞ্জলি।

সংস্কৃতিকর্মী রুবেল আহমদ কুয়াশা লিখেন,

যে কবি ভাতের অভাবে মানচিত্র চিবিয়ে খেতে চেয়েছিলেন তার প্রতীক্ষা কী ফুরালো ... নগর ধংসের আগে কবিকে খোঁজা বৃথা। যাও পত্রদূত, নত হও, কুর্নিশ করো কবিকে ... শ্রদ্ধা কবির প্রতি

কবি ও সম্পাদক চৈতী আহমেদ লিখেছেন,

কত কথা শোনা বাকী রয়ে গেলো রফিক ভাই!

আবির অনন্য ফেসবুকে লিখেন,

এখন হয়তো ভাতের অভাবে আর কেউ মানচিত্র চিবিয়ে খেতে চাইবেনা। ক্ষুধার্তরা এখন জানে দালালিতে অন্ন আছে! কবি রফিক আজাদ আমরা ক্ষুধাতুর নয় আমরা দালাল।

মিসির আলী লিখেন,

কবি রফিক আজাদ আর নেই|বাংলা কবিতার অন্যতম দিকপাল আজ মারা গেছেন প্রায় দুই মাস ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা ধীন অবস্থায় |তাকে আমরা একজন কবি হিসেবে চিনলেও তার আর একটি পরিচয় আছে, রফিক আজাদ ছিলেন একজন ফ্রন্ট লাইন মুক্তি যোদ্ধা, টাঙ্গাইলে কাদেরিয়া বাহিনীর হয়ে তিনি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন| বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি রফিক আজাদের জন্য অতল শ্রদ্ধা..

কবি মীম হুসাইন ফেসবুকে লিখেন,

রফিক আজাদকে উদ্দেশ্য করে হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন, আপনার তো কবিতা ছাড়া কিছু নেই। আর আমার কবিতাকে অস্বীকার করলেও গদ্য থেকে যায়।'

আসলেই কবিতা ছাড়া এই কবির উল্লেখ্য কিছু দেখছি না। তিনি কবিতাকে সব দিয়েছেন,কবিতা তাঁকে মরতে দেয়নি।

রফিক আজাদ আজ নেই, কবিকে শোক ও শ্রদ্ধা। শান্তিতে থাকুন কবি।

কবি মমিন মানব ফেসবুকে লিখেন,

যিনি আজ চলে গেলেন, আমার জন্যে তিনি রেখে গেছেন সোমেশ্বরী নাদির বালি চিকচিক রেখে গেছেন গারো বালকের গাঢ় স্বপ্নঘ্রাণ বিরিশিরিপর্বের কবিতাগুলো। একদিন আমি তার খুঁজে বের হয়ে ছুঁয়েছি সুসান দুর্গাপুরের সুগম্ভির পাহাড়। সেই পাহাড় বেয়ে বেয়ে আমি মুলত কবিতার কাছেই পৌঁছতে চাচ্ছি।
অনেক ভালো থাকবেন কবি।

ফেসবুকে জসিম উদ্দীন লিখেন,

'ভাত দে হারামজাদা , তা না হলে মানচিত্র খাবো ' এই একটা লাইন-ই যথেষ্ট একজন কবি , একটা মানুষকে অমর করে রাখার জন্য!
বিদায়, কবি রফিক আজাদ। ভালো থাকুন ওপারে ...

উল্লেখ্য, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় এবং একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি রফিক আজাদ শনিবার (১২ মার্চ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎধীন অবস্থায় মারা যান।

মৃত্যুকালে  কবির বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। মস্তিস্কে রক্তক্ষরণের পর রফিক আজাদ প্রায় দুই মাস ধরে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন।

গত জানুয়ারিতে রফিক আজাদের ‘ব্রেইন স্ট্রোক’ হলে তাকে প্রথমে বারডেম হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে নেওয়া হয় আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরপর তাকে আনা হয়েছিল বিএসএমএমই্‌উতে।

জনপ্রিয় কবি রফিক আজাদের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে আছে ‘অবম্ভবের পায়ে (১৯৭৩); সীমাবদ্ধ জলে, সীমিত সবুজে (১৯৭৪); নির্বাচিত কবিতা (১৯৭৫); চুনিয়া আমার আর্কেডিয়া (১৯৭৭)।

ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ সালে তাকে একুশে পদক দেওয়া হয়।

১৯৪১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল থানার গুণী গ্রামের এক অভিজাত পরিবারে জন্ম রফিক আজাদের।

তিনি ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর করে কর্মজীবন শুরু করেন শিক্ষকতায়।

বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত পত্রিকা ‘উত্তরাধিকার’র নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে ১৯৭২ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত