সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক

১৪ মার্চ, ২০১৬ ১৩:৪৭

গভর্নর আতিউর ‘ইউনুসের চেলা’, অভিযোগ আওয়ামী লীগ নেতা লেনিনের

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে রক্ষিত বাংলাদের ৮০০ কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় গভর্নর আতিউর রহমানকে অপসারণের দাবি করে তাঁকে ড. মুহম্মদ ইউনুসের চেলা হিসেবে আখ্যায়িত করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নুহ-উল-আলম লেনিন।

সোমবার (১৪ মার্চ) ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে আওয়ামী লীগের এ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানের প্রতি অভিযোগ উত্থাপন করে লিখেন, “আতিউর ব্যাংকের স্বার্থের চেয়ে নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে আতিউর দেশ বিদেশের বিভিন্ন পুরস্কার ও পদক সংগ্রহের জন্য গভর্নর পদের অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অথবা বেসরকারি ব্যাংকের অর্থ ব্যয় করেছেন।”

লেনিনের প্রশ্ন, “এত বড় কেলেঙ্কারির ঘটনা জানা সত্বেও আতিউর কীভাবে নির্লিপ্ত থেকে দিল্লি ভ্রমণ করতে পারেন? কেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করলেন না?”

লেনিন আরও লিখেন, “এত বড় একটা কেলেঙ্কারির বিষয় মাসাধিক আগে জানা সত্বেও আতিউর এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অর্থমন্ত্রী ও ব্যাংকিং বিভাগের সচিবকে জানান নি কেন? সচিব স্বয়ং গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে ইতোমধ্য দুবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সভা হলেও সেখানে বিষয়টি না বলে গোপন করা হয়েছে । কার স্বার্থ রক্ষার জন্য?”

গত ৪ ফেব্রুয়ারি সুইফট মেসেজিং সিস্টেমে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশের ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনের একটি ব্যাংকে সরিয়ে ফেলা হয়। ফিলিপাইনের ডেইলি ইনকোয়ারার ২৯ ফেব্রুয়ারি এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করলে বিষয়টি দুটি দেশেই আলোচনায় আসে।  

ব্যাংকের টাকা চুরির যেসব ঘটনা এ পর্যন্ত বিশ্বে ঘটেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ঘটনাকে ‘অন্যতম বড়’ বলা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুরুতেই অর্থ চুরির বিষয়টি টের পেলেও কর্মকর্তারা তা গোপন করে যাওয়ায় বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীকে বিষয়টি জানতে হয় প্রায় এক মাস পর, পত্রিকা পড়ে।

নুহ-উল-আলম লেনিনের ফেসবুক পোস্টের বিস্তারিত-

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির নৈতিক দায় গভর্নর আতিউর রহমান এড়াতে পারেন না।

পরম আশ্চর্যের বিষয় :

(১) এত বড় একটা কেলেঙ্কারির বিষয় মাসাধিক আগে জানা সত্বেও আতিউর এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অর্থমন্ত্রী ও ব্যাংকিং বিভাগের সচিবকে জানান নি কেন? সচিব স্বয়ং গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে ইতোমধ্য দুবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সভা হলেও সেখানে বিষয়টি না বলে গোপন করা হয়েছে । কার স্বার্থ রক্ষার জন্য?

(২) এত বড় কেলেঙ্কারীর ঘটনা জানা সত্বেও আতিউর কিভাবে নির্লিপ্ত থেকে দিল্লি ভ্রমণ করতে পারেন? কেন ব্যাংক কতৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করলেন না?

(৩) টাকা চুরি যাওয়া এবং তথ্য গোপন করে দায়িত্তহীন আচরণের জন্য অবিলম্বে আতিউরকে গভর্নরের পদ থেকে অপসারণ করা উচিত ।

পুরো ঘটনার তদন্ত সম্পন্ন করে দোষী ব্যাক্তিদের এবং সেই সঙ্গে ড. মুহম্মদ ইউনুসের চেলা আতিউরকে বিচারের সম্মুখীন করা উচিত।

আতিউর ব্যাংকের স্বার্থের চেয়ে নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে আতিউর দেশ বিদেশের বিভিন্ন পুরস্কার ও পদক সংগ্রহের জন্য গভর্নর পদের অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অথবা বেসরকারি ব্যাংকের অর্থ ব্যয় করেছেন। তদন্ত করে এর সত্যতা প্রমাণিত হলে তাকে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।

কী এমন সৃজনশীল প্রবন্ধ রচনা করে বাংলা সাহিত্্যকে আতিউর সমৃদ্ধ করলেন যার জন্য এ বছর তাকে "সামগ্রিক প্রবন্ধের জন্য" বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেওয়া হলো? এর পেছনেও নাকি অবৈধ প্রভাব কাজ করেছে?

ফলে লেখালেখি করেন এমন ক্ষমতাবান আমলারাও বাংলা একাডেমিকে তাদের একাধিক বই প্রকাশ/ অনুবাদ এবং বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রদানে বাধ্য করেন। অধস্তন কর্মকর্তাদের

উপর চাপ প্রয়োগ করে আতিউর ও বড় আমলা গংরা পুরস্কার/পদক এবং নাম কেনার যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু করেছে অবিলম্বে তা বন্ধ না করলে জাতির কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে।

কোনো দলীয় অবস্খান থেকে নয় একজন সচেতন ও দায়িত্ত্বশীল নাগরিক হিসেবে আমি আমার অভিমত প্রকাশ করলাম। সংশ্লিষ্ট কারো সাথে আমার কোনো শত্রুতা বা স্বার্থের দ্বন্ধ নেই।

সর্বোচ্চ জাতীয় স্বার্থে আমি জেনে বুঝে আমার অভিমত প্রকাশ করছি।

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২০০৯ সালে সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই বছর ১ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের দশম গভর্নর হিসাবে চার বছরের জন্য দায়িত্ব নেন উন্নয়ন গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আতিউর রহমান।

এরপর ২০১৩ সালের এপ্রিলে সরকার তাকে আরও এক মেয়াদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ দায়িত্বে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে, অবসর সীমার ৬৫ বছর বয়স পূর্ণ করে ২০১৬ সালের ২ অগাস্ট তার গভর্নর থাকার কথা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত