সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক

০৩ জুলাই, ২০১৬ ১৩:৩৯

‘সুরা পড়তে না পারা’ বাক্যাংশটি জঙ্গিদের প্রতি সহানুভূতি তৈরি করতে পারে

গুলশানের জঙ্গি হামলার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক সংবাদ যেখানে বলা হয় ‘সুরা পড়তে’ পারার কারণে জঙ্গিরা কয়েকজনকে ছেড়ে দেয় বলে প্রকাশ হওয়ার পর এ ঘটনার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে সত্য হলেও সব সত্য কি খবর হয় প্রশ্ন তুলেছেন সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর।

ফেসবুকে রোববার (৩ জুলাই) তিনি লিখেন, খুন হয়ে যাওয়া মানুষগুলোর ‘সুরা পড়তে না পারা’র তথ্য দিয়ে মিডিয়া সজ্ঞানে কিংবা অজ্ঞানে - জঙ্গিদের প্রতি সহানুভূতি তৈরির চেষ্টা করেছে কী না, ভাবা দরকার।

শওগাত আলী সাগর লিখেন-

হয়তো ঘটনাটা সত্য। কিন্তু সব সত্যই কি খবর হয়? না কি হতে হয়?

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারির পৈশাচিকতা নিয়ে একটি তথ্য কোথায় যেনো পড়েছিলাম। জঙ্গিরা জিম্মিদের ‘সুরা পড়তে’ বলেছে, যারা ‘সুরা পড়তে’ পারেনি তাদের জবাই করে দিয়েছে। খবরটা কারা দিয়েছে খুঁজে পাচ্ছিলাম না।

দৈনিক প্রথম আলো পড়তে গিয়ে হোঁচট খেলাম। পত্রিকাটি লিখেছে,”..... ছেলেকে পাওয়ার পর তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জিম্মিকারীরা বাংলাদেশি মুসলমানদের সুরা পড়তে বলে। সুরা পড়তে পারার পর তাদের রাতে খেতেও দেওয়া হয়। তবে বিদেশিদের জবাই করে ও খুঁচিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।“ ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারছিলাম না। প্রথম আলো দিচ্ছে এই তথ্য?

আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে- এটি একটি নির্দোষ তথ্য। কিন্তু আসলে কি তাই। পেছনের ঘটনাপ্রবাহ থেকে আমরা জানি, যখনি কোনো হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া ব্যক্তিটি কোনো এক সময় ধর্ম নিয়ে সমালোচনা করেছে- এমন একটি তথ্য দেওয়া গেলেই ঘটনা শেষ। ওই হত্যাকাণ্ড সামাজিক স্বীকৃতি পেয়ে গেছে। ওই খুনের পক্ষে কথা বলার মানুষের অভাব হয়নি। এমনকি সরকারের কর্তা ব্যক্তিরাও বলেছেন, ধর্ম নিয়ে সমালোচনা করে কেউ আক্রমণের শিকার হলে সরকার দায়িত্ব নেবে না। অর্থাৎ, ধর্ম নিয়ে সমালোচনাকারীদের হত্যাকাণ্ডকে এক ধরনের সামাজিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

গুলশানের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি তিনজন। প্রথম আলোয় প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, এরা কি তা হলে ‘সুরা পড়তে’ পারেননি। এই ‘সুরা পড়তে’ না পারাদের দলে প্রথম আলোর উদ্যোক্তা লতিফুর রহমানের দৌহিত্রও আছেন। প্রথম আলো কি সেটাই জাতিকে জানাতে চেয়েছে।

এটাও গুরুত্বপূর্ণ নয়। ‘সুরা পড়তে না পারা’- এই বাক্যাংশটি জঙ্গিদের প্রতি এক ধরনের সহানুভূতি তৈরি করতে পারে বলে আমার আশংকা। যে দেশে ‘ধর্ম সমালোচনাকারী’ ট্যাগ করা হলে খুনের বিচারের পথও বন্ধ হয়ে যায়, সেই দেশে ‘সুরা পড়তে না পারাটা’ অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হলে বিস্মিত হবো কেন? এই রকম ভাবনার মানুষ কি বাংলাদেশে কম? আমি তা মনে করি না।

খুন হয়ে যাওয়া মানুষগুলোর ‘সুরা পড়তে না পারা’র তথ্য দিয়ে মিডিয়া সজ্ঞানে কিংবা অজ্ঞানে - জঙ্গিদের প্রতি সহানুভূতি তৈরির চেষ্টা করেছে কী না, ভাবা দরকার।

আবারো বলি, সব সত্যই খবর হয় না, হওয়া উচিৎও না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত