সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক

০৩ জুলাই, ২০১৬ ১৮:১৭

এরই মধ্যে দলাদলি, খোঁচাখুঁচি শুরু হয়ে গেছে

গুলশান রেস্টুরেন্টে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার রেশ এখনো কাটেনি। অথচ এ ঘটনায় শুরু হয়ে গেছে রাজনৈতিক দলগুলোর পরষ্পরকে দোষারূপ। এনিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন।

তিনি লিখেছেন, এখন কোলাহল করার সময় না। এই সময় ভালোবাসার। কাঁদবার। নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করার।

ড. কাবেরী গায়েন ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন-

একদিনও পার হয়নি। এরই মধ্যে দলাদলি, পারস্পরিক খোঁচাখুঁচি শুরু হয়ে গেছে। এখনো তো কান্না আর প্রার্থনা থামারই কথা না।

আমাদের কিছু তরুণ ধর্মের নামে ব্যবহৃত হয়ে এই ঘৃণ্য হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। না, তারা গরীব নয়, বঞ্চিত শ্রেণীর নয়, টাকার প্রলোভন দেখিয়েও কেউ একাজ তাদের দিয়ে করায় নি। তারা একধরণের 'মতাদর্শ' প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করার ঝুঁকি নিয়েছে। লড়াইটা তাই কেবল যৌথবাহিনীর অভিযান দিয়ে আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার বিষয় নয়। এটি ছিলো সাময়িক সমাধান।

এই মূহুর্তে তরুণদের আকৃষ্ট করার মতো কোন মানবতাবাদী মতবাদের চর্চা পৃথিবীতে নেই। আমাদের দেশে আরোই নেই। যারা এই খুনে আদর্শের চাষাবাদ করছেন, তারা সফল। আমরা যারা সব মানুষের ভালো হোক ভাবি, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে, আমরা আমাদের কাজে ব্যর্থ হয়েছি। শুধু আমাদের দেশে নয়, সারা পৃথিবীতেই। ঘৃণা শুধু ঘৃণাকেই বাড়াবে।

এইসব তরুণদের সামনে যে ঘৃণা আর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের টোপ, তার বিপরীতে ভালোবাসা, জীবনের সম্ভাবনা আর সৃষ্টিশীলতার মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার আন্তরিক সাফল্য অর্জনের আগে এই প্রবণতা থামানো যাবে না। বা, সাময়িকভাবে গেলেও তা স্থায়ী হবে না।

কোলাহল থামিয়ে সেই চর্চা কীভাবে শুরু করা যায়, তাই হোক এখনের ভাবনা। পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রে সেই বিকল্প মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার কাজটা আসুন নানাভাবে শুরু করি। প্রথম কাজ বোধহয়, এই জীবনটা যে খুব সুন্দর, আর আমরা যে নানাভাবে কতো ভিন্ন ধরণের বৈচিত্রময় জীবন আর প্রতিবেশের সমন্বয়ে কতো হাজার বছরের মেধা আর কাজের মধ্য দিয়ে আজ এখানে এসেছি, সেই ধারণার বিস্তার। তখনই কেবল জানা সম্ভব, নিজের এবং প্রতিবেশের সবার জীবন কতো অমূল্য। পৃথিবীতে যে নানা ধরণের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতা চলছে, সেই শ্রেষ্ঠত্বের জায়গায় বৈচিত্রের ধারণা আর সৌন্দর্য প্রতিষ্ঠা না করা গেলে এইসব হত্যা এবং পাল্টা হত্যা থামানো যাবে না।

কোলাহল করার সময় এখন না। এই সময় ভালোবাসার। কাঁদবার। নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করার। এবং কীভাবে এখান থেকে সামনে যাওয়া যায়, তা নিয়ে আন্তরিক চিন্তা আর চর্চা করার। চর্চা শুরু হোক শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা থেকে বেরিয়ে বৈচিত্রের সৌন্দর্য দেখার আবহ তৈরির কাজে। সব ধরণের শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা থেকে বের হতে হবে। এ সময় পরস্পরের হাত ধরে থাকবার।

আমাদের সেইসব ধরে থাকা হাত হয়তো একদিন রংধনু গাছ হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত