সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক

০৭ জুলাই, ২০১৬ ১৪:২৯

‘রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ’

মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের সকালেই শোলাকিয়ার ঐতিহাসিক ঈদ জামায়াতের অদূরে বোমা হামলায় পুলিশ সদস্যসহ তিনজন নিহত ও অনেকে আহত হবার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উৎসবের দিনেও শঙ্কার মেঘ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন অনেকে।

গুলশানের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আরেকটি বোমা বিস্ফোরণ কাঁপিয়ে তোলেছে অনেককেই। ঈদের মত ধর্মীয় উৎসবও নিরাপদ না থাকার হাহাকার ফুটে উঠেছে অনেকের প্রতিক্রিয়ায়। 

এ ব্যাপারে সাহিত্যিক স্বকৃত নোমান লিখেছেন:

একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করছিল শোলাকিয়ার ঈদের জামাত। দেখা গেল, খুতবা পড়ার সময় বারবার আটকে যাচ্ছিলেন যুবক ইমাম। তার চেহারায় আতঙ্কের ছাপ। তার পেছনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক পাহারায়। মুনাজাতের সময় পেছন থেকে তারা তাকে বারবার তাগাদা দিচ্ছিলেন―শর্ট শর্ট। মানে মুনাজাত সংক্ষেপ করুন। ওদিকে মাঠে আতঙ্কিত মুসল্লিদের বেশিরভাগই দাঁড়িয়ে। আতঙ্কে তারা বসার সাহস পাচ্ছিল না। নিরাপত্তা সংকটে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদ ইদগাহে যেতে পারেননি। সুতরাং যেসব গণমাধ্যম প্রচার করে বেড়াচ্ছে শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে, তারা ভুল প্রচার করছে। দুঃখিত, এটাকে শান্তিপূর্ণ বলা হয় না।

আচ্ছা, এভাবে পুলিশ পাহারায় এমন আতঙ্ক নিয়ে ঈদের নামাজ পড়তে হবে, বাংলার মানুষ কি কখনো ভেবেছিল? আজকের পর থেকে কী প্রতিক্রিয়া হবে এ দেশের সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে? তারা কি দ্বিধা বিভক্ত হবে, নাকি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যমত গড়ে তুলবে? শোলাকিয়ার ঐ ইমাম তো মুসলমান, বিধর্মী তো নন, নাস্তিক তো নন। তাকে কেন আতঙ্ক নিয়ে এভাবে নামাজ পড়াতে হবে? তার মানে মুসলমানরাই আজ মুসলমানদের প্রতিদ্বন্দ্বী, মুসলমানরাই আজ মুসলমানদের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত। তবে কি পারস্পরিক রক্তারক্তিতেই মুসলমানরা পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে? হায়! ইতিহাসের কী নির্মম পরিণতি।

 

আইনজীবী রাজেশ পাল লিখেছেন:

শুরু হয়েছিল ব্লগার কিলিং দিয়ে। এখন তা গড়ালো ঈদগাহ পর্যন্ত। আমাদের কথাগুলো তখন অনুভূতির জোশে অনেকেরই ভালো লাগেনি। কিন্তু আজ সেই কথাগুলো নির্মম বাস্তবতা হয়ে দেখা দিয়েছে যে কথাগুলো বলে অনুভূতির রোষানলে জীবন হারিয়েছিলেন হুমায়ূন আজাদ, অভিজিত রায়রা।

ব্লগার মরলে অনেকে উচ্ছ্বাস দেখিয়েছেন নাস্তিক মরেছে বলে , পুরোহিত ,পাদ্রী ,ভিক্ষু মরলেও দেখেছি কাফের মারার উল্লাস। তখন বারবার বলেছি , "নগর পুড়লে দেবালয় কখনো রক্ষা পায়না". কিন্তু কেউ কর্ণপাত করেনি আমাদের কথায় , কেউ না।

বেশিরভাগ মানুষ ভেবেছেন এগুলো ইহুদী ,নাসারা ,হিন্দুস্তানের ষড়যন্ত্র। আর ফরহাদ মঝহার ,পিনাকী , ফারুক ওয়াসিফরা গুগল ঘেঁটে বের করেছেন কন্সপিরেসি থিউরি। কিন্তু বৃক্ষ তোমার নাম কি? ফলে পরিচয়। আর সেই পরিচয় আসলো চরম নিষ্ঠুরতার সাথেই। রক্তে রঞ্জিত হলো গুলশান থেকে শোলাকিয়া। সামনে হয়তো হবে আরো অনেক অনেক জনপদ। ওরাতো বলেই দিয়েছে যে এইসব হামলা "রিপিট ,রিপিট ,রিপিট" হবে। বাংলাদেশে অন্তত মসজিদ আর ঈদের জামাত ছিলো নিরাপদ স্থান। কিন্তু এই রিপিটের ঢেউ এসে ধাক্কা দিলো সেখানেও। পাকিস্তানে যেমন মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়া নিরীহ মানুষের রক্ত ঝরে প্রতি শুক্রবারে , আজ ঝরলো আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশেও।

এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে আমাদের আগামী প্রজন্ম কোনদিন আমাদের ক্ষমা করবেনা তাদের অন্ধকার ভবিষ্যতের জন্য। আর তাই সর্বস্তরে জাতি ,ধর্ম ,বর্ণ ,দল ,মত নির্বিশেষে গড়ে তুলতে হবে প্রতিরোধের ইস্পাত কঠিন দুর্গ। আমাদের মাতৃভূমিকে জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করতে হবে এই অশুভ ছায়ার করাল গ্রাসের কবল থেকে।

একাত্তরের মুক্তিসংগ্রাম ছিলো আমাদের স্বাধীনতা পাওয়ার সংগ্রাম। আর এবারের সংগ্রাম হলো আমাদের স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রাম। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের মর্যাদা রক্ষার সংগ্রাম। বাংলাস্তানের কালো পতাকার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লাল সবুজের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম। এই সংগ্রামে যে জিততেই হবে আমাদের্।

রুখে দাড়াও বাংলাদেশ ………

 

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত