সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক

০৮ জুলাই, ২০১৬ ০২:৩৮

‘প্রাণ দিয়ে না জানি কত মানুষের জীবন বাঁচালেন পুলিশ সদস্যরা’

বৃহস্পতিবার কিশোরগঞ্জে শোলাকিয়ার ঈদ জামাতের প্রবেশ পথে জঙ্গি হামলা ঠেকাতে জীবন দেন পুলিশ সদস্য আনসারুল হক ও জহিরুল হক। পরিবার পরিজন ফেলে মানুষের নিরাপত্তায় ঈদের দিনেও দায়িত্ব পালন করছিলেন তারা। নিষ্ঠার সাথে তা পালন করতে গিয়েই প্রাণ যায় তাদের।

এর আগে এ মাসের শুরুতেই গুলশানে জঙ্গি হামলা ঠেকাতে গিয়ে প্রাণ যায় আরও দুই পুলিশ সদস্যের, আহত হন অনেকেই। নিজেদের জীবনবাজি রেখে দেশপ্রেমের অনন্য স্বাক্ষর রেখে স্বীয় দায়িত্ব পালন করে গেছেন তারা।

জানতেন ওখানে জীবনের ঝুঁকি আছে, কিন্তু দেশের ডাক আর কর্তব্যনিষ্ঠা প্রাণের মায়াকে তুচ্ছ করেছে অবলীলায়!

এই পুলিশ সদস্যদের প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা গেছে অনেককে।

এ ব্যাপারে প্রগতিশীল আন্দোলনের কর্মী পাপলু বাঙালি ফেসবুকে লিখেছেন,

পুলিশের প্রতি শ্রদ্ধা। পুলিশকে স্যালুট।
সকল ক্ষোভ। সকল অনিয়ম আপনারা রক্ত দিয়ে মুছে দিচ্ছেন।"

ওয়াহিদুর রহমান লিখেছেন,

ঈদের দিনে ২ জন পুলিশ অফিসার মারা গেছেন, এটা স্বাভাবিক মৃত্যু না, উনারা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মারা গেছেন। পুলিশ যত খারাপই হউক না কেনো জাতীয় সংকটে পুলিশ অফিসাররাই সবার আগে আমাদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন, জীবন দিচ্ছেন। ভাবতে পারেন, আপনি ঈদের খুশিতে আমোদে সময় কাটাচ্ছেন আর ২ জন পুলিশ অফিসারের পরিবারে শোকের মাতম। নিজেকে স্বার্থপর মনে হচ্ছে ভীষণ 

অনলাইন এক্টিভিস্ট ওয়ারিশ আজাদ নাফি লিখেছেন,

বোমার আঘাতে মারা যাওয়ার আগে পুলিশ কনস্টেবল আনসারুল হকের শেষ কথা হয়েছিল ভাই নাজমুল হকের সাথে। ভাইকে বলেছিলেন আনসারুল হক
" তোমরা ভালমতো ঈদ কর। আমার জরুরি ডিউটি আছে; ছুটি নেই। আসতে পারব না “
আসলেই আমরা যাতে খুব আনন্দে নিরাপদে ঈদ করি, আনসারুল হকেরা তাই নিজের ঈদ কোরবান দিয়ে টহলে থাকে
.
তারপরও হয়ত আনসারুল হকের মৃত্যুতে আমরা অনেকেই গলায় তৃপ্তির ঢেকুর তুলে " আলহামদুলিল্লাহ " বলবো কারণ আনসারুল হক একজন পুলিশ
.
জঙ্গিদের হামলায় নিহত আরেক পুলিশ নাজমুল হকের বয়স বেশী না মাত্র ৩০
মাত্রতো জীবনের শুরু হল। হয়ত কিছুদিন আগেই বিয়ে করেছিলেন। ঈদের দিন ডিউটি শুনে হয়ত প্রিয়তমা স্ত্রীর চোখে দু ফোটা অভিমানও জমেছিল। নাজমুল হয়ত এভাবেই মান ভাঙ্গানোর চেষ্টা করেছিলেন প্রিয়তমার
- জানতাম তুমি এবারের ঈদেও থাকবে না
- মানুষের ঈদ কে নিরাপদে রাখার জন্য তোমার স্বামী নিজের ঈদ বিসর্জন দেয় তোমার তো গর্বিত হওয়া উচিত
- আমি এতকিছু বুঝিনা কবে আসবে বল
- আমি ছুটিটা পেলেই চলে আসব
- সত্যি তো
- আমি আসব হো
আফসোস সে ফেরা আর হয়নি নাজমুল হকের
তার প্রিয়তমা স্ত্রী হয়ত এভাবেই পথ চেয়ে থাকবে তার্। ফিরে আর আসবে না নাজমুল
.
তাতে অবশ্য আমাদের কিছু যায় আসবে না। আমরা অনেকেই হয়ত কোকের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে খিস্তি আউড়াব
" যাহ শালা ঠোলা টা মরছে "
.
আজকে রাতের খবরের হেডলাইনটা এমনটা হতে পারত
" জঙ্গীদের হামলায় আতঙ্কে লাখো মানুষের ছুটো ছুটিতে পদপিস্ট হয়ে ১৫০ জনের মৃত্যু"
জ্বি হা হামলাকারীরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে পাশের মাঠ থেকে ঈদের জামাতের দিকেই আসতে ছিল।
শোলাকিয়ার জামাতে মানুষ হয় লক্ষাধিক। ভাবতে পারেন সন্ত্রাসীরা যদি জামাতে পৌছে ককটেল আর গুলি ছুড়লে এত মানুষ কোনদিক ছুটত। লাখো মানুষে ধাক্কাধাক্কিতে বৃদ্ধরা শিশুরা কার পায়ের নীচে চাপা পরত।
স্ট্যাম্পিড বুঝেন? গত হজে হাজারো মানুষের প্যানিকে পদপিস্ট হয়ে হাজিদের মারা যাওয়ার কথা মনে আছে?
.
কিন্তু সেটা হয়নি
আমাদের বীর পুলিশেরা তার আগেই থামিয়ে দিয়েছে সেই জানোয়ারদের্। প্রাণ দিয়ে না জানি কত মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে
.
তারপরও হয়ত আমরা অনেকেই মিডলফিঙ্গার দেখিয়ে
প্রচন্ড ঘৃণায় বলব " পুলিশ মরছে তো কি হইছে"
.
তাহলে শুনে রাখেন আনছারুল হকেরা ক্রেডিটের তোয়াক্কা করেনা। আনছারুল হকেরা বুকের ব্যাজে একটুকরো বাংলাদেশ কে ধারণ করে
আনছারুল হকেরা প্যাট্রিয়ট
দা ট্রু প্যাট্রিয়ট

আপনার মন্তব্য

আলোচিত