শাহ আলম সজীব

০৯ ডিসেম্বর, ২০১৬ ১১:৪০

শাকিল ভাই ও কিছু স্মৃতি

আমি তখন জেলে, পরেরদিন ঈদ। কোনদিন মা, ভাই বোন বা পরিবার এবং বন্ধুবান্ধব ছাড়া আমার ঈদ করা হয়নি, তাই স্বাভাবিকভাবে মন খুব খারাপ।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পদ্মা -৪ এর বন্দিরা ঈদ উপলক্ষে সবাই উৎফুল্ল, যে যার মতো। কিন্তু আমার মনে বাড়ি, আমার মা ভাই বোন এবং আমার বন্ধু-বান্ধবরা। হঠাৎ এক কয়েদি এসে আমার নাম ধরে ডাকাডাকি করছে, বলছে আপনার লোক এসেছে তাড়াতাড়ি চলেন। এক দৌড়ে চলে আসলাম কয়েদির সাথে।

গিয়ে দেখি প্রিয় জয়দেব নন্দী দা ও সৈকত ভৌমিক দা। চোখেমুখে আনন্দের বাঁধভাঙা কান্না, আমার কান্না দেখে চোখ চল চল করছে জয়দেব দা ও সৈকত দা'র। কিছুক্ষণ পর একটু থেমে জয়দেব দা বললেন শাকিল ভাই পাঠিয়েছেন। তোকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং বলছেন চিন্তা না করতে, "ভাই তোর পাশেই আছে"। এবং ভাই জানতে চেয়েছেন তোর মামলা এখন কোন অবস্থায় আছে আর মামলা নিয়ে কার কার সাথে কথা বলতে হবে।

আমি বিস্তারিত কিছু খুলে বললাম, এবং বললাম ভাই যেন আমার বাড়িতে একটা ফোন করেন। তাহলে আমাদের বাড়ির সবাই সাহস পাবে। জয়দেব দা আমার হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে বললেন, ভাই তোর জন্য ঈদের পাঞ্জাবি পাঠিয়েছেন, আর ভাবী নিজে রান্না করে পোলাও বানিয়েছেন। চিন্তা করিস না সজীব, আসলে তুই ভাগ্যবান, ভাই তোকে নিয়ে সব সময় চিন্তা করে, তোকে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় ইত্যাদি ইত্যাদি।

কী বলবো, নিজেকে তখন জেলে বন্দি মনে হয়নি, চোখ দিয়ে অবিরত পানি ঝরছে, আমার রাজনীতি আজ সার্থক। শাকিল ভাইয়ের মতো মানুষ আমার খোঁজ নেয়। শেখ হাসিনার ছোট এবং খুব ক্ষুদ্র একজন কর্মীর জীবনে এর চেয়ে বড় আর কি পাওয়া থাকতে পারে।

জয়দেব দা ও সৈকত দা আমাকে অফুরান সাহস দিয়ে বিদায় নেয়ার সময় সৈকত দা আবারও বললেন চিন্তা করবিনা সজীব, শাকিল ভাই বলছেন তোকে বলতে "তিনি সব সময় তোর পাশেই আছেন"।

রুমে আসার পর অন্য বন্দিরা আমার পাশে এসে ভিড় করে ধরলো। কেউ কেউ বলছে কে এসেছিলো, আপনার বুঝি জামিন হয়ে গেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। আর কেউ কেউ প্যাকেট খুলছে, একজন পাঞ্জাবি খুলে বললো অনেক সুন্দর, ঈদের জামাত পড়ে পাঞ্জাবিটা আমাকে দিয়ে দিয়েন আমি পরবো। আরেকজন খাবার বের করলো। আরও কয়েকজন সিগারেট নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে, দেখলাম বেনসনের কার্টুন। নিজেরা যার যার মতো এক প্যাকেট এক প্যাকেট করে নিচ্ছে। আমাকে এক প্যাকেট দিয়ে বললো এটা তোমার।

কিন্তু এসবে আমার মন নেই। আমার মন পড়ে আছে অন্যখানে, রাষ্ট্রীয় এতো ব্যস্ততার মাঝেও শাকিল ভাই আমার খোঁজে জয়দেব দা ও সৈকত দা'কে পাঠিয়েছেন, ভাবী নিজে রান্না করেছেন ইলিশ মাছ আর পোলাও। বার বার একটা কথাই কানে বাজছে "চিন্তা করিস না সজীব, "শাকিল ভাই তোর পাশেই আছেন..."।

আজ চারদিন, আমাদের সেই প্রিয় ভাই, আমার অন্যতম অভিভাবক মাহবুবুল হক শাকিল ভাই আমাদের মাঝে নেই! কী করে নিজেকে প্রবোধ দিই। আমি কেবল জানি, কী হারিয়েছি আমি, আমরা!

  • শাহ আলম সজীব : নির্বাহী সদস্য, সুচিন্তা বাংলাদেশ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত