মাসকাওয়াথ আহসান

০৯ ডিসেম্বর, ২০১৬ ১৪:৩৬

নারীর বিকাশের বড় বাধা অল্পবয়সে বিয়ে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী শিক্ষা বিকাশে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন। কর্মক্ষেত্রে নারীর দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব মূল্যায়নের চেষ্টা করেছেন। দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা যেখানে নারী; সেখানে জনশক্তি হিসেবে তাদের বিকাশের ওপরে সমাজ ও রাষ্ট্রের বিকাশ নির্ভর করছে। এই বাস্তবতায় নারীর বিকাশের পথে সবচেয়ে বড় বাধা অল্প বয়েসে বিয়ে। এতে অসংখ্য সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটে। খুব কম পুরুষই বিয়ের পর নারীকে শিক্ষা ও পেশাগত ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেন। তাই রাষ্ট্রকেই নারীর পাশে দাঁড়াতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের গ্রামীণ বাস্তবতা বিবেচনা করে তাদের বিয়ের বয়স কমানোর একটি আইন প্রণয়নের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছেন। এটি একটি ভুল বাস্তবতার কাছে আত্মসমর্পণের মতো। সেই বাস্তবতা বদলানোর দায়িত্বটিই সরকারের এবং সমাজের প্রতিটি মানুষের। প্রত্যেক নারীর জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে তাদের জন্য দেশ ও জাতি-গঠনের সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারলে বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে না। বিয়ে সংক্রান্ত মানসিক চাপে নারীর প্রতিভা বিকশিত হয় না। বিয়ে জীবনের অন্যতম বিষয়; কিন্তু জীবনের মূল লক্ষ্য কখনোই নয়।

সমসাময়িক বিশ্ব-বাস্তবতায় নারীর আত্মনির্ভর-উন্নয়ন কৌশল অর্জনের পর বিয়ে বিষয়টি তার ইচ্ছার স্বাধীনতা হওয়া জরুরী। পুরুষেরা যে ইচ্ছার স্বাধীনতা উপভোগ করায় সমাজ-বাস্তবতায় নারীর চেয়ে সুবিধাজনক শর্তে নিজের মেধা ও যোগ্যতার বিকাশের সুযোগ পেয়েছে। নারী এবং পুরুষ উভয়কেই মানুষ হিসেবে সমানভাবে ক্ষমতায়িত করা না গেলে সমাজের সুস্থ বিকাশ কখনোই ঘটবে না।

আমরা প্রত্যাশা রাখি সম্মানিত প্রধানমন্ত্রী নারীর বিয়ের বয়স কমানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন। বরং স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-কর্মক্ষেত্রগামী প্রতিটি নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর আইন প্রণয়ন করবেন।

বাংলাদেশের বর্তমান অন্ধকার সমাজ ব্যবস্থায় আলো জ্বালতে নারীর ক্ষমতায়নের কোন বিকল্প নেই। আর এই নারীর ক্ষমতায়নের কাজটি নারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হওয়াটাই প্রত্যাশিত। কারণ একজন নারীর জীবন বাস্তবতা আরেকজন নারীর পক্ষেই কেবল উপলব্ধি করা সম্ভব।

পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় নারী উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ এই মুহূর্তে এগিয়ে আছে। এই এগিয়ে যাবার মাহেন্দ্র সুযোগটি হাতছাড়া করে পেছনের দিকে হাঁটা হবে আত্মঘাতী। নারী-পুরুষ উভয়েই যেহেতু মানুষ; আইনের চোখে তারা এক একজন সমান অধিকার সম্পন্ন নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। নারী-পুরুষ উভয়েরই বিয়ের আইনসম্মত বয়স একই হওয়াই বাস্তবসম্মত।

নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে ইউরোপে একটি অন্ধকার যুগ বিরাজমান ছিলো। সে অন্ধকার সরানো সম্ভব হয়েছে নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মাঝ দিয়ে। ফলে পুনর্জন্ম ঘটেছে ইউরোপের। অন্যদিকে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করায় মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়া এখন গভীর অন্ধকার যুগে নিমজ্জিত প্রায়। এ অন্ধকার সরিয়ে এশিয়ার পুনর্জন্ম এখন সময়ের দাবী।

যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঙ্গরাজ্যে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক কিছু অন্ধকার আইন প্রচলিত রয়েছে; যা খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই সমালোচিত। কাজেই কোন অজুহাতেই বাংলাদেশে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আইন প্রণয়ন বাস্তবসম্মত নয়। বর্তমান সরকার দিনবদলের অঙ্গীকার নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। ক্ষমতা কাঠামোতে যদি কোন ভুল চিন্তা বাসা বাঁধে তাহলে সে চিন্তাবদল করতে হবে; সমসাময়িকতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে।

  • মাসকাওয়াথ আহসান : সাহিত্যিক, সাংবাদিক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত