১৪ ডিসেম্বর, ২০১৬ ২১:০৮
পাকিস্তান আর জামায়াত-শিবির যেই কারণে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল একাত্তরের পুরোটা সময় জুড়ে আর বিশেষ করে ডিসেম্বরে, সেই কারন নিশ্চই জানেন? বাংলাদেশের ভৌগলিক মানচিত্রের জন্মতো পারবে না থামাতে। চাওয়া ছিল নতুন দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক সৃষ্টি কিংবা লালন আটকে যাক।
তাদের পরিকল্পনার সাফল্য তুলনারহিত। বাংলাদেশ শুরু হয়েছিল একটা বিশাল শূন্যতা সম্বল করে। নীতিনির্ধারণী জায়গায় বসানোর মতো যোগ্য লোকের আকাল। সেই খালি বৃত্ত ভরাট করতে হলো পাকিস্তানি আদর্শকে মন থেকে মুছতে না পারা কিছু সুবিধাবাদী বুদ্ধিবাদীদের দিয়ে। ফলাফল খুব একটা আনন্দদায়িনী হয়নি।
হুমায়ুন আজাদ, অভিজিৎ রায়, রেজাউল হক, শফিউল, রাজিব হায়দার এরা যখন লক্ষ্যবস্তু হন জামায়াত-শিবির আর অন্যান্য ইসলামিক সন্ত্রাসী সংগঠনের, তাদের উদ্দেশ্যের সাথে আপনারা কি একাত্তরের কোন মিল খুঁজে পান?
ব্লগার, অধ্যাপক, বাংলাদেশকে ভালোবাসা লোকদের হত্যা করা সেই একই কারণে। বাংলা ভাষা আর সংস্কৃতির যেই পথ আমরা তৈরী করেছি একটু একটু করে, সেই পথকে পরিণত করা কানাগলিতে। প্রশ্ন করার, বিনা দ্বিধায় সব কিছু মেনে না নেয়ার যেই আরামটুকু ধারণ করে কাটিয়ে দিতে চাই জীবন আর জীবিকা, এই মানুষগুলো আমাদের বের করতে চেয়েছিলেন এই কাঁথামুড়ি দেয়া আলস্যের ঘুম থেকে।
আপনারা যারা আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শোকের মাতম করেন, তারাই আবার কী করে পারেন অনন্ত বিজয় দাশ কিংবা নীলয় নীলের হত্যায় স্বস্তি খুঁজে পেতে? একবারও কি ১৯৭১ এর বুদ্ধিজীবী হত্যার মহাযজ্ঞের সাথে মিল খুঁজে পান না আজকের ব্লগার-লেখক-অধ্যাপক হত্যার? শুধুমাত্র ধর্মের বিরোধীতায় তারা আপনার এতো অপ্রিয়, বাংলাদেশের জন্য, বাংলা সংস্কৃতির জন্য তাদের স্রোতস্বিনী মমতা আপনার চোখে পড়ে না।
আপনি যখন ভেবে নেন ব্লগারদের মারা যাওয়া তাদের কাজের উৎকৃষ্ট শাস্তি, কিংবা যখন ধরে নেন খুন করা খারাপ তবে দোষ আসলে ব্লগারদেরই, তখন আপনি নিজের অজান্তেই হয়ে ওঠেন রায়েরবাজারের একজন সহযোগী। আপনি নিজের হাতে হয়তো মাইক্রোবাসে ওঠাচ্ছেন না চোখবাঁধা বুদ্ধিজীবীদের। তবু ছুরি থেকে রক্ত মোছা রুমালটা আপনি। শহীদের পরিবারকে 'স্যার একটু পরে চলে আসবেন' বলে অভয় দেয়া লোকটা আপনার মতোই একজন।
১৯৭১-এ আমরা পারিনি আমাদের সোনার মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে। ২০১৬-তে এসে পারি। সেটা না পারলে শুধু নিজেকে একটু প্রশ্ন করবেন- শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে এই শোকপালন আপনার অভিনয় নয়তো?
আপনার মন্তব্য