সুষুপ্ত পাঠক

০৮ মে, ২০১৭ ১০:১৯

কেন প্রশ্ন তুলি না কোন সাহসে পুরুষ মেয়েকে আক্রমণ করতে গেল?

বনানীতে দুই তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় পাবলিক সমর্থন মিলবে না। এদেশে নারী নির্যাতনের বিচার চাইতে হয়। সারা দেশের পাবলিক সেন্টিমেন্ট দেখে প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। বনানীর দুই তরুণী প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ত। আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। তার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে একটা হোটেল রুমে সেই দুই তরুণী গিয়েছিল। তারপর তারা ধর্ষণের শিকার হয়।

দেশের জনগণ এই ঘটনা জানার পর এখন সেই দুই তরুণীকেই দুষছে। এদের এমন শিক্ষাই হওয়া উচিত ছিল ইত্যাদি ইত্যাদি…।

মসজিদে কুরআন পড়তে গেলে মেয়েরা নিজেকে একটা কাপড়ের কুণ্ডলী বানিয়ে ফেলে। তারপরও হুজুরের চোখের অতি ক্ষমতা সম্পন্ন লেজার ঘোমটা-হিজাব ভেদ করে তার শরীর পর্যন্ত দেখে ফেলে। তারপর নিজেকে সামলাতে না পেরে মসজিদের মধ্যেই মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। এর আগে আমরা ফেইসবুকে দেখেছি কুরআনের পাতা ছিঁড়ে বেয়াদপি করার কারণে কুকুরে পরিণত হয়ে গেছে। কেউ বেজি, শাপ…। কিন্তু যে মাওলানা কুরআনের সামনে ধর্ষণ করল সে শাপ ব্যাঙ কিছুই হলো না। কুরআন অবমাননার ডাকও কোথাও উঠল না…।

বনানী আর মসজিদের কুরআন পড়তে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হওয়া কিশোরী- সমান্তরাল এ দুই ঘটনা আমাদের সামনে একটা সত্য প্রকাশিত করে দেয়। নারীর পোশাক, জীবনযাপন ধর্ষণকে গ্রহণযোগ্য করার একটা বাহানা মাত্র।

এক সময় পত্রিকার মফস্বল পাতায় ধর্ষণের নিউজগুলোতে ধর্ষিতার ছবিসহ ছেপে রগরগে ধর্ষণের বর্ণনা দেয়া হতো। ‘দুই একটা ধর্ষকের জন্য গোটা পুরুষ জাতি দায়ি না’ হলেও সেইসব চটি নিউজ ছিল পুরুষদের পর্ণগ্রাফি পড়ার মত বিনোদন। সেখানে কোন মেয়ে রুম ডেটিং করতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হলে আমরা তো তাকে নিয়ে হাসাহাসি করবই। আমরা এমনটাই শিখেছি। আমরা শিখেছি যখন কোন মেয়ে আমার সঙ্গে একটা রুমে ঢুকেছে তার মানে সে আমার সঙ্গে সেক্স করতেই ঢুকেছে। কিংবা মেয়েটির জানার কথা কোন ছেলের সঙ্গে একা এক ঘরে সময় কাটানোর মানেই হচ্ছে তার সঙ্গে শুতে হবে জেনেই সে ঢুকেছে…।

ভেবে দেখুন, একটি মেয়ে একটা খেলনার দোকানে গেছে তার বাচ্চার জন্য খেলনা কিনতে। স্টোরে তার পছন্দসই খেলনা না থাকায় দোকানদার বলছে উপরে আমাদের গোডাউনে আরো আছে, আপনি গিয়ে দেখে আসুন।… আসলে দোকানের মালিকের এই সংলাপটিও পরাবাস্তব। কোন মহিলাকে তিনি গোডাউন ঘরে যেয়ে জিনিস পছন্দ করতে পাঠাবেন না। কেন? উপরে সেই গোডাউন ঘরে একটা সেলসম্যানের সঙ্গে একটা মেয়ে একা একা তার পছন্দসই খেলনাটা দেখে দেখে খুঁজে বের করার মত সভ্যতা আমরা অর্জন করতে পারিনি।

আসল সত্য হচ্ছে একটা মেয়ে এরকম আধো অন্ধকার ঘরে একা কোন পুরুষ থেকে আক্রমণের একটা সম্ভাবনার কথা মাথায় নিয়েই জীবন কাটায়। তাই সে পুরুষ সম্পর্কে সতর্ক। তারপরও এরকম কোন গুদাম ঘরে অঘটন ঘটে যাবার পর আমরা মেয়েটির আক্কেল নিয়ে প্রশ্ন তুলি। সে কোন সাহসে একটা অচেনা লোকের সঙ্গে অন্ধকার গোডাউন ঘরে গিয়েছিল? আমরা কিন্তু দাবী করি না- কোন সাহসে একটা পুরুষ একা একটা নারীকে পেয়ে আক্রমণ করতে গেলো…।

এ কারণেই কোন পরিবর্তন আসে না। একা একটা মেয়ে নিজেকে বস্তাতে ঢুকিয়েও ধর্ষণের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। আবার আধুনিক একটা মেয়ে বন্ধুর পার্টিতে গিয়ে কৌশলে ধর্ষণের শিকার হয়ে যাচ্ছে...।

  • সুষুপ্ত পাঠক: লেখক, এক্টিভিস্ট।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত