সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক

১০ মে, ২০১৭ ১৪:৩৭

কী ঘটেছিলো ভয়ঙ্কর সে রাতে?

রাজধানীতে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষনের ঘটনায় এখন দেশজুড়েই তোলপাড় চলছে। বনানীর রেইনট্রি নামক হোটেলে ধর্ষনের ঘটনায় মামলা হলেও এখন গ্রেপ্তার হয়নি কেউ।

কি ঘটেছিলো সে রাতে ওই হোটেলে? আক্রান্ত দুই ছাত্রীর সাথে কথা বলে সে রাতের ভয়ঙ্কর সেই ঘটনার বিস্তারিত জানিয়েছেন এক্টিভিস্ট ও আইনজীবী নিঝুম মজুমদার।

ফেসবুকে নিঝুম মজুমদার লিখেন-

বনানীর ধর্ষক শাফাত পিস্তল তাক করে ছিলো প্রথম ভিকটিমের দিকে। হিস হিস করে বলে, “কিরে চিনস এইটা?” সেই সাথে চলছিলো ভয়ংকর রকমের গালি। বেশ্যা, মাগী আর অকথ্য সব শব্দ। নাঈম আশরাফ নামের ধর্ষকটি লাফিয়ে লাফিয়ে কিল ঘুষি চড় দিচ্ছিলো ভিকটিমদের। তাদের একটাই কথা, ওদের সাথে “সেক্স” করতে হবে।

তিনজন মেয়ে ছিলো আর একটি ছেলে। তারা এসেছিলো শাফাতের জন্মদিনের পার্টিতে। ওদের চারজনকে বলা হয়েছিলো প্রায় ১০০ জনের মত মানুষের এক জন্মদিনের পার্টি। কিন্তু এসে দেখে কেউ নেই...কিছু নেই...

যেই মা ১০ মাস ধরে গর্ভ ধারন করলেন শাফাতকে, সেই মা'র পুত্র তার ২৬ তম জন্মদিন পালন করবে দুইটি নারীকে ধর্ষন করে। এই ছিলো শাফাত, নাঈম আর শাদমানের পরিকল্পনা। পুরো ঘটনায় দালালের ভূমিকায় ছিলো শাদমান।

এরা ছাড়াও ছিলো ধর্ষক শাফাত, ধর্ষক নাঈম আশরাফ, ধর্ষক শাদমান সাকিফ। ওই তিনজন মেয়ের সাথে যে ছেলেটি জন্মদিনের পার্টিতে এসেছিলো সেই ছেলেটি অনেকবার কাকুতি মিনতে করেছে ছেড়ে দিতে। নাঈমের পা ধরে রেখেছে। চিৎকার করে কেঁদেছে।

ধর্ষকরা ছেড়ে দেয়নি বরং ছেলেটিকে নিয়ে মজা করেছে। পা দিয়ে লাথি দিয়েছে, চড় দিয়েছে।

অভিযোগকারী দু’জন ভিকটিম ছাড়াও বাকী যে মেয়েটি ছিলো, ধর্ষকরা সেই মেয়েটিকে চেঁচিয়ে বলছিলো জামা কাপড় খুলতে। তারা তার অনাবৃত শরীরের নাচ দেখবে। নাঈম বলে, "না না, নাচ না, গ্যাং রেইপ হবে আজ।"

বাদিনী দ্বয়ের একজন শাফাত আর নাঈমের পায়ে ধরে কাঁদতে থাকে। ভাইয়া প্লিজ এই মেয়েটাকে ছেড়ে দেন বলে।

ধর্ষক নাঈম কি ভেবে ছেড়ে দেয়। বলে উঠে, “তাহলে তুই আয়”। এই বলে মেয়েটিকে ৭০২ নাম্বার রূমে গিয়ে নির্যাতন করতে থাকে। এদিকে শাফাত টেনে নেয় আরেক জনকে। সারা রাত ধরে নির্যাতন করে দুটি মেয়েকে। একটা পর্যায়ে দুটি পা চেপে ধরে শাফাতের। “ভাইয়া প্লিজ মাফ চাই আপনাদের কাছে...প্লিজ”

শাফাত গোংরাতে গোংরাতে পশুর মত চিল্লাতে থাকে। "কুত্তার বাচ্চা, খানকী মাগী, বেশ্যা তোরা না বলছিলি শুবি না, আসবি না!!! দেখ কি করেছি তোদের"

শাফাত এরই আগে বলে রাখে তার ড্রাইভার বিল্লালকে। বিল্লাল ঘুরে ঘুরে দুইটি রূমে ভিডিও করতে থাকে।

রেইনট্রি’র দুইজন কর্মকর্তা, বেয়ারা এসে খোঁজ নিয়ে যায় সব ঠিকমত চলছে কিনা। বাইরে দাঁড়ানো শাফাতের বডি গার্ড আবুল কালাম আজাদ। ইগলের মত সে সব পাহারা দিতে থাকে।

ওদিকে শাফাত চিল্লাতেই থাকে, “আমার বাপ কি বাল ফালায়? সোনা বেচে...সোনা। এই দেশের এয়ারপোর্টের সব সোনা কই যায়? কইত্থেইকা আসে? সব আমার বাপের আন্ডারে। তোগো মতো এমন দুই একটারে কাইটা ভাসায়া দিলে কেউ টের পাইবো না”

অন্য রূম থেকে চিৎকার ভেসে আসতে থাকে। নাঈম আসরাফ পেটাচ্ছে আরেক ভিকটিমকে। চিৎকার...কান্না...আর্তনাদ। পুরো ঘটনার তদারকি করতে থাকে শাদমান সাকিফ।

ধর্ষন শেষ হয়ে ক্লান্ত ধর্ষক এবার ওদের সাথে আশা ছেলেটিকে ইচ্ছেমত লাথি দেয়। বলে, “যা তুইও ওই ঘরে গিয়ে করে আয়”। ছেলেটি অপমানে আর কষ্টে ঘরের একটি কোনে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে।

মেয়েটি আমাকে বলে, "ভাইয়া এই ঘটনার পর কতবার মনে হয়েছে মরে যাই। কতবার ভেবেছি সব কিছু ছেড়ে পালাই। কিন্তু পারিনি ভাইয়া। ভাইয়া একটা সময় মনে হয়েছে হলি আর্টিজানের জঙ্গীরাও ওদের থেকে ভালো। সেসব জঙ্গীরা তো জানে মেরে ফেলেছে। আর এরা অপমান আর লাঞ্চনায় আমাদের জীবন মৃত করে ফেলেছে। আমরা বেঁচে থেকেও মৃত। আমি প্রতিটি রাতে দুঃস্বপ্ন দেখি আর কাঁদি। কাউকে বলতে পারি না। দুই বান্ধবী মিলে ফোনে কথা বলি আর কাঁদি"

"এর মধ্যে আমাদের সেদিনের ভিডিও ওরা ছেড়ে দিয়েছে বলে আমাদের ফোন করে জানায়", বলে, “তোরা হইলি এখন আমাদের কেনা মাগী। যখন ডাকমু আসবি”

একদিন এক ভিকটিমের বাসায় শাফাতের দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ যায়। ভয় পেয়ে যায় বাসার সবাই। আস্তে আস্তে জানাজানি হতে থাকে। হয় নাঈম আর শাফাতের সয্যা সঙ্গী হও, তা না হয় ভিডিও ভাইরাল।

একটা পর্যায়ে ওরা সিদ্ধান্ত নেউ ধর্ষকদের সাথে সমোঝোতা করবে। সেই কথা মত ধর্ষক নাঈম আর শাফাতের দুই বড় ভাইকে ধরে ভিকটিম মেয়েরা। দুই বড় ভাই বোঝায় ধর্ষকদের। ধর্ষক নাঈম আর শাফাত দাঁত বের করে হাসে। শাফাত বলে, “তাইলে বেইবী আমাদের বিয়া করবা?” এই বলে হাসতে থাকে সেই বড় ভাইদের সামনেই। কোনো সমঝোতা-ই হয়না আর।

দুই ভিকটিমদের একজন হঠাৎ করে সমস্ত ক্রোধ নিয়ে জ্বলে ওঠে। আরেক ভিকটিমকে বলে, আমরা পুলিশের কাছে যাব। যা থাকে কপালে। সব বলব। এইভাবে বেঁচে থাকা অসম্ভব।

পুলিশে জানাবার আগে একজন ভিকটিম জানতে পারে শাফাতের ওয়াইফ আছে। সিদ্ধান্ত নেয় তাঁকে জানাবে সব প্রথমে। শাফাতের প্রথম স্ত্রী পিয়াসা কে খুঁজে বের করে একজন কিন্তু জানা যায় পিয়াসার সাথে ৮-ই মার্চ শাফাতের ডিভোর্স হয়ে গেছে।

পিয়াসার কাছে অনুনয় বিনয় করে ভিকটিমদের একজন। বলে, আপু প্লিজ আমাদের সাথে একটু থানায় চলেন। পিয়াসা প্রথম দিন যায় অসহায় দুইটি মেয়েকে দেখে কিন্তু তিনি বার বার সতর্ক করে দেন যে এই ছেলেদের যতটা খারাপ সে দেখেছে তার থেকেও দিগুন খারাপ তাদের বাবা। বিশেষ করে শাফাতের বাবা দিলদার। নগরের সবচাইতে বড় সোনা চোরাচালানকারী।
পিয়াসা শুধু প্রথম দিন তাঁদের সাথে থানায় যায়।

এর পর গুনে গুনে তিন দিন থানার ওসি ফরমান আলী আর তদন্ত কর্মকর্তা মতিন তাদের ঘুরায়। এইসব কইরা কি হইবো, বাসায় যাওগা, জানাজানি হইলে বিয়া হইবো না, এরা প্রভাবশালী, এই বয়সে বিপদে পড়লে কিন্তু আর উঠতে পারবা না...এইসব বলতে থাকে ওসি ফরমান।

একটা পর্যায়ে নাছোড়বান্দার মত থানায় পড়ে থাকে ভিকটিম আর তাঁদের মা’রা। থানা মামলা নেয়। ফরমান আর তদন্ত কর্মকর্তা মতিন যথাসাধ্য চেষ্টা করে মামলাটা শেষ করে দিতে।

এখন লন্ডনে রাত বাজে চারটা। আমি ঘুমাইনি। ঘুমাতে পারিনি। আমার স্মৃতিতে, মজ্জায় শুধু মিশে আছে মেয়েটার হু হু কান্নার শব্দ। ভাই...প্লিজ...প্রধানমন্ত্রীকে একটু বলবেন। উনিতো মেয়ে...উনি বুঝবেন...

আমার চোখ ভেসে যায়...আমি বুঝতে দেইনা। ভাইয়ের চোখের জলে বোন যদি আরো ভেঙ্গে পড়ে...

আমি সন্তর্পণে কান্না লুকাই...

আপনার মন্তব্য

আলোচিত