এনামুল হক এনাম

০৪ জুন, ২০১৭ ১৮:৫০

সুলতানা কামালকে নিয়ে হেফাজত জট পাকাচ্ছে

হেফাজতে ইসলাম সুলতানা কামালের বক্তব্যের আংশিক উদ্ধৃত করে যে জল ঘোলার চেষ্টা করছে তাতে আমার আপত্তি নেই। কারণ হেফাজতের জন্মই জল ঘোলা করার জন্য, তাদের কাজই হলো জনসাধারণের মনে সাম্প্রদায়িকতার বিষ বীজ পুতে দেয়া আর সেই বীজে পানি ঢেলে তা প্রকাণ্ড বিষবৃক্ষে পরিণত করা।

তবে মন খারাপ হয় যখন আমার মতাদর্শের লোকজন ঐদিনের টকশো না শুনে, হেফাজতের কথায় লাফালাফি শুরু করে দেন।

“সে দিনের টকশোতে হেফাজতের একজন ছিলেন। সেখানে প্রশ্ন উঠেছিল, সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় ভাস্কর্য থাকলে আপত্তিটা কিসের? তিনি (হেফাজতের প্রতিনিধি) বলেছিলেন, ‘এটা মূর্তি, ধর্মীয় স্থাপনা। কোর্ট এলাকায় কেন ধর্মীয় স্থাপনা থাকবে? এগুলো ছিল তার কথা। তখন তার জবাবে সুলতানা কামাল বলেছিলেন, ‘আমিও আপনার কথায় একমত। আমিও মনে করি, কোর্ট এলাকায় কোনও ধর্মীয় স্থাপনা থাকা উচিত না। মূর্তি যেমন ধর্মীয় স্থাপনা, তেমনি মসজিদও। আপনার কথা অনুযায়ী সেখানে মসজিদও তো থাকা উচিত না।”

ব্যাপারটা এমন যে, কলা দিয়ে পূজা করা হয়, কোন মুসলমানের ঘরে কলা প্রবেশ নিষেধ। অগ্নি উপাসকেরা আগুনের পূজা করে, তাহলে একই শর্তে মুসলমানের রান্না ঘরে আগুন জ্বালানোও নিষেধ।

ভাস্কর্য আর মূর্তির বেসিক পার্থক্য হলো, মূর্তিকে পূজা করা হয়, ভাস্কর্যকে পূজা করা হয় না। ভাস্কর্যকে মূর্তি বানিয়ে হেফাজতের নেতা ঐদিন বলেছিলেন, মূর্তি ধর্মীয় স্থাপনা, কোর্ট এলাকায় ধর্মীয় স্থাপনা থাকবে না। সুলতানা কামাল যুক্তি দিয়ে বলেছিলেন, মসজিদও তো ধর্মীয় স্থাপনা, তাহলে কোর্ট এলাকায় মসজিদ কেন থাকবে!!

জাতীয় নির্বাচন নিকটবর্তী হচ্ছে। নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে হেফাজতের জট পাকানো তত বাড়বে। এরা সব ইস্যুতে কথা বলবে, ঝামেলা পাকাতে চাইবে। ইস্যু না পেলে ইস্যু তৈরি করবে।

সাম্প্রতিককালে হেফাজতের সকল কর্মকাণ্ডই বলে দেয় এরা একটি স্বার্থান্বেষী কুচক্রী মহল। তারা ঘোষণা দিয়েছে দেশে কোন ভাস্কর্য কিংবা মূর্তি কিছুই রাখতে দেবে না। মনে রাখবেন, তারমানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যও সময় সুযোগে তারা ঠিকই ভেঙে দেবে।

সমস্যা হলো আমাদের মিডিয়া, এরা ব্যবসায়িক চিন্তা ভাবনায় হেফাজতকে সব সময় লাইমলাইটে টেনে আনে। আর আমাদের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ কেনই বা হেফাজতের সাথে টকশোতে যান। বেশি বেশি মিডিয়া কভারেজ যখন দিচ্ছেন তার ফলাফলও তো ভোগ করতে হবে।

অনেকেই সুলতানা কামালকে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য বলেছেন। আমিও মনে করি সুলতানা কামালের জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। তবে যা বলেছেন তার জন্য নয়, হেফাজতের সাথে টকশোতে যাওয়ার জন্য তাঁর ক্ষমা চাওয়া উচিত।

হেফাজত অনেক দিন যাবত সুলতানা কামালের উপর ঘৃণা আর রাগ মেটানোর সুযোগ খুঁজছিল, সেই সুযোগ তারা পেয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত