সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক

১৯ জুলাই, ২০১৭ ২১:৫৫

বিকৃতি নয়, বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকতে শিশুদের উৎসাহ দিয়েছেন ইউএনও

গাজী মো. তারিক সালমান

বঙ্গবন্ধুর ছবি ‘বিকৃতি’র অভিযোগে এক আওয়ামী লীগ নেতার দায়ের করা মামলায় বরগুনা সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) সকালে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়ে দুপুরে জামিন দিয়েছেন বরিশালের একটি আদালত। অভিযুক্ত ওই ইউএনও বরিশালের আগৈলঝাড়ার সাবেক ও বর্তমানে বরগুনা সদরের ইউএনও গাজী মো. তারিক সালমান।

ইউএনও তারিক সালমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরর ঘটনা মিডিয়ায় আসার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মামলার মুখোমুখি করাকে অন্যায় হিসেবে অভিহিত করার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর প্রতি শিশুদের আগ্রহি করার কারণে ইউএনওকে পুরস্কৃত করা উচিত ছিল বলেও মন্তব্য করেছেন।

তারিক সালমান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে উপজেলা প্রশাসনের আমন্ত্রণপত্রে পঞ্চম শ্রেণি-পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর আঁকা বঙ্গবন্ধুকে উপস্থাপন করেছেন। আর এটাকেই বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতি হিসেবে অভিযোগ এনে মানহানি মামলা দায়ের করেছেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ওবায়েদুল্লাহ সাজু।

ওবায়েদুল্লাহ সাজু বঙ্গবন্ধুর এ ছবি প্রকাশের কারণে গত ৭ জুন ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে বরিশালে মামলা করেন।

এদিকে, আদালতের বেধে দেওয়া ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে বুধবার (১৯ জুলাই) জামিন প্রার্থনা করলে আদালত প্রথমে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর পর তিনঘণ্টা পর জমিন দেন ইউএনও তারিক সালমানকে।

এঘটনার প্রেক্ষিতে কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান মামলা দায়েরকারী আওয়ামী লীগ নেতার রাজনৈতিক বিশ্বাস ও পরিচয়ের প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করে ফেসবুকে লিখেন, “স্থানীয় আওয়ামী লীগের যে নেতা মামলাটি দায়ের করেছেন তিনি আসলেই আওয়ামী লীগ, নাকি আওয়ামী লীগের ভেতর ঢুকে পড়া বিভীষণ, তা ভালো করে তদন্ত করে দেখুন। আমার তো মনে হয় না তিনি আওয়ামী লীগের শুভাকাঙ্ক্ষীদের কেউ।”

পঞ্চম শ্রেণি-পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবিকে স্বাগত জানিয়ে নোমান লিখেন, “পঞ্চম শ্রেণির একটা ছাত্র বঙ্গবন্ধুর ছবি এঁকেছে এটা তো অনেক বড় ব্যাপার। শিশুরা ছবি আঁকতে গেলে এক-আধটু ভুলত্রুটি তো হবেই। ঐ ভুলত্রুটিকে বড় করে না দেখে তাদের বরং আরও উৎসাহিত করা উচিত। ঐ ছবি দিয়ে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র প্রকাশ করে সেই উৎসাহের কাজটিই করেছেন তারিক সালমান। এ জন্য তাকে তো ধন্যবাদ দেওয়া উচিত ছিল।”

স্বকৃত নোমানের এ লেখায় বায়েজিদ হোসাইন নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী কমেন্টে লিখেন, “ঘটনাটি আমার গ্রামের বাড়ি যেই থানায়, বরিশালের আগৈলঝাড়া সেখানে ঘটেছে। এই ঘটনায় ইউএনও কোন ভাবেই দায়ী নয়। এর পেছনে ভিন্ন কারণ রয়েছে। যা স্থানীয়রা সবাই জানে। সঠিক তদন্ত হলে ইউএনও উল্টো পুরস্কৃত হবে নিশ্চিত। এটি একটি প্রতিহিংসার ফসল, এমন মেধাবী একজন ইউএনওকে হেনস্থা করা কোন ভাবেই কাম্য না। নিশ্চয়ই বিষয়টি ঊর্ধ্বতনরা ভেবে দেখবেন।”

সাইফুর রহমান মিশু লিখেন, “শিশুর আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখে যার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হবার উপক্রম হয়, তাকে গ্রাফিক নভেলের 'মুজিব'কে দেখালে নিশ্চিত পটল তুলবেন।”

কথাসাহিত্যিক রেজা ঘটক লিখেন, “শিশুরা কী তাহলে বঙ্গবন্ধু'র ছবি আঁকতে পারবে না? এ কোন অমানুষের দেশে আমরা বসবাস করছি!”

আপনার মন্তব্য

আলোচিত