সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক

১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ১৭:০৫

দেশে সবচাইতে অনিশ্চয়তার চাকুরি হচ্ছে সাংবাদিকতা

শুক্রবার থেকে বন্ধ হয়ে গেলো দৈনিক সকালের খবর'র প্রিন্ট সংস্করণ। বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে মালিকপক্ষ এই পত্রিকা বন্ধের ঘোষণা দেয়। আচমকা এই পত্রিকা বন্ধের ঘোষণায় বেকায় হয়ে পড়েছেন এই পত্রিকাটির কর্মরত সংবাদকর্মীরা।

এনিয়ে লেখক-সাংবাদিক আরিফ জেবতিক ফেসবুকে লিখেছেন-


সকালের খবর পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে গেল। এদেশের সবচাইতে অনিশ্চয়তার চাকুরি হচ্ছে সাংবাদিকতা, কত মানুষ যে অনিশ্চয়তার মুখে পড়লেন ভাবতেই মন খারাপ হয়।
এদেশে মিডিয়া আসলে বিজনেস হিসেবে দাঁড়ায়নি। এই না দাঁড়ানোর পেছনে অনেকগুলো কারন আছে। তবে দীর্ঘদিন মিডিয়ার ভাত খেয়ে আসা আমার ক্লোজ অবজারভেশন হচ্ছে এদেশে মিডিয়া শুরুই করা হয় কোনো ধরনের বিজনেস প্ল্যান ছাড়া। অধিকাংশ মিডিয়া শুরু করা হয় কোনো প্রাজ্ঞ সাংবাদিকককে সম্পাদক করে দিয়ে তাঁর হাতে সমস্ত দায়িত্ব অর্পন করে। একজন সাংবাদিকের নিজের কর্মক্ষেত্রে অনেক ভালো ট্র্যাক রেকর্ড থাকতেই পারে, তিনি হয়তো ভালো রিপোর্টার ছিলেন বা সম্পাদনার কাজে অভিজ্ঞ ছিলেন, কিন্তু ব্যবসার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা ব্যাপার। ব্যাবসায় লাভ-ক্ষতির তীক্ষ হিসেব রাখতে হয়, ব্যয় কমিয়ে রাখতে হয়, মার্কেটিং-সেলস-ব্র্যান্ডিং-মার্কেট পজিশনিং-ব্রেক ইভেন রেভিনিউ সম্পর্কে সার্বক্ষনিক নেতৃত্ব দিতে হয়, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, প্রজেক্ট লঞ্চিং টাইমলাইন ম্যানেজ করতে হয়-একজন পেশাদার সাংবাদিকের এটি এক্সপার্টিজ নয়। তাই হয়তো পত্রিকাটি আপাত চোখে ভালো করছে মনে হয় কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটিকে টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খেতে হয়।

এদেশে মিডিয়া এখনও মোটাদাগে পরোক্ষ ব্যবসা। মিডিয়ার ছায়াতলে রেখে অন্য ব্যবসা থেকে লাভ তুলে নেয়াটাই কাজ। একটা মিডিয়া হাউসের আইডি কার্ড আর গাড়ির স্টিকার তাদের সবগুলো গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি আর ইটভাটার ম্যানেজার ব্যবহার করে এবং অবৈধ সুযোগ সুবিধা আদায় করে। যেহেতু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাই সরকারি দফতরের সংখ্যা গরিষ্ট, তাই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের হাত থেকে নিজের ব্যবসাগুলোকে সহনীয় পর্যায়ে রক্ষা করে উল্টো নিজের দুর্নীতিকে বৃদ্ধি করতেই এখানে অনেক মিডিয়ার আবির্ভাব।

সেক্ষেত্রে কাজ ফুরোলে পাজি মালিকরা যে কোনো সময়েই মিডিয়া হাউস বন্ধ করে দিতে পারেন, কিন্তু পেছনে রয়ে যায় শতশত কর্মজীবি মানুষ যাদেরকে মাস শেষে বাড়িভাড়া দিতে হবে, বাচ্চার স্কুলের বেতন আর বাবা-মায়ের অষুধ কিনতে হবে।

আমি এজন্য সবসময়ই তরুণদেরকে মিডিয়ায় আসতে নিষেধ করি। এ এক নেশাময় ক্যারিয়ার যেখান থেকে মুক্তি মিলে না কিন্তু তার জন্য বড় মূল্য চুকাতে হয় পরিবারের সদস্যদের। খুব ধান্দাবাজ চালু হলে মিডিয়া থেকে দ্রুতই অনেক কিছু তুলে নেয়া যায়। (এক সাংবাদিক নেতার শালী, যে দুইমাস আগে মিডিয়াতে যোগ দিয়েছে সে-ও নাকি সরকারি প্লট পেয়ে গেছে!)

কিন্তু আপনার যদি সেরকম ধান্দা করার ইচ্ছে কিংবা সামর্থ না থাকে তবে এ পথে না মাড়ানোই নিরাপদ।

নেতৃত্ব অযোগ্য সম্পাদক আর ধান্দাচ্ছু মালিকের খপ্পরে এখানে আপনি বারবার পড়বেন আর সারাজীবন পস্তাবেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত