নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০৪:৫৫

রোডমার্চের নামে ‘কোটি টাকা আত্মসাৎ’: যা বললেন শাহীনূর পাশা

হিউম্যানিটি ফর রোহিঙ্গা’র ব্যানারে সিলেট-টেকনাফ রোডমার্চে অর্থ সংগ্রহ এবং কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠেছে সংগঠনটির আহবায়ক মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরীর বিরুদ্ধে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার ডাকা এ লংমার্চ পুলিশি বাধার কারণে শুরুর কিছু সময় পরই পণ্ড হয়ে যায়। লংমার্চে পুলিশি অনুমতি না থাকায় টেকনাফ অভিমুখী ৬৮ গাড়ির মধ্যকার ৬৭ গাড়িকে পুলিশ ফেরত পাঠায়, একটি গাড়িতে ত্রাণ সামগ্রী থাকায় সেটার অনুমতি দেয় পুলিশ।

লংমার্চ পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর সংগঠনটির আহবায়ক ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সাবেক সাংসদ মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদে ডাকা লংমার্চের নামে কোটি টাকা আত্মসাতের। তবে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।  

সাংবাদিক ইকবাল মাহমুদ এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, "বৃহস্পতিবার নির্ধারিত স্থান হুমায়ূন রশীদ চত্বর থেকে ৬৮টি গাড়ির বহর নিয়ে শুরু হয় রোডমার্চ। কয়েক কিলোমিটারের মাথায় রশিদপুর যাওয়ার আগেই রোডমার্চ থামিয়ে দেয় পুলিশ। পুলিশের বক্তব্য, রোডমার্চের কোন প্রশাসনিক অনুমোদন নেয়া হয়নি। ত্রাণ বিতরণের জন্য নেয়া হয়েছে অনুমোদন। এত গাড়ি, এত মানুষ; কিন্তু ত্রাণ কই? খোঁজা শুরু হলো। ৬৮টি গাড়ির মধ্যে ৬৭টিতেই শুধু মানুষ, একটি গাড়ির পেছন দিকে পাওয়া গেলো অল্প কিছু ত্রাণের প্যাকেট। পুলিশ সেই গাড়িটি ছেড়ে দেয়। বাকি সবাইকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়।"

ইকবাল মাহমুদ আরও লিখেন, ''এই ৬৮টি গাড়ির ভাড়া কত হতে পারে? দুই লাখ ৩৮ হাজার টাকা। প্রচার-প্রচারণাসহ সব মিলিয়ে ধরুন আরও দুই লাখ টাকা খরচ। অর্থাৎ পাঁচ লাখের মধ্যেই মামলা খতম। এক কোটি থেকে পাঁচ লাখ বাদ দিলে কত বাকি থাকে? ৯৫ লাখ টাকা। মাশাআল্লাহ! এমন ইস্যু যদি বছরে দুয়েকবার আসে, তাহলে আগামি নির্বাচনের খরচ যোগাড় হয়ে যাবে অনায়াসেই।''

উদ্যোক্তা সংগঠনের একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ইকবাল মাহমুদ আরও জানান, রোডমার্চের জন্য যেসব গাড়ি রিজার্ভ করা হয়েছিলো সেগুলোকে টেকনাফ যাওয়ার জন্য রিজার্ভ করা হয়নি। কয়েক ঘণ্টার জন্য তাদের রিজার্ভ করা হয়েছিলো। প্রতিটি গাড়ি ৩৫০০ টাকা করে ভাড়া করা হয়। আর যেসব মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা রোডমার্চে যোগ দিয়েছিলেন তাদেরকে শেরপুর পর্যন্ত যাওয়ার কথা বলে আনা হয়েছে বলেও জানান এই নেতা।

তাঁর এ স্ট্যাটাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলে এর জবাবে শাহীনূর পাশা চৌধুরী টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে দাবি করেন এ কর্মসূচির পর তার পকেট থেকেই ৩৮ হাজারের বেশি টাকা খরচ হয়েছে।

শাহীনূর পাশা চৌধুরী আয়ব্যয়ের খাতওয়ারি হিসাব দিয়ে দেখান ৩ লক্ষ ৫২ হাজার ২৫৩ টাকা ব্যয়ের বিপরিতে মোট আয় ৩ লক্ষ ১৪ হাজার ৭ টাকা; অর্থাৎ ঘাটতি ৩৮ হাজার ২৪৬ টাকা যা তিনি নিজের পকেট থেকে দিয়েছেন বলে জানান।

শাহীনূর পাশা চৌধুরী লিখেন,

বার্মার মুসলমানদের এই দুঃসময়ে কোন রাজনৈতিক দল এবং ব্যক্তি যখন শক্ত কোন কর্মসূচী গ্রহণ করতে পারেনি, তখন ঈমানের তাকীদে এই দুঃসাহসিক রোড মার্চ কর্মসূচী হাতে নেয়ায় এক শ্রেণীর মানুষের চক্ষুশূল হলাম আমি। আমার চরিত্র নিয়ে নানা অপবাদে জর্জরিত করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে কোটি টাকার প্রতারণা। কেউবা বলছেন আগামীতে মন্ত্রী হওয়ার জন্য আমার এই ঝুঁকিপূর্ণ চ্যালেন্জিং প্রোগ্রাম।

একটু মনোযোগ দিয়ে শুনুন। এই মাসের ৬ তারিখ সংবাদ সম্মেলন করার পর থেকে আজ ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৫ দিন সময় হাতে পাই।

"হিউম্যানিটি ফর রোহিঙ্গা বাংলাদেশ" নামে আমরা এক ঝাঁক কাফেলা দিবা রাত্রি রাজধানী ঢাকা ২ বার সহ ১০ টি জেলা সফর করি। আমার মুরব্বী হিসেবে ঐতিহ্যবাহী রেংগা মাদরাসার মুহতামীম মাওলানা মুহিউল ইসলাম বুরহান সাহেবকে প্রধান সমন্বয়কারী ও মদন মোহন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ লে. কর্নেল আতাউর রহমান পীর স্যারকে সংগঠনের চিফ এডভাইজার ও রোড মার্চ বাস্তবায়ন কমিটির সিলেট সিটির কনভেনার হিসেবে কাজ চালিয়ে যাই।

যেহেতু ইস্যুটি মানবিক। আমাদের গণ সংযোগ টিম এই ১৫ দিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সভা সমিতি, মত বিনিময়, একান্ত বৈঠক সহ সহস্রাধিক মানুষের সাথে পরামর্শে মিলিত হই।

বিশাল এই কাজে সময়ের স্বল্পতাহেতু সকলের কাছে যেতে পারিনি, পরামর্শ নিতে পারিনি। তাই বাহক হিসেবে সিলেটে ২ টি সাংবাদিক সম্মেলন, ২ টি মত বিনিময় ও রাজধানীতে ১ টি সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে সকলের কাছে মেসেজটুকু পৌঁছানোর চেষ্টা করি।

জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পেয়ে সংবাদ সম্মেলনে আশা প্রকাশ করেছিলাম ২ শতাধিক অথবা তার চেয়েও বেশী গাড়ী বহর আমাদের রোড মার্চে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বিগত ২ টি লংমার্চ ও রোড মার্চে প্রত্যেকেই নিজ এলাকা থেকে গাড়ী ব্যবস্থা করে আসেন। এবারও সবার কাছে একই মেসেজ দেয়া আছে। আমরা গাড়ী ভাড়া করবো, এরকম কথা কোথাও বা সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়নি। তাহলে ২ শত গাড়ীর ভাড়া হিসেব করে এরকম কোটি টাকার স্বপ্ন জাতিকে যে গিলাবার ব্যর্থ চেষ্টা করলেন।

আমাদের এই কর্মসূচীর সফলতা দেখে কতিপয় হিংসুটে প্রকৃতির মানুষ বিষোদগার করতে গিয়ে বলেছেন-- ২ শতাধিক গাড়ীর কথা বলে আমরা ফান্ডিং করেছি অথবা ত্রাণের কথা বলে মোটা অংকের চাঁদা সংগ্রহ করেছি। আরে ভাই, আমরা প্রশাসনের কাছে অনুমতির জন্য যে দরখাস্ত করেছি তাতে রোড মার্চের কথাই বলা হয়েছে, ত্রাণ সম্পর্কিত একটি শব্দও লিখা হয়নি। চ্যালেঞ্জ দিলাম, সাংবাদিক হিসেবে আপনি প্রমাণ করুন। ত্রাণের অযৌক্তিক কথা ম্যানশন করে বলেছেন-- কোটি টাকা মানুষে দিয়েছে, আর এগুলোকে হজম করার জন্যই রোড মার্চের নাম নিয়ে টাকা আত্মসাৎ। আপনার বক্তব্য যে নির্জলা মিথ্যাচার, মিডিয়া লাইনের সবাই এ দু' সপ্তাহ থেকে দেখছেন। কারণ রোড মার্চের বিরুদ্ধে যারা নিজস্ব মতামত দিয়েছেন, তারা বলেছিলেন-- রোড মার্চে যে খরচ হবে, এই টাকাটা ত্রাণে দিলে উপকার হতো। আমরা যদি ত্রাণ দিতে হতো, তাহলেনা চাঁদার বিষয়টি আসতো।

১৫ দিনে ১০ টি জেলা সফর করতে গিয়ে যেখানে ঘুমোবার ফুরসতই পেলামনা। সেখানে চাঁদা করার সময়টুকু কোথায়। ফেইসবুকে অথবা মিডিয়ায় দেখে দেশ ও প্রবাসের যেসব সুধী, বন্ধুবান্ধব ও দলীয় নেতাকর্মীরা যে সহযোগিতা করেছেন, এটাই আমাদের কালেকশন।

আমরা ত্রাণের জন্য পারমিশন চাইবো কেন? এখন প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ স্ব- উদ্যোগে যাচ্ছে, সরকারও কোন বাধার সৃষ্টি করছেনা। আমরা ত্রাণ দিলেনা কালেকশনের প্রশ্ন। আমরা রোডমার্চের পারমিশন চেয়েছি। আমরা জেলায় জেলায় সফর করে মানুষকে রোড মার্চ কাফেলায় স্ব- উদ্যোগে গাড়ী নিয়ে হাজির হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছি। আমরা নিজে গাড়ী ভাড়া করে মানুষকে নিয়ে যাবার সেই অঢেল সম্পদ হিউম্যানিটি ফর রোহিঙ্গা অথবা আমাদের নেই।

যেকারণে স্বেচ্ছায় যারা সাহায্য করেছেন, তাদেরকে মোবারকবাদ।

বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য হিউম্যানিটি ফর রোহিঙ্গার রোড মার্চ ঘোষণার পর থেকে ১৫ দিনে অর্থাৎ আজকের রোড মার্চ পর্যন্ত মোট হিসেবটি ওদের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিতে চ্যালেঞ্জ হিসেবে উপস্থাপন করলাম।

আমাদের পোস্টার, লিফলেট, বেনার, সাংবাদিক সম্মেলন ৩ টি, গণ সংযোগ এবং আজকের খরচ সহ মোট টাকা ৩ লক্ষ ৫২ হাজার ২৫৩। মোট আয় ৩ লক্ষ ১৪ হাজার ৭ টাকা। ঘাটতি ৩৮ হাজার ২৪৬ টাকা।

শাহীনূর পাশা চৌধুরী আরও লিখেন, এই ৩ লক্ষ ১৪ হাজার ৭ টাকার উপরে কোন ব্যক্তি যদি বলেন, এক টাকাও চাঁদা দিয়েছেন, অথবা প্রমাণ করতে পারেন, তাদের প্রতি ওপেন চ্যালেঞ্জ ছুড়তে বাধ্য হলাম। ঘাটতি ৩৮ হাজার ২৪৬ আমার পকেট থেকে খরচ করেছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত