আরিফুল ইসলাম রনি

১০ অক্টোবর, ২০১৭ ০১:৩২

অবারিত ক্ষমতায় লাগামহীন কোচ হাথুরুসিংহে

চন্দিকা হাথুরুসিংহে দলকে রেজাল্ট এনে দিয়েছেন। খুব ভালো কথা। গ্রিনিজ, হোয়াটমোর, সিডন্সরা এনে দেননি? হাথুরুসিংহেই কেন সেরা!

দলের সাফল্যে কোচের অবদান নিয়ে জন বুকানন খুব ভালো উদাহরণ হতে পারেন। দু-দুটি বিশ্বকাপ জয়ী, চার অ্যাশেজের তিনটিতেই জয়ী, সিরিজের পর সিরিজ জয়ী কোচ। পরিসংখ্যানে অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সেরা কোচ। আসলেই সেরা?

শেন ওয়ার্নকে বলুন, ‘বুকানন সেরা’, হাতের কাছে যা থাকবে, সেটাই ছুড়ে মারতে পারেন ওয়ার্ন। সেই সময়ও দ্বন্দ্ব ছিল প্রকাশ্য, পরেও বুকাননকে জাতের কোচ মনে করেননি ওয়ার্ন। মেয়াদ শেষের পর স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল সরাসরিই বলেছিলেন, “স্বস্তি পাচ্ছি।” কোচকে খুব বেশি কৃতিত্ব দেন না ওই দলের কেউই। স্টিভ ওয়াহ ও রিকি পন্টিংয়ের প্রায় সর্বজয়ী দলে এমন সব ক্রিকেটার ছিল, দলের ব্যর্থ হওয়ার কারণ নেই।

“সেরা কোচ” বললে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট মহলে ববি সিম্পসন, জিওফ মার্শদের নাম আসে। বুকানন মোটেও নন। বুকানন পরে কলকাতা নাইট রাইডার্সের কোচ হয়েছেন, স্বল্প মেয়াদে ইংল্যান্ডের উপদেষ্টা ছিলেন, নিউ জিল্যান্ডের ক্রিকেট ডিরেক্টর হয়েছিলেন। সব জায়গায় ব্যর্থ হয়ে বিতাড়িত। কারণ, অস্ট্রেলিয়ার মত তারা ভরা আকাশ তো পাননি!

বাংলাদেশের সাফল্যের কথা বলছিলাম। গর্ডন গ্রিনিজের সময়ে আমরা বিশ্বকাপে গিয়েছি, আইসিসি ট্রফি জিতেছি। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে প্রত্যাশিত জয়টি পেয়েছি। যেভাবে বললাম, “প্রত্যাশিত জয়”, স্কটিশ কন্ডিশনে কাজটি মোটেও ততটা সহজ ছিল না। মনে আছে, চেস্টার-লি-স্ট্রিটে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পুরো ৫০ ওভার খেলার পর অ্যালান বোর্ডার বলেছিলেন, “বাংলাদেশ মিরাকল ঘটিয়েছে।”

এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই অবিস্মরণীয় জয়। ম্যাচের আগে বিতর্কিত ভাবে বরখাস্ত হয়েছিলেন গ্রিনিজ। তবে দলটা তো তারই গড়া ছিল, ক্রিকেটারদের কাছে গ্রিনিজের জায়গাটি ওই ম্যাচে ও পরেও সবসময় ছিলই। তো সেই সময়টি বিবেচনায় এবং দলের শক্তি-সামর্থ্য বিবেচনায় গ্রিনিজ দলকে রেজাল্ট এনে দেননি?

ট্রেভর চ্যাপেল, আলি জিয়া-মহসিন কামালদের হাতে পড়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের যখন প্রাণ যায় যায় অবস্থা, ডেভ হোয়াটমোর এসেছিলেন অক্সিজেন হয়ে। ২০০৩ পাকিস্তান সিরিজের কথা মনে আছে? কী অসাধারণ পারফরম্যান্স ছিল দলের! পরিসংখ্যান বলবে, ৩-০তে হার। আসলে সেই সময়ের বাস্তবতা বিবেচনায় আমাদের সেরা সিরিজগুলোর একটি।

হোয়াটমোরের সময়টায় বাংলাদেশ জিততে শুরু করেছে। হতে পারে সেটি ক্ষয়িষ্ণু জিম্বাবুয়ে, কেনিয়ার বিপক্ষে। কিন্তু আগে সেই দলগুলিকেও নিয়মিত হারাতে পারত না বাংলাদেশ। হোয়াটমোরের সময়ে জিম্বাবুয়ে, কেনিয়া, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ডদের দাপটে হারায় বাংলাদেশ। জয়ের অভ্যাস গড়ে ওঠে। যেটির সুফল মেলে ২০০৭ বিশ্বকাপে।

২০০৭ বিশ্বকাপে কি এখনকার মত ৫ জন সিনিয়র ক্রিকেটার ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ছিল? মুস্তাফিজের মতো আবির্ভাবেই নিজের সহজাত ক্ষমতায় ম্যাচ জেতানো কেউ ছিল? কিন্তু বাংলাদেশ শক্তিশালী ভারতকে হারিয়েছে, সেই সময়ে এক নম্বরে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছে। সাফল্য নয়?

আইসিএলে এক গাদা ক্রিকেটারকে হারানোর পর প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশ নিউ জিলান্ডকে হারিয়েছে। কার সময়ে? জেমি সিডন্স। এরপর ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে উঠে শিরোপা প্রায় জিতেই যাচ্ছিলাম আমরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দ্বিতীয় সারির দলের বিপক্ষে জিততেই হতো। বাংলাদেশ টেস্ট-ওয়ানডে দুই সিরিজেই সব ম্যাচ জিতেছে। ওই সময়ের দল বিবেচনায় খারাপ নয়! প্রথমবার ইংল্যান্ডকে হারানোর স্বাদ পেয়েছি, সেটিও ইংল্যান্ডে। আর নিউ জিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ, কে ভাবতে পেরেছিল! সিডন্সের সময়ই। ২০১১ বিশ্বকাপে ৫৮ ও ৭৮ বিপর্যয়ের কথাই বলে সবাই। আমরা কিন্তু ইংল্যান্ডকেও হারিয়েছিলাম!

আমরা স্টুয়ার্ট ল-র কথা বলি না। অল্প কদিন ছিলেন দায়িত্বে। ক্রিকেটারদের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন নিজেদের এক্সপ্রেস করার। দলের সবাইকে এক চোখে দেখতেন। মানসিকতা বদলের যে কথাটা এখন বলা হয়, সেটির শুরু ল-র সময়েই। যেটির ফল ছিল এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠা। ল রেজাল্ট আনেননি?

এমনকি শেন জার্গেনসেন। গেইল-পোলার্ড-নারাইনদের ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বাংলাদেশ ২০১২ সালে সিরিজ হারাবে, কেউ ভাবতে পেরেছিল? বাংলাদেশ পেরেছিল, কোচ ছিলেন জার্গেনসেন। তার সময়ে নিউ জিল্যান্ডকে দ্বিতীয়বার হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি টেস্ট ড্র করে দাপটে। রেজাল্ট আসেনি তখন?

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের সময় জার্গেনসেন ছিলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান কোচ। নিশ্চয়ই এমন কোনও জাদুমন্ত্র করেননি যে দল রাতারাতি সিরিজ জিতে গেল! দলটা প্রসেসেই ছিল। কিন্তু এখনকার মত করে জার্গেনসেন দাবী করতে পারেন, তিনি রেজাল্ট এনে দিয়েছেন!

তো রেজাল্ট হাথু যেমন এনেছেন, পূর্বসূরি অনেকেই এনে দিয়েছেন। দলের শক্তি ও সময়ের বাস্তবতা বিবেচনায় নিলে, দলের সাফল্যে কোচের অবদানের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত হোয়াটমোরের চেয়ে কাউকে এগিয়ে রাখতে পারি না। হাথু রেজাল্ট এনে দিয়েছেন বলে তার সাত খুন মাফ করার যুক্তি দেখি না।

হাথুর সৌভাগ্য, সময়টা ভালো পেয়েছেন। যখন তার দলে ৫ জন সিনিয়র ক্রিকেটার, যারা অভিজ্ঞ ও ম্যাচ উইনার। এই দল আর এই সময়টা গ্রিনিজ বা সিডন্স পেলে? কিংবা হোয়াটমোর পেলে? হাথুর পুরো সময়টাতেই দলের সাফল্যে এই সিনিয়রদের অবদানই সবচেয়ে বেশি। তাদের কেউ হাথুর গড়া নয়। তামিম-মুশি-রিয়াদ-সাকিব, সবাই এক বাক্যে স্বীকার করেন, তাদের গড়ে দিয়েছেন সিডন্স। তারাই বলেন, “সিডন্স যে কাজ করে গেছেন, সেটা এখন ফল দিচ্ছে, সেটির ফল পাচ্ছেন হাথু।” তামিমদের গড়ে তোলা নিয়ে একই কথা সবসময় বলেন মাশরাফিও।

দলটা ক্রমশ উন্নতির পথে ছিল, দরকার ছিল একজন যোগ্য নেতা। যে নেতা হয়ে এসেছেন মাশরাফি। হাথুর সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য, তার ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি।

সিডন্সের সময় ৫৮ রানের কথা বলা হয়, হাথুর সময় দ্বিতীয় সারির ভারত দলের সঙ্গে ৫৮ রানের কথা বলা হয় না। ভারত সিরিজের পর সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরও গেছে বাজে। একটু মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন, এই যে “রেজাল্ট পাওয়া”, সেটির শুরু হাথু কোচ হওয়ার পর নয়, মাশরাফি অধিনায়ক হওয়ার পর থেকে। মাশরাফি দিনের পর দিন ছাড় দিয়ে, দলের ভালোর জন্য অনেক সময় অপমান সয়ে, অনেক সময় নিজের ব্যক্তিত্ব দিয়ে কৌশলে নিজের দাবীটা আদায় করেছেন। অন্য কেউ, যে কেউ অধিনায়ক হলে কোচের সঙ্গে দ্বন্দ্বে দলের বারোটা বাজত বেশ আগেই।

কোচের কোনও অবদান নেই, তা অবশ্যই নয়। সবসময়ই বলে এসেছি ট্যাকটিক্যালি হাথু দারুণ কোচ। প্রতিপক্ষকে রিড করা এবং সে অনুযায়ী প্ল্যান করায় যে আধুনিক পেশাদারিত্ব, সেটা বাংলাদেশ দলে সত্যিকার অর্থে এনেছেন তিনিই। দেশের মাটিতে টার্নিং উইকেট বানিয়ে আমরা টেস্ট জিততে পারি, সেটা ভাবা ও করে দেখানোর সাহস দেখিয়েছেন তিনি। ডিসিপ্লিনে জোর দিয়েছেন। প্রথম এক দেড়-বছরে ছেলেদের দারুণ সাপোর্ট দিয়েছেন, নিজেদের এক্সপ্রেস করার দারুণ স্বাধীনতা দিয়েছেন সেই সময়টায়।

কোচের বদলানোর শুরু যখন অতি ক্ষমতা পাওয়ার শুরু। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে যেটির মাত্রা ছাড়ানো শুরু। পাড়ার ক্রিকেটের মতো বাইরে থেকে বোলিং চেঞ্জ, ফিল্ড প্লেসিং নিয়ে খবরদারী করার সেই শুরু।

সিনিয়র ক্রিকেটারদের নিয়ে তার মাথাব্যথা দায়িত্ব শুরুর কিছুদিন পর থেকেই। হয়ত দল একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতেই। সাকিবকে নিষিদ্ধ করেই শুরুতেই সেই বার্তা দিতে চেয়েছিলেন সিনিয়রদের। মুশফিকের সঙ্গে তার ঝামেলা শুরু ২০১৪ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকেই।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, সেই ২০১৫ সালেই মুশিকে বাদ দিতে চেয়েছিলেন কোচ। মাশরাফির জেদের কারণে পারেননি। মাশরাফি বলেছিলেন, “অনেক কষ্টে গোছানো সংসার আমি এভাবে ধ্বংস করতে দেব না।”

অনেকেই জানেন না, স্বপ্নের মত একটি বিশ্বকাপ কাটানো পরও ২০১৫ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মাহমুদউল্লাহকে বাদ দিয়েছিলেন কোচ। যেহেতু খেলতে পারছেন না, রিয়াদ মাঠে এসেছিলেন রোজা রেখে। শেষ মুহূর্তে অনেক কষ্টে, শেষ আরেকটি চান্স দেওয়ার কথা বলে মাশরাফি কোচকে রাজী করান। রিয়াদ শেষ সময়ে দলে ঢুকে সম্ভবত আর রোজা ভাঙেননি। রোজা রেখে করেছিলেন ফিফটি।

এরপর এবার শ্রীলঙ্কা সফরেও ওয়ানডে থেকে রিয়াদকে বাদ দেন কোচ। যথারীতি মাশরাফি আবার গো ধরেন যে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে রিয়াদকে হারাতে চান না। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ম্যাচ জেতানা সেঞ্চুরি করে রিয়াদ প্রতিদান দেন। কোচের চাওয়া পূরণ করে রিয়াদকে বাদ দিলে সেমিফাইনাল খেলা হতো না আমাদের। অথচ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল খেলা কিন্তু কোচের অন্যতম বড় ‘সাফল্য!’

মাশরাফিকে তো টি-টোয়েন্টি ছাড়তে বাধ্যই করলেন। সেটা নিয়ে ভেতরে যে কত কাহিনী হয়ে গেছে! এবং এখনও চলছে। আগেই বলেছি, অনেক অপমান সয়ে, অনেক ছাড় ও সায় দিয়ে, অনেক কৌশলে দলটাকে ধরে রাখতে হচ্ছে মাশরাফিকে।

৫ সিনিয়রের মধ্যে কেবল তামিমই হাথুর ছোবল থেকে বেশির ভাগ সময় বেঁচে থাকতে পেরেছেন। তবে তাকে টি-টোয়েন্টি থেকে বাদ দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন গত কয়েক মাস ধরে...

হাথুকে নিয়ে প্রচলিত আরেকটা মিথ হচ্ছে, তার সিদ্ধান্ত নাকি কাজে লেগে যায়। আজব কথা! হাথুর হাত ধরে বা তার চাওয়ায় এসে কজন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন দলে? বরং উল্টো হয়েছে বেশি। জুবায়ের লিখনকে নিয়েছেন। অনেক আশা দেখিয়েছেন। একটু বাজে করতেই ছুঁড়ে ফেলেছেন প্রকাশ্যে এই বলে যে, “সে চলে না।” ছেলেটার আত্মবিশ্বাস কোথায় গিয়ে ঠেকে?

তানবীর হায়দারকে নিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ভাবনা মাথায় রেখে। এক সফরের পর ছুঁড়ে ফেলেছেন। সম্ভাবনাময় ব্যাটিং অলরাউন্ডার শুভাগত হোমকে জোর করে দেশের সেরা অফ স্পিনার ঘোষণা দিয়ে বোলার হিসেবে একের পর এক টেস্ট খেলিয়ে ছেলেটার ক্যারিয়ারের বারোটা বাজিয়েছেন।

হাথুর কারণে শেষ হওয়ার অন্তত ২ বছর আগে আব্দুর রাজ্জাকের ক্যারিয়ার শেষ করে দেওয়া হয়েছে। অথচ রাজ্জাকের বিকল্প, ওয়ানডে দলে সাকিবের সঙ্গী একজন থিতু স্পিনার আমরা এখনও পাইনি। “এখনই টেস্ট খেলিয়ে তাসকিনের ক্যারিয়ার ধ্বংস করতে চাই না” বলার ২ মাস পরই তাসকিনকে টেস্টে নামিয়ে দিয়েছেন।

সৌম্য-সাব্বিরদের মতো প্রতিভাবানরা কেন জায়গা থিতু করতে পারছেন না? কোচ হিসেবে তারই তো দায়িত্ব সমস্যা সমাধান করা! তার আমলের আগে মুমিনুলের গড় ছিল ৭৫। সেই মুমিনুল যদি বিবর্ণ হয়ে পড়েন, কোচ কেন ঠিক করতে পারছেন না? সৌম্য-মুমিনুলরা দেখিয়েছেন তাদের সামর্থ্য আছে। কিন্তু যদি বিবর্ণ হয়ে পড়েন, তাহলে পথে ফেরানোর দায়িত্ব কার? কোচেরই তো কাজ সেটি! কোচের কাজই হলো প্রতিভাবানদের ঘষেমেজে তৈরি করা। হাথু কতটা বা কজনকে তৈরি করতে পেরেছেন ৩ বছরের বেশি সময়ে?

বিশ্বের সব কোচ নিজের ক্রিকেটারের দুর্বলতা আড়ালে ঠিক করতে কাজ করেন। আমাদের কোচ উল্টো ঘোষণা দেন, "মুমিনুল শর্ট বলে দুর্বল" বা "অফ স্পিনে দুর্বল।" এই দুর্বলতা যদি থাকে, শোধরানোর দায়িত্ব কার?কোচকে সরাসরি প্রশ্ন করেছিলাম। কোচ বলেছেন দায়িত্ব তার নয়!

অনেকেই মুস্তাফিজকে খেলানোর সিদ্ধান্তের কথা বলেন। কী হাস্যকর! মুস্তাকে ভারতের বিপক্ষে খেলানোর জন্য টসের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত যুদ্ধ করেছেন মাশরাফি। কোচ কিছুতেই চার পেসার খেলাবেন না। শেষে মাশরাফি এই বলে রাজী করাতে পেরেছিলেন যে, “মুস্তাফিজ ভালো না করলে দায় আমার…।” অথচ সেটা নাকি কোচের সিদ্ধান্ত! আর হ্যাঁ, মুস্তা কোনও হাথু বা স্ট্রিকের তৈরি নয়। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলে, অনূর্ধ্ব-১৯ দল হয়ে, “এ” দলের হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে, একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এসেছেন। তাকে দলে নিয়েছিল ফারুক ভাইয়ের নেতৃত্বাধীন সেই সময়ের নির্বাচক কমিটি।

দলের সিনিয়র ক্রিকেটাররা কয়েক দফায় কোচের এসব বাড়াবাড়ির কথা বোর্ড প্রধানকে বলেছেন। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় প্রথমবার, গত শ্রীলঙ্কা সফরে, এবার অস্ট্রেলিয়া সিরিজের সময়। এই তিনটি বারের কথা আমি জানি। আরও বেশিও হতে পারে। প্রতিবারই বোর্ড প্রধান আশ্বাস দিয়েছেন। কোনও কাজ হয়নি।

কোচ জানেন, তার ক্ষমতা অবারিত। স্বাধীনতার শেষ নেই। তার কারণে দেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক, একজন এমপি ও বোর্ড পরিচালককে ক্রিকেট অপারেশন্স থেকে সরানো হয়েছিল। এরপর যখন কোচের চাওয়া মেনে তাকে নির্বাচক কমিটিতেও রাখা হয়, তখন কোচ বুঝে যান, তিনি যা ইচ্ছা করতে পারেন। আরও লাগামহীন হয়েছেন এরপর।

হাথু সম্ভবত ক্রিকেট ইতিহাসের একমাত্র কোচ ও একমাত্র নির্বাচক, যিনি একটাও ঘরোয়া ম্যাচ দেখেননি। একটাও না! বোর্ডই তাকে এই স্বাধীনতা দিয়েছে। শর্তেই আছে, ঘরোয়া ক্রিকেট না দেখলেও চলবে। সবচেয়ে প্রভাবশালী নির্বাচক, মোটামুটি একক সিদ্ধান্ত যার, তিনিই ঘরোয়া ক্রিকেট কখনো দেখেন না। শাহরিয়ার নাফিস, নাঈমদের দলে নেবেন কী, তাদের খেলাই তো দেখেননি কোচ!

সর্বময় ক্ষমতা পেলে আরও বড় বড়দের মাথা ঠিক থাকে না। তিনি তো হাথু! তাকে নিয়ন্ত্রণ করার সময় অনেক আগেই হয়েছে। তবে সময় শেষ হয়নি। এখনও সম্ভব, যদি বোর্ড চায়! বোর্ড কেন করছে না, সেটা এক রহস্য।

যতবার হাথুর সমালোচনা করি, একবারও বলিনি তাকে সরিয়ে দিতে। সবসময়ই বলেছি লাগাম পরাতে। কাউকে বিদায় করা সহজ। কিন্তু বিদায় করে দেওয়ার চেয়ে সবসময়ই ভালো সমাধান হলো তার ভালো দিকটা সর্বোচ্চ কাজে লাগানো, খারাপটা নিয়ন্ত্রণ করা।

নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বিপদ। ক্রিকেটারদের এনে দেওয়া ফলকে ঢাল বানিয়ে সিস্টেম যেভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছেন, ভবিষ্যতে সেটার ফল ভালো হওয়ার কোনও কারণ নেই!

  • আরিফুল ইসলাম রনি: সাংবাদিক।
  • ফেসবুক থেকে

আপনার মন্তব্য

আলোচিত