সবাক

০৪ নভেম্বর, ২০১৭ ০২:১৫

‘সুবোধ’: ভুল সংবাদের দায় মিডিয়ার, পাঠকের নয়

যুগান্তরের ভুল রিপোর্ট দেখে যারা সুবোধ আর্টিস্টকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে প্রতিবাদ করেছেন এবং সরকারের সমালোচনা করেছেন, তারা কোন ভুল বা অন্যায় কিংবা হাস্যকর কিছু করেননি।

যুগান্তর দেশের প্রথম সারির দৈনিক পত্রিকা। দেশের প্রতিটি জেলায় তাদের প্রতিনিধি আছে। ক্ষেত্র বিশেষে উপজেলায়ও আছে। একটি দৈনিক পত্রিকার যতগুলো বিভাগ থাকা প্রয়োজন, তাদের আছে। সকল বিটে তাদের স্টাফ রিপোর্টার আছে। তারপরও সুবোধের মত একটি আলোচিত বিষয়ে কেন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে না জেনে সংবাদ প্রকাশ করলো, এই দায় সম্পূর্ণরূপে দৈনিক যুগান্তরের। পাঠকের কোন দায় নেই।

পাঠক মিডিয়া থেকে এসব খবর জানবে। জেনে মতামত জানাবে। মিডিয়া যদি ভুল সংবাদ পরিবেশন করে, দায় মিডিয়ার। পাঠক কেন একটি প্রথম সারির জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদন আবার ভেরিফাই করবে? কিভাবে করবে? সুবোধ আর্টিস্টকে ফোন দিয়ে? তার নাম্বার কোথায় পাবে? থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসারকে ফোন দিয়ে? এটা কি বাস্তবসম্মত? হাজার হাজার পাঠক থানার নাম্বারে কল দিতে থাকবে?

একটি প্রথম সারির দৈনিক পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত সংবাদ কেন বাকি সব অনলাইন চেক করার পর বিশ্বাস করতে হবে? কেন? আজ যুগান্তর পত্রিকার ভুল নিউজ কালের কণ্ঠ বা প্রথম আলো দিয়ে ভেরিফাই করলাম, পরদিন কালের কণ্ঠ বা প্রথম আলোর ভুল নিউজ যুগান্তর দিয়ে ভেরিফাই করবো? এসব চিন্তাভাবনা কোথা থেকে আসে, কিভাবে আসে!

এই দেশে কেন আমরা একটি জাতীয় দৈনিককে বিশ্বাস করতে পারি না, কেন একটি প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বাস করতে পারি না, কেন প্রধান বিচারপতির বিবৃতি বিশ্বাস করতে পারি না, কেন একজন মন্ত্রীর কথা বিশ্বাস করতে পারি না? কেন একজন উপাচার্যের কথা বিশ্বাস করতে পারি না?

কারা এসব প্রতিষ্ঠান ও সাংবিধানিক পদ নিয়ন্ত্রণ করে? এই দায়িত্ব কার? আমি অবশ্যই একটি জাতীয় দৈনিককে বিশ্বাস করতে চাই। রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি, উপাচার্য... সবাইকে বিশ্বাস করতে চাই। এত এত মানুষ, এত এত প্রতিষ্ঠান কেন মিথ্যা বলবে? কেন মিথ্যা তথ্য দিবে?

দৈনিক যুগান্তরের নিউজ পড়ে সুবোধ আর্টিস্টকে গ্রেপ্তারে প্রতিবাদকারীদের নিয়ে যারা হাসি তামাশা করছে, তাদের অনেকেই সময়ের কণ্ঠস্বর, রেডিও মুন্না, পূর্বপশ্চিমবিডি, বাংলাদেশ ইনসাইডার, এটাওটাসেটা২৪.কমের মত প্রোপাগান্ডা মিডিয়ার নিউজ শেয়ার দেয়। তখনই শেয়ার দেয় যখন নিউজগুলো তাদের পক্ষে যায়। পক্ষের নিউজ মিথ্যা হলেও ভালো - তারা এই নীতিতে বিশ্বাসী।

সুবোধ আর্টিস্টকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মর্মে যুগান্তর পত্রিকার ভুল রিপোর্টটি পড়ে প্রশাসন ও সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার একটাই অর্থ আছে। সেটা হচ্ছে "সুবোধ আর্টিস্টকে গ্রেপ্তার করলে এসব মানুষ অবশ্যই প্রতিবাদ করবে। সুবোধ আর্টিস্টকে গ্রেপ্তার কিংবা কোন প্রকার হয়রানি মেনে নেয়া হবে না।" এটা ছাড়া আর কোন অর্থ নেই। এবং এই অর্থটি নিঃসন্দেহে ভালো। ভীষণ সৎ উদ্দেশ্য।

যেসব মানুষ প্রতিবাদকারীদের নিয়ে হাসাহাসি করছে, আসলে সরকারের সমালোচনা পড়ে তাদের আঁতে ঘা লেগেছে। সহ্য করতে পারেনি। সমালোচনা দেখে গা দিয়ে চিকন ঘাম বেরিয়ে গেছে। যখনই জানলো নিউজটি ভুল ছিলো, তখন একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে ঘাম মুছে ফেসবুকে ঢুকেছে। আর বের হওয়ার নাম নেই। টানা কয়দিন ফেসবুকে পড়ে থাকে, কে জানে!

যুগান্তরের ভুল নিউজ দিয়ে গা ভরা ক্ষত ঢাকার এমন সুযোগ আর নাও আসতে পারে।

  • সবাক: ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট।

[ফেসবুক থেকে]

আপনার মন্তব্য

আলোচিত