সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক

১২ জানুয়ারি, ২০১৮ ০১:০৮

যশোর রোডের গাছগুলো কাটবেন না

ছবি: সংগ্রহ

মহান মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতি জড়িয়ে থাকা যশোর রোডের শতবর্ষী গাছ কাটার সিদ্ধান্তের সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। গাছগুলো রক্ষার দাবি জানানো হচ্ছে, একই সঙ্গে গাছ রক্ষায় রাস্তায় নামার আহবানও জানানো হয়েছে।

মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গের সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড কবিতায় ওঠে আসে স্মৃতিবিজড়িত ওই রাস্তার কথা, যে রাস্তা ধরে একাত্তরে লক্ষ লক্ষ লোক প্রাণ বাঁচাতে কলকাতার পথে দেশত্যাগ করেছিল। গিন্সবার্গের ওই কবিতায় কলকাতার বনগাঁ শরণার্থী ক্যাম্পের অসহায় মানুষের কথা ওঠে এসেছিল; ওঠে এসেছিল যশোর রোডের কথা, জাগ্রত হয়েছিল বিশ্ববিবেক।

যশোর রোডের গাছগুলো কাটার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ফেসবুকে অনেকেই বলছেন একাত্তরের কথা; বলছেন পরিবেশের কথা।  

রবিন আহসান লিখেন, যশোর রোডের গাছগুলোর জন্য আসুন আমরা একদিন ঢাকার রোডে দাঁড়াই! গাছ বাঁচাই! জীবন বাঁচাই।

রেজা ঘটক লিখেন, গাছ কাটা হলে শোকসভা হবে!
হায়রে ২ হাজার ৩১২টি গাছ!
হায়রে যশোর রোড!
গাছ কেটে এমন ৪ লেনের হাইওয়ে চাই না!

লীনা পারভীন লিখেন, কেবল সুন্দরবনই কী আমাদের প্রকৃতি? যশোর রোডের যে শতশত গাছ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেখানে কী প্রকৃতি নেই? আমাদের পরিবেশবাদী বন্ধুদের গান, মিছিল, অবরোধ এখন বন্ধ কেন? প্রোফাইল পিকে "সেইভ যশোর রোড" আসতেই পারে। হ্যাশট্যাগেও দেয়া যেতে পারে।

আমি যে কোন উন্নয়নের পক্ষে কিন্তু বিকল্প থাকা অবস্থায় কোনভাবেই কোন প্রাকৃতিক সম্পদের বিনাশের বিপক্ষে। যে কোন ঐতিহাসিক স্থাপনা নষ্টের বিরুদ্ধে। তাই অতগুলো গাছ কেটে ফেলার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমার অবস্থান।

আমরা সবাই সোচ্চার হলে নিশ্চয়ই সরকার বিষয়টি বিবেচনায় আনবেন।

প্রীতি ওয়ারেসা লিখেন, প্রায় পঁচিশ-ত্রিশ বছর আগে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হুমায়ূন আহমেদের লেখা একটি নাটক দেখেছিলাম। সেখানে গাছ কেটে রাস্তা প্রশস্ত করার বিরুদ্ধে হয় অভিনেতা আলী যাকের কিংবা আসাদুজ্জামান নুর একা রাস্তায় বসে অনশন করেছিলেন। দাবি একটাই গাছ কাটা যাবেনা, রাস্তার দুইধারে সারি সারি গাছ বাঁচিয়ে রেখে তবেই রাস্তা প্রশস্ত করা হোক।

পুরো নাটকের এই বিষয়টি আমাকে এতটা বিদ্ধ করেছিল যে একজন ক্ষুদে দর্শক হয়েও আমি প্রচণ্ডভাবে গাছগুলোর অস্তিত্বের পক্ষে সেদিন সেই আন্দোলনের সাথে মানসিকভাবে সামিল ছিলাম। নিছক একটা নাটক সেদিন আমাকে শিখিয়েছিল গাছের প্রতি মমত্ববোধ, ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞ থাকার শিক্ষা।

শেষ পর্যন্ত প্রশাসন গাছ কাটার সিদ্ধান্ত বাতিল করেছিলেন। গাছ বাঁচিয়েই পরবর্তীতে রাস্তা প্রশস্ত হয়েছিল। সেটা একটা নাটক ছিল।

যশোর রোডের দুই হাজার তিনশ বারটা গাছ, প্রতিটা গাছের সাথে জড়িয়ে বাংলাদেশ জন্মের কত শত ইতিহাস! সবকিছু মুছে দেবার পরিকল্পনাও একটা নাটক তবে নিরেট বুদ্ধির খেঁকশিয়াল কর্তৃক রচিত।

সজল আনন্দ লিখেন, আমি কখনো যাইনি, তাই দেখিনি যশোর রোড। অ্যালেন গিন্সবার্গের' সৌজন্যে এই রাস্তা সেই কিশোর বয়স থেকে হৃদয়ে গাঁথা। মৌসুমি ভৌমিকের কণ্ঠে "যশোর রোড" কবিতাটি গান হিসাবে শুনেননি এমন বাঙালি খুব কম আছে।

গতকাল যশোর রোডস্থ শতবর্ষী গাছগুলো দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, যেকোনো ভ্রমণপ্রিয় মানুষের অন্যতম স্থান হবে যশোর রোড, এই গাছগুলোর জন্যই। আমি ছবি দেখে এতই মুগ্ধ হয়েছিলাম যে, গলা শুকিয়ে গেছিল। এই সৌন্দর্য দেখার আগে মরতেও চাই না। যেদিন দেশে যাবো, আমার প্রথম ভ্রমণ হবে যশোর রোড দেখা। আশা করি গাছগুলো রক্ষা পাবে উন্নয়ন নামের সেই অশুভ হাত থেকে।

উল্লেখ্য, যশোর থেকে কলকাতায় চলে যাওয়া 'যশোর রোড' খ্যাত যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দু'পাশে ১৮৪২ সালে যশোরের জমিদার কালিপ্রসাদ রায় চৌধুরী কয়েক হাজার রেইনট্রি গাছ রোপণ করেন। ১৭৫ বছর আগে লাগানো সেই রেইনট্রি গাছ বিশাল আকৃতিতে পরিণত হয়ে যুগ যুগ ধরে পথচারীদের মাঝে প্রশান্তির শীতল ছায়া বিলিয়ে যাচ্ছে।

প্রসিদ্ধ যশোর রোড চার লেনে উন্নীত করতে সম্প্রতি এগাছগুলো কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত