ইমতিয়াজ মাহমুদ

২২ মার্চ, ২০১৮ ২১:৫২

আপনারা কাঁকন বিবিকে কি সম্মান দিবেন?

আমি তো এই নারীটির জন্যে আপনাদের ঐসব গেজেট ফেজেট ঐসব কিছু চাই না। মেহেরবানী মনে করে আমার এই জননীটিকে বীর প্রতীক উপাধি দিয়েছেন, দিয়ে নিজে ধন্য হয়েছেন, জাতিকে ধন্য করেছেন।

মানুষ হিসাবেই বলেন, যোদ্ধা হিসাবেই বলেন আর নারী হিসাবেই বলেন- এই নারীটি ঐসব যে কতো বীর উত্তম আরও কীসব খেতাব নিয়ে যেসব লোক মিলিটারিতে জেনারেল হয়েছেন, রাজনীতিতে মন্ত্রী এমপি কিসব হয়েছেন আপনাদের সকলের চেয়ে সকলের সকলের চেয়ে- একদম জেনে বুঝে চিন্তা ভাবনা করেই বলছি- আপনাদের সকলের চেয়ে সাহসী, শৌর্যে বীর্যে অনেক অনেক অনেক অগ্রসর এবং অনন্যা।

আপনারা কাঁকন বিবিকে কি সম্মান দিবেন? সেই যোগ্যতা আছে আপনাদের? ভাল করে তাকান এই নারীর জীবনের দিকে। আগে জেনে নিন তিনি জীবনের কোন কোন ক্ষেত্রে লড়েছেন, বুঝতে চেষ্টা করুন কমবয়সী একটি বুকে কতোটুকু সাহস নিয়ে আপনাদের এই পৃথিবীর কত অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েছে।

আরে, যুদ্ধে যে রাইফেল নিয়ে লড়েছেন সে তো কেবল তাঁর জীবনের একটি লড়াই মাত্র- সবচেয়ে গৌরবের বটে, কিন্তু তিনি তি কেবল এই যুদ্ধটিই লড়েননি।

গতরাতে যে নারীটি মারা গেছে, কাঁকন বিবি বলে যাকে চেনেন সকলে, একজন পাহাড়ি নারী কাকাত হেনিনচিতা- তিনি জীবনের যে বৈরিতা আর সংকটের সাথে লড়েছেন তার সাথে নিজের জীবন মিলিয়ে দেখুন। দেখবেন আপনি কত ক্ষুদ্র কত নগণ্য এই আদিবাসী খাসিয়া নারীটির কাছে।

আপনারা কি খেতাব দেবেন তাঁকে- আপনাদের কি সেই যোগ্যতা আছে? আমি চাইনা আপনাদের গেজেট নোটিফিকেশন। আমি আমার মেয়েদেরকে ওর গল্প বলবো, আমাদের দেশের অসংখ্য তরুণদের কাছে ওর গল্প বলবো।

আমাদের ভবিষ্যৎ আমাদের ছেলেমেয়েরা আর ওদের ছেলেমেয়েরা একদিন আপনাকে ভুলে যাবে, আমাকে ভুলে যাবে- কিন্তু বুকে আঙ্গুল রেখে মাটিতে পা ঠুকে ঠিকই বলবে আমি কাঁকন বিবির দেশের সন্তান। বলবে সেই দেশে আমার জন্ম যেদেশের মাটিতে কাকাত হেনিনচিতা ঘুমিয়ে আছে।

দীর্ঘ গল্প বলবো না, কাঁদতে ইচ্ছে করে না- কান্না এই সাহসিকার জন্যে নয়। সংক্ষেপে বলি- কেবল নারী বলেই তাঁকে আমাদের দেশের আরও লক্ষ কোটি নারীর মতো গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছে। সেই সাথে রয়েছে খাসিয়া বলে সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য আর বৈষম্যে।

কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ার 'অপরাধে' তাঁকে নিগৃহীত হতে হয়েছে। ভালোবেসে নিজের ধর্ম গোত্র পিতৃ পিতামহের সংস্কৃতি ত্যাগ করে যে সংসার গড়েছিলেন সেখান থেকে বিতাড়িত হয়েছেন। আর যুদ্ধের সময় এই নারীকে কতোটুকু নির্যাতন করা হয়েছে সেটা জানুন- আপনার কলজে ছিঁড়ে যাবে।

সেই নির্যাতনের পর তিনি রাইফেল হাতে লড়েছেন। আমি অনুমান করতে চেষ্টা করি তিনি যখন গুলি ছুঁড়তেন প্রতিটা গুলিতে কতোটুকু দৃঢ়তা আর সাহসিকতা মিশে থাকতো। আপনি কি অনুমান করতে পারেন? সে যোগ্যতা কি আপনার আছে?

সার্থক জনম আমার, আমি সেই দেশে জন্মেছি যেখানে আমাদের এইসব বীরাঙ্গনারা জন্মেছেন। আমার মাটি আমার জননীরা

  • ইমতিয়াজ মাহমুদ, এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

(ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে প্রাপ্ত)

আপনার মন্তব্য

আলোচিত