সাব্বির খান

২৩ এপ্রিল, ২০১৮ ১৯:৫৮

তারেক রহমানের নাগরিকত্ব বিষয়ে যা জানা দরকার

তারেক রহমান কর্তৃক বাংলাদেশের নাগরিকত্ব অস্বীকৃতির ব্যাপারে বেশ আলোচনা হচ্ছে! আলোচনায় মোটামুটি সবাই যে একধরণের গোলক ধাঁধার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছেন। এই গোলক ধাঁধা কিছুটা আবেগপ্রসূত, কিছুটা অজ্ঞানতার কারণে। আজ সংবাদ মাধ্যমে দেখলাম, তারেক রহমান উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন বাংলাদেশের প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বরাবর। সবকিছুই একটু হাস্যকর বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে গিয়েছে।

প্রাসঙ্গিক বিষয় আলোচনার আগে আমাদের একটা টার্ম বুঝে নেয়া উচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে যুদ্ধ-উপদ্রুত ও যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাথে মানবিক আচরণের জন্য যে আন্তর্জাতিক আইন তৈরি হয়েছে, তার মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে একটি আন্তর্জাতিক আইন, যাকে একবাক্যে 'জেনেভা কনভেনশন' হিসেবে বলা হয়ে থাকে (https://goo.gl/mct4RP)।

রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নিঃসন্দেহে কোন "মামুর বাড়ির আবদার নয়", যে কোন বাড়িতে ঢুকে গিয়ে বললাম যে, “আইছি, আমারে থাকতে দেন”। জেনেভা কনভেনশনে স্পষ্ট উল্লেখ করা আছে কে বা কারা, কোন অবস্থায় একটা দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে পারেন এবং জেনেভা কনভেনশনের আওতাধীন রেফিউজি স্ট্যাটাস পেতে পারেন। জেনেভা কনভেনশন চুক্তিতে যেসব দেশ স্বাক্ষর করেছে, সেসব দেশের ক্ষেত্রেই শুধু এই ধরণের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রদান করা সম্ভব। সেজন্য স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আলাদা একটা বিভাগই থাকে যেখানে শুধু এই ধরণের কেসগুলো দেখার জন্য বিশেষজ্ঞ এবং আইনজীবীরা থাকেন।

কেউ যদি আন্তর্জাতিক স্বীকৃত জেনেভা কনভেনশনের অধীনে রিফিউজি স্ট্যাটাস পান, তাহলে তাঁকে এক ধরণের ভ্রমণ ডকুমেন্ট বা পাসপোর্ট দেয়া হয়, যা কোন বিশেষ দেশের পাসপোর্ট না। তারেক রহমান যেহেতু বৃটেনে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন, সেকারণে বৃটিশ সরকার তাঁকে একটা পাসপোর্ট দিয়েছে, যাকে জেনেভা কনভেনশন ১৯৫১ ইস্যুকৃত পাসপোর্ট বলে। তারেক রহমান যদি জেনেভা কনভেনশনের আওতায় রিফিউজি স্ট্যাটাস পেয়ে থাকেন, তাহলে পাসপোর্টের প্রথম পাতায় স্পষ্ট করে লেখা থাকবে, This Document is Valid for All Countries Except BANGLADESH। পাসপোর্টের এই লেখাটার পাশে তারেক রহমানকে স্বাক্ষর করে তবেই পাসপোর্টটা রিসিভ করতে হবে।

অর্থাৎ এই পাসপোর্ট যার থাকে, সে আক্ষরিক অর্থে কোন দেশের নাগরিক নয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের তো নয়ই। তাছাড়া তারেক রহমান জন্মগতভাবে হয়ত বাংলাদেশী, কিন্তু তিনি যখনই স্বাক্ষর করে জেনেভা কনভেনশন পাসপোর্ট গ্রহণ করেছেন, ঠিক তখনই তিনি বাংলাদেশের সাথে সব ধরণের সম্পর্কচ্ছেদ করেছেন বলে ধরে নেয়া যায়।

দ্বিতীয়ত, শোনা যাচ্ছে যে তারেক রহমান বৃটিশ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন। সেক্ষেত্রেও বৃটিশ আইনে তাঁকে আবেদনের সময় ফর্মে উল্লেখ করতে হবে যে, তিনি বাংলাদেশী নাগরিকত্ব রাখতে চান অথবা চান না। ফর্মের সেই ঘরটিতে যদি তিনি বলে থাকেন যে তিনি বাংলাদেশী নাগরিক থাকতে চাননা, তাহলে সেক্ষেত্রেও তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্বকে অস্বীকার করেছেন বলে ধরা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত