রাজেশ পাল

৩০ জুলাই, ২০১৮ ০১:৫৩

সড়কে মৃত্যু রোধে আইন সংশোধনের বিকল্প নেই

রাজধানীর বিমানবন্দর রোডে দুর্ঘটনায় নিহত দিয়া খাতুন মিম (বায়ে) ও আব্দুল করিম

রোববারও রাজধানীর বিমানবন্দর রোডে এক বেপরোয়া বাস ড্রাইভারের কারণে ঝরে গেলো চারটি ফুটফুটে স্কুল পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীর জীবন।

হানিফ পরিবহনের খুনের প্রতিবাদের মধ্যেই ঘটলো আরেকটি হত্যাকাণ্ড। যদিও হানিফ পরিবহনের ক্ষেত্রে এই অভিযোগ অনেক পুরনো। দুবছর আগে এই হানিফ পরিবহনের খামখেয়ালিপনার কারণেই হারিয়ে গিয়েছিল আমাদের এক স্নেহের ছোটভাই ফাজাতের জীবন। আর আরেক ছোট বোন শামীমাকে বরণ করতে হয়েছিলো পঙ্গুত্ব। সেসময় আরও কিছু তরুণ তরুণী এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে হানিফ কাউন্টারের সামনে জড়ো হলে চট্টগ্রামের কুখ্যাত সন্ত্রাসী ওয়াসিম দলবল নিয়ে অস্ত্র উঁচিয়ে হুমকি দেয় তাদের প্রকাশ্যেই। সে ঘটনার আর সুরাহা হয়নি, ক্ষতিপূরণ দূরে থাক মৌখিক ক্ষমা পর্যন্ত চায়নি হানিফ পরিবহনের মালিকপক্ষ। শুধু উচ্ছ্বাসে পরিপূর্ণ একটি তরুণ প্রাণ হারিয়ে গিয়েছে চিরতরে।

ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, সড়ক দুর্ঘটনা দিনদিন বেড়ে যাওয়ার, আর চালকদের এই বেপরোয়া আচরণের অন্যতম কারণ হলো আইনের অপর্যাপ্ততা। এদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় কারো মৃত্যু হলে চালকের বিরুদ্ধে মামলা হয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারা অনুসারে।

৩০৪(খ) ধারায় মামলা হলে নিরাপদ যাতায়াত কখনোই নিশ্চিত করা যাবে না। এ ধারাটি জামিনযোগ্য ও আপোসযোগ্য, আর সর্বোচ্চ শাস্তি মাত্র ৩ বছর। অর্থাৎ একটি মানুষ খুন করে হাতেনাতে কোন ড্রাইভার গ্রেপ্তার হয়ে আসলে তাকে সাথে সাথেই জামিন দিতে হবে। আর বেশকবছর মামলা চলার পরে যদি সাক্ষ্যপ্রমাণে নিঃসন্দেহে প্রমাণ করা যায় যে ড্রাইভার দোষী, তাহলেই তার শাস্তি। আর তাও ৩ বছর। যেটা আবার বছর খানেক খাটার পরে উচ্চ আদালতে তদবির করলেই হাসতে হাসতে জেলগেট থেকে বের হয়ে আসা যায় স্বচ্ছন্দেই!!!

এক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে ৩০৪ ধারাকে অজামিনযোগ্য, আপোষযোগ্য নয় এবং শাস্তির মেয়াদ বর্ধিত করে অবিলম্বে আইনটির যথোপযুক্ত সংস্কার সাধন করতেই হবে।

শুধুমাত্র চালক নয়, যানবাহন মালিক এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরও দায়িত্ব অবহেলার কারণে শাস্তির আওতায় আনা এখন সময়ের দাবি। আর সেইসাথে প্রয়োজন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে এই মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা। আর শাস্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করে ৩ বছরের পরিবর্তে সর্বোচ্চ দশ বছর করা উচিৎ অবিলম্বে। কেবল তখনই সাবধান হবে চালক ও মালিকপক্ষ।

এছাড়া বাধ্যতামূলকভাবে ক্ষতিপূরণ প্রদানের ধারাটিও আইনে অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ বলে আমি মনে করি।

কোন গোষ্ঠীর চাপে নয় বরং জনস্বার্থে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা। বিভিন্ন সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর চাপে বারংবার সংশোধনের প্রেক্ষিতে ৩০৪ (খ) ধারায় অপরাধী সহজেই জামিন পেয়ে যায় এবং মামলায় আপোষ করার সুযোগ থাকায় অপরাধীরা অধিকাংশ সময়ই শাস্তি এড়িয়ে পলাতক হয়ে যায়, পরিণতিতে ন্যায় বিচার লঙ্ঘিত হয়।

তাই অনতিবিলম্বে নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে একটি যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন ও যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা উচিৎ সংশ্লিষ্ট মহলের। নাহলে বাড়তেই থাকবে এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর মিছিল।

  • রাজেশ পাল: আইনজীবী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত