হাসান মোরশেদ

১৯ আগস্ট, ২০১৮ ২০:০৫

রিজিওনাল কানেক্টিভিটির গেটওয়ে হবে সিলেট

SHILLONG DIALOUGE- India and sub Himalayan Eastern Neighbours: Shared Borders, Shared Opportunities' ১৬,১৭ আগষ্ট দুদিন Asian Confluence আয়োজিত কনফারেন্স শেষ। উত্তর-পূর্ব ভারতের আটটি রাজ্য এবং বাংলাদেশ, নেপাল, ভূটান, মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা ছিলেন।

বাংলাদেশের চার সদস্যের প্রতিনিধিদলের একজন হিসেবে আমি উপস্থিতি ছিলাম মুলতঃ আমাদের প্রতিষ্ঠান Visit Sylhet এর হয়ে। ভিসা পেতে দেরী হওয়ায় এনায়েত চৌধুরী যেতে পারেননি। বাংলাদেশের অন্য প্রতিনিধিরা ছিলেন- শিপিং বিজনেসের মাহবুব চৌধুরী, প্রাণ এর জেনারেল ম্যানেজার সুজন রায় এবং জনাব শামসুল আরেফিন।

নেপাল প্রতিনিধি দলে ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী সুরেন্দ্র প্রসাদ পান্ডে, মিয়ানমার সরকারের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. খিন মং, ভুটান সরকারের এগ্রো মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের প্রধান দর্জি রিঞ্চেন। নাগাল্যান্ডের সাবেক চিফ সেক্রেটারী মিঃ জামির সহ আটটা স্টেট এর সর্ব্বোচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি গন।

মেঘালয়ের নেতৃত্ব দিয়েছেন স্বয়ং চীফ মিনিস্টার কনরাড সাংমা। এ ছাড়া মুচকুন্দ দুবে, রাজিব ভাটিয়া, পিপি শ্রীবাস্তব ব্রিগেডিয়ার ( অবঃ) চিকারা, প্রফেসর শক্তি সিনহা'র মতো প্রভাবশালী সাবেক ডিপ্লোমেট ও থিংক ট্যাংক উপস্থিত ছিলেন যারা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখেন।

মুল বিষয় ছিলো- ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিদেশ নীতির বাইরেও এই আটটা স্টেট আলাদা ভাবে তাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে সংযোগ, সম্পর্ক ও যোগাযোগ স্থাপনে আগ্রহী। ভারতের এই আটটি রাজ্য এবং প্রতিবেশী চারটি রাষ্ট্রের জিওগ্রাফিক্যাল এবং ঐতিহাসিক সম্পর্ক অনস্বীকার্য। প্রত্যকের উন্নয়নের জন্য নিজেদের মধ্যে সুসম্পর্ক এবং সীমান্ত এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন প্রয়োজন। সীমান্ত বর্তী মানুষের জীবনের মানোন্নয়ন সম্ভব হলে চোরাচালান, সীমান্ত হত্যাও বন্ধ হয়ে যাবে।

মেঘালয়ের তরুণ চীফ মিনিস্টার উদাহরন দিলেন বাংলাদেশের যখন কাঠালের সিজন শেষ হয়, মেঘালয়ে তখন বিপুল পরিমান কাঠাল উৎপাদিত হয় কিন্তু তারা মেইনল্যান্ড ইন্ডিয়ায় পাঠাতে পারেন না- বাংলাদেশ মার্কেট হতে পারে। নেপালের পাঁচ হাজার ছাত্র বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজে পড়ে, উত্তর পূর্ব ভারতের ছাত্ররা ও বাংলাদেশে পড়তে যেতে পারে। বাংলাদেশের কোম্পানী প্রাণ লিঃ কে তিনি আহ্বান জানিয়েছেন ত্রিপুরার মতো মেঘালয়েও তাদের ফ্যাক্টরী স্থাপন করতে।

জিওগ্রাফিক্যাল অবস্থানের কারনেই বাংলাদেশ সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। মিয়ানমারের সমুদ্র বন্দর থাকলেও নেপাল, ভুটান ও এই আটটা স্টেটের সবচেয়ে কাছের বন্দর চট্টগ্রাম।

প্রথম দিনের জেনারেল সেশনের পর তিনটা আলাদা আলাদা গ্রুপে ব্রেক থ্রু সেশন হয়, প্রতিটি সেশন থেকে কিছু প্রস্তাবনা গৃহীত হয় যা নির্দিষ্ট চ্যানেলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সরকারদের কাছে যাবে।
PATA'র সাবেক চেয়ারম্যান ও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অবসর প্রাপ্ত সচিব বেজবাড়ুয়ার সভাপতিত্বে আমি যে ব্রেক থ্রু সেশনে অংশ নেই তার প্রতিপাদ্য ছিলো ' Tourism for better sub-regional integration, economic and peace dividends: Focus on developing a sub regional hub and border Tourism'

মিয়ানমার-মনিপুর যুদ্ধের পর প্রায় দুইশো বছর যে রাস্তা বন্ধ ছিলো সম্প্রতি সেটা খুলে দেয়া হয়েছে। ফলে প্রচুর ট্যুরিস্ট যারা থাইল্যান্ড, নেপাল হয়ে মিয়ানমার আসে বুড্ডিস্ট হেরিটেজ দেখতে তারা এখন ইমফলে আসছে। বুড্ডিস্ট হেরিটেজ এর আমরাও অংশীদার, গৌহাটি ঢাকা ফ্লাইট চালু করা গেলে এই ট্যুরিস্ট ফ্লো আমরাও পেতে পারি।

আমার একটা প্রস্তাবনা গুরুত্ব সহ তারা গ্রহণ করেছেন। আমাদের সীমান্তের জাফলং ও ভারত সীমান্তের ডাউকির কাছে স্নোনেংপেডেং গ্রাম নিয়ে যদি ভিসা ফ্রি টুরিস্ট জোন গঠন করা যায় তাহলে দুদিকের প্রতিদিনের শত শত ট্যুরিস্ট দুদেশের অভিজ্ঞতা নিতে পারবে যা সীমান্তবর্তী দুই অঞ্চলের মানুষের জীবন যাত্রার মান পালটে দেবে।

ভারত যদি তার ইমিগ্রেশন সিস্টেমকে কম্পিউটারাজড করে তাহলে বাংলাদেশের একজন ট্যুরিস্ট ডাউকি দিয়ে ঢুকে আসাম ত্রিপুরা ভ্রমন করে আগরতলা হয়ে বের হয়ে যেতে পারে।

এ ছাড়া গৌহাটিতে যদি তারা ভেলোর, চেন্নাই'র মতো উন্নত চিকিৎসা সুবিধা তৈরী করে তাহলে বাংলাদেশের মানুষদের অতোদূর যেতে হয় না।

আমরা যদি আমাদেরর অংশে বিদেশীদের দেয়ার মতো পর্যটন সুবিধা গড়ে তুলতে পারি তাহলে এই কানেক্টিভিটি একতরফা হবেনা, বহুপাক্ষিক হবে নিশ্চিত।

আলাদা ভাবে আলোচনা হয় সিরিল ডিংডোর সাথে, এই তরুণ আইএস মেঘালয় সরকারের ডিরেক্টর অফ ট্যুরিজম। মেঘালয়ে পর্যটন গন্তব্যের বহুমুখীকরন নিয়ে কথা হয়, তিন জিজ্ঞেস করেন এই ইস্যুতে কাজ করার জন্য আমন্ত্রন জানালে রাজী হবো কি না?
শেষ দিন গৌহাটি থেকে এসেছিলেন বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার শাহ মোহাম্মদ তানভীর মনসুর।

সবকিছু মিলিয়ে অনুধাবন হলো, এই রিজিয়নের কানেক্টিভিটির একটা বড় ধরনের সম্ভাবনা আসছে সামনে, উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলো খুবই সিরিয়াস- নিজেদের প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে সবধরনের দেনদরবার করতে প্রস্তুত তারা।

এই রিজিওনাল কানেক্টিভিটির প্রধান সার্কিট হবে বাংলাদেশ। আরো নির্দিষ্ট করে বললে- সিলেট হবে গেটওয়ে।

কিন্তু আমরা কতোটুকু প্রস্তুত? কতোটুকু বুঝতে পারছি আসলে সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলো?
(ফেসবুক থেকে নেওয়া)

হাসান মোরশেদ: লেখক, পর্যটনকর্মী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত