শাওন মাহমুদ

৩০ আগস্ট, ২০১৮ ১১:০০

আমি পতাকার মাঝে নিহত পিতার মুখ দেখি

যুদ্ধ, মহাপ্রলয়ের আরেক রূপ। নিজ হতে দেশ মাতৃকার প্রতি অধিক ভালোবাসা, যুদ্ধ জয়ের প্রথম শপথ। মহাপ্রলয়ে নিজের অবস্থান নিশ্চিত করবার জন্য সেই ভালোবাসা কাজে লাগিয়েই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ জয় হয়েছিল। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ শুধু আবেগে পরিচালিত হয়নি, সঠিক রাজনৈতিক ভাবনা থেকে এর বীজ রোপিত হয়েছিল ভাষা আন্দোলনের মাঝ দিয়ে। সেই থেকে বছরের পর বছর ক্ষোভের মাটি ফুঁড়ে স্বাধীনতার অঙ্কুর মাথা চাড়া দিয়ে বের হতে চেষ্টা করেছে, অবিরত।

একাত্তরের ৭ মার্চের স্বাধীন দেশের জন্য জীবন বাজি রাখবার আহ্বানে শেষ পর্যন্ত সেই অপেক্ষারত বীজ মানুষের হৃদয় ভেদ করে মুক্তিযুদ্ধ করবার জন্য যুদ্ধ মাঠে জয়ী হবার সাহস দিয়েছিল। একাত্তরে আমরা আমাদের নিজস্ব মাটি পেয়েছিলাম। যেখানে আমরা নিজ পরিচয়ে মাথা উঁচু করে হেঁটে যেতে পারি।

একটি যুদ্ধ শত্রুকে রুখে দেয়ার সাহস যোগায়। পাশে থাকা মানুষ থেকে মিত্র অথবা শত্রুকে চিহ্নিত করে দেয়। যুদ্ধ জয় যতটা হারানোর বেদনায় জর্জরিত, তার চেয়েও বেশী ভার প্রাপ্তিযোগের পাল্লাটি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এক অবিস্মরণীয় স্বাধীনতার গল্পের প্রচ্ছদে আঁটা। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা এক থেকে আরেকজন অনন্য অসাধারণ যোদ্ধা। আমাদের দেশ শুধু আমাদেরই, আর কারো নয়।

আবেগ তাড়িত না হলে যেমন প্রেয়সীকে জিতে নেয়া যায় না, ঠিক তেমনই এক কঠিন রাজনৈতিক আবেগে উদ্বেলিত না হলে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ জয় হত না।

আপনারা যারা মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতা বা জাতির পিতাকে নিয়ে অপর পক্ষ মতান্তরে বসবাস করেন তাদের জন্য করুণা ছাড়া আমার আর কিছু দেয়ার নেই। আপনারা এক জীবন কালে সবচেয়ে বেশী হতভাগা হয়ে সময় পার করছেন। সব শেষ কথা বাংলাদেশের ক্ষুদ্র অর্জনও যাকে কম্পিত করে না, তাকে বাংলাদেশী বলতে আমার বাঁধে। এক বাংলাদেশকে ধারণ করে তৃতীয় মহাযুদ্ধেও জয়ী হওয়ার সাহস বুকে রোপিত আছে আমাদের।

আপন স্বামীকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে হারানোর পরও আমার মা আমাকে আগামী যে কোন যুদ্ধ মাঠে এগিয়ে দিয়ে আসবেন জানি। আমি এক সৌভাগ্যময় বাংলাদেশের নাগরিক, যারা লালসবুজ পতাকার মাঝে শত্রুর হাতে নিহত পিতার সহধর্মিণী অকাল বিধবা মায়ের মুখ দেখি। জয় বাংলা।

  • শাওন মাহমুদ: শহীদ আলতাফ মাহমুদের কন্যা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত