মো. আসাদুজ্জামান রনি

২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ১৯:৩০

ছাত্রলীগ ও ‘ভাইলীগ’ নিয়ে কিছু কথা

শিক্ষা শান্তি আর প্রগতির পতাকাবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সগৌরবে এগিয়ে চলছে এবং দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন হিসেবে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছে।

আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে আমি মনে করি ছাত্রলীগ একটা কোম্পানি যেখান থেকে তৈরি হয় হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ নেতা,যারা প্রথমে ছাত্রনেতা পরে যুবনেতা অতঃপর জননেতা আবার কেউ বা ছাত্রনেতা থেকেই সরাসরি জননেতা। এক কথায় নেতা তৈরির কারখানা। এই ছাত্রলীগ থেকেই আজ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ জাতীয় নেতৃত্ব দিচ্ছেন, জাতীয় নেতা হয়েছেন, কেউ কেউ মাদার সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন আবার কেউ কেউ রাষ্ট্র ব্যবস্থা তথা সরকার পরিচালনা করছেন অর্থাৎ জনপ্রতিনিধিত্ব করছেন এমপি-মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এবার আসা যাক মূল কথায়-আমরা অনেকেই বলি নীতিবাক্য যেমন আমরা পদের রাজনীতি করি না আমরা দলের রাজনীতি করি, আমরা বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি করি আমরা নেত্রীর রাজনীতি করি। হ্যাঁ, শতভাগ সত্য আমরা সকলেই মুজিব আদর্শের রাজনীতি করি, আমরা নেত্রীর রাজনীতি করি। যারা পদে আছি এবং যারা পদে নাই, যারা মুজিবীয় আদর্শে বিশ্বাস করি সবাই কিন্তু শতভাগ বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গকন্যার রাজনীতি ই করি।

ছাত্রলীগ ও ‘ভাইলীগ’ নিয়ে ছাত্রলীগের সংক্ষিপ্ত পরিচয় উপরে তুলে ধরেছি এবার ‘ভাইলীগ’ নিয়ে বলতে চাই, ভাইলীগ বলতো আদৌ কোন সংগঠন নেই। ভাই মানে সম্পর্ক ভাই মানে আত্মার আত্মীয় ভাই মানে এক রাখিবন্ধন।

আমার পরিবার একটি রাজনৈতিক পরিবার স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময় থেকেই আমার পরিবার রাজনীতির সাথে সম্পর্কযুক্ত আমার এক মামা বীর মুক্তিযোদ্ধা মির্জা আজিজ আহমেদ বেগ ছিলেন মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য অন্যতম একজন প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক, আরেক মামা বীর মুক্তিযোদ্ধা মির্জা ফরিদ আহমদ বেগ মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা দুই তিন জনের মধ্যে একজন অন্যতম সংগঠক। ক্রমাগত ভাবে আমার মামার বাড়ি বেগ বংশের সকলই আওয়ামী পরিবারের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবদ্দশায় যখন মৌলভীবাজার এসেছিলেন তখন মির্জা আজিজ আহমেদ বেগকে সঙ্গে নিয়েই অন্যান্য নেতৃবৃন্দদের সাথে মৌলভীবাজার সফর করতেন। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর একজন ঘনিষ্ঠ সহচর।

আমি যখন ছোট ছিলাম তখন দেখতাম আগেকার দিনে সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে সকলেই লিডার বলে সম্বোধন করতেন। যা এখনকার দিনে অনেকেই মনে হয় লিডার বলে সম্বোধন করতে লজ্জাবোধ করে। অথবা আগেকার দিন থেকে এখন হয়তো তাদের আন্তরিকতা বেশি তাই লিডার এর পরিবর্তে ভাই বলে সম্বোধন করে। তবে কথা হলো ছাত্রলীগ আর ভাইলীগ নিয়ে, আমি আগেই বলেছিলাম একটি কথা যে আমরা পদের রাজনীতি করি না অনেকেই বলে থাকি আসলে মুখে অনেক কথাই বলা যায় কিন্তু একটি পদের জন্য অনেক কিছুই আসে যায়, একটি পদ না পেয়ে অনেক ত্যাগীরা ঝরে পরে আবার অনেকে একটি পদের কারণে তারকা হয়ে উঠে এই পদের কারণেই নিজ দলের মধ্যে তৈরি হয় প্রতিযোগিতার লড়াই।

সবাই নেতৃত্ব চায়। একই দলের মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন অনেকেই থাকে কিন্তু কাকে দেওয়া হবে নেতৃত্বের দায়িত্বে তা কিভাবে নির্বাচন করবেন? গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সঠিক নিয়ম হচ্ছে নির্বাচন পদ্ধতি,কিন্তু দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্বাচন হচ্ছে না। নেতা তৈরি করা হচ্ছে সিলেকশনের মধ্যে দিয়ে। আর যখন ই কোন ইউনিটের নেতা নির্বাচন করা হবে সেই ইউনিটগুলার কাঙ্ক্ষিত পদ পেতে মরিয়া হয়ে সাধারণ কর্মীরা দিনে রাতে দৌড়ে কোন না কোন লিডারের পিছনে অথবা বর্তমান দিনের ভাইয়ের পিছনে, সঠিক গণতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে না বলেই বড়ভাইদের পিছনে দৌড়াতে হচ্ছে কর্মীদের আবার কখনো হাইকমান্ডে বড়ভাইদের পরিবর্তন হচ্ছে বলে ভাই ও পরিবর্তন হচ্ছে কর্মীদের আর এটাকেই এক পক্ষ ব্যঙ্গ করে ভাইলীগে পরিণত করেছেন।

তবে সারকথা হলো যা সঠিক গণতন্ত্র চর্চা যতদিন ধরে কার্যকর হবে না ততদিন সাধারণ কর্মীদের ভাইয়ের প্রয়োজন হবে, কারণ যারা পদ চায় তারা কোন না কোন ভাইয়ের মাধ্যমেই পদ পায়।

তাই ভাইলীগ পরিহার করতে হলে গণতন্ত্রের সঠিক ব্যাবহার চালু করুন। আবার অনেক কর্মীরা কিন্তু অন্তর থেকে শ্রদ্ধাবোধ থেকে ভালোবাসা থেকে সিনিয়র নেতৃবৃন্দ কে ভাই বলে সম্বোধন করে,ঐ যে আত্মার আত্মীয় রাখী আর বন্ধন ভাই যা’ সম্পর্ক থাকবে আজীবন ভাই বলে।

  • মো. আসাদুজ্জামান রনি: সাবেক সভাপতি, মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগ
  • [প্রকাশিত লেখায় মতামত, মন্তব্য ও দায় লেখকের নিজস্ব]

আপনার মন্তব্য

আলোচিত