অনলাইন ডেস্ক

২৩ অক্টোবর, ২০১৮ ২০:০৭

মধ্যরাতে তরুণীকে পুলিশের হেনস্তা (ভিডিও)

মঙ্গলবার সকাল থেকেই ফেসবুক সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও নিয়ে চলছে তোলপাড়। ভিডিওতে একটি সিএনজি অটোরিকশার ভেতরে থাকা এক তরুণীকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ছুঁড়ে দিতে শোনা যায়। সেই ভিডিও-ই আবার একজন পুলিশ সদস্য ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।

সোমবার (২২ অক্টোবর) দিবাগত রাতে রাকিব রাজ নামে এক পুলিশ সদস্যের ফেসবুক আইডি থেকে ভিডিওটি একটি গ্রুপে শেয়ার করা হয়। সেখানে রাকিব রাজ ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘দেখুন একজন অসভ্য মেয়ের কারসাজি। আজ রাত (২২ অক্টোবর) ২টায় পুলিশ চেকপোস্টে পুলিশ চেক করতে চাইলে সে পুলিশের সাথে এইরকম ব্যবহার করে।’ তিনি ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দিতেও আহ্বান জানান সবার কাছে।

ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পরে থেকেই রাকিব রাজ নামের ফেসবুক আইডিটি ডিএক্টিভ রয়েছে।

পুলিশ

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, পরপর কয়েকজন পুলিশ সদস্য চেকপোস্টের তল্লাশি করার নামে বিভিন্ন মন্তব্য ছুঁড়ে দিচ্ছেন। তরুণীকে বেয়াদব বলেও মন্তব্য করেন এক পুলিশ সদস্য। পক্ষান্তরে তরুণী উত্তেজিত হয়ে পুলিশ সদস্যকেও বেয়াদব বলেন।

ঘটনার এক পর্যায়ে তরুণী পুলিশ সদস্যদের তার ব্যাগ চেক করার কথা বললে এক পুলিশ সদস্য তরুণীকে ব্যাগটি খুলে দেখাতে বলেন। সেই সময় তরুণী তার ব্যাগটি পুলিশ সদস্যদের খুলতে বলেন। এসময় তিনি এতো সময় নেই বলায় এক পুলিশ সদস্য বলেন, "কেন? কেউ কি আপনার জন্য ওয়েট করতেছে?"

প্রশ্নের জবাবে তরুণী বলেন, "হ্যাঁ করছে। আমার বাবা-মা ওয়েট করছে। আমার কি ফ্যামিলি নেই?"

তারপরপরই তরুণীকে উদ্দেশ্য করে সেই পুলিশ সদস্য বলেন, " পুলিশ ভদ্র না অভদ্র তা আপনি কাল সকালের দেখতে পারবেন। " যার পরিপ্রেক্ষিতেই আজকে এই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এছাড়া আরও অনেক তির্যক মন্তব্য করেছিলেন ওই পুলিশ সদস্য। তিনি বলেন, "আপনি কিন্তু বিশ্বসুন্দরী না'/ 'বেয়াদব মেয়ে, বাসা থেকে ভাল কথা শেখায়নি?'/ 'আপনি কোন লাট বাহাদুরের মেয়ে'/ 'কোন মিনিস্টারের মেয়ে'/ 'রাত আড়াইটার সময় কোন ভদ্রলোকের মেয়ে বাইরে থাকে?'/ 'আমার চোখে কি আগুন ছিলো?'/ 'পুলিশ ভদ্র না অভদ্র সেটা কালকে দেখতে পারবেন'/ 'বাসা থেকে এইগুলি শিখায়া দিছে?'/ 'ল্যাং মেরে নিয়ে যাবো'/ 'আইছেন হোটেল থোন, আবার ভাব লইতেছেন'/ 'এই ড্রাইভার এইডারে নিয়া রাস্তায় ছাইড়া দিয়েন। এইডা রাস্তার মেয়ে'!"

ভিডিওটি শেয়ার করে এরকম পুলিশি হেনস্তার শিকার প্রায়ই হতে হয়ে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ভুক্তভোগী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন কাজে বিস্মিত অনেকেই।

ভিডিওর শেষে ব্যাগ চেক না করেই তরুণীকে যেতে দেয় পুলিশ। সেসময়ও এক পুলিশ সদস্য বলে ওঠেন, "এইডা রাস্তার মেয়ে!"

এ ঘটনার সুষ্ট তদন্ত ও দোষী পুলিশ সদস্যের বিচার চেয়ে অনলাইন এক্টিভিস্ট দেবজ্যোতি দেবু বলেন, এমন নোংরা পুলিশিঙের প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি এর সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধীর যোগ্য শাস্তির দাবি জানাই।

অনলাইন এক্টিভিস্ট সাইফুল বাতেন টিটু ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেন, এই মেয়েটা যদি বেয়াদব হয় তো আমি চাই আমার মেয়ে এমন বেয়াদব হোক, আমার প্রেমিকা এমন বেয়াদব হোক, এমনকী আমার মাও। রাত আড়াইটার সময় একজন মেয়েকে এমন হেনস্তা করার অধিকার পুলিশকে কোন আইনে দেয়া হয়েছে?

তিনি আরো লিখেন, মুখে লাইট ফেলে একজন মেয়েকে ভিডিও করা আবার তা নিজেরাই নেটে ছাড়া কি তথ্যপ্রযুক্তি আইনে অপরাধ নয়? একজন ছেলে যদি সারারাত বাইরে কাটাতে পারে তো একজন মেয়ে কেন পারবে না? পুলিশ কি এই শিক্ষা পেয়েছে যে নারীকে পেলেই নানা কৌশলে তাঁকে বেশ্যা বলতেই হবে?

চিকিৎসক ও শিল্পী গুলজার হোসেন উজ্জ্বল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এভাবে ভিডিও করার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? পুলিশের আচরণ পুরোই অপেশাদার। মাঝ রাতে কোনো মেয়ে বাইরে থাকতে পারবে না— এমন কোনো আইন কি বাংলাদেশে আছে? ‘তাকে অপমান করার অধিকার কি পুলিশ রাখে?’—  প্রশ্ন রাখেন তিনি।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি, অপরাধ বিভাগ ও কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করার চেস্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে ফেসবুকে নিজের ব্যক্তিগত প্রোফাইলে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, পুলিশের চেকপোস্টে গভীর রাতে একজন ভদ্রমহিলার সাথে কিছু পুলিশ সদস্যদের ভিডিওসহ কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আমাদের নজরে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে একটি পেশাদারি সেবা প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ কনসার্নড।

এতে তিনি আরও বলেন, এ নিয়ে অনলাইনে ঘৃণাবোধ না ছড়ানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। নিরপেক্ষ ও সঠিক অনুসন্ধান সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


ভিডিওটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে

ভিডিও :

আপনার মন্তব্য

আলোচিত