রাজেশ পাল

২২ ফেব্রুয়ারি , ২০১৯ ০০:০৬

চকবাজার ট্র্যাজেডি: আইন যেখানে ‘কাজীর গরু’

৩ জুন, ২০১০ সাল। পুরান ঢাকার নিমতলীতে রাসায়নিকের দোকানে লাগা আগুনে নিহত হন ১২৪ জন। দগ্ধ শতাধিক। এর পর পরই সামনে আসে আবাসিক এলাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম-কারখানা সরানোর দাবি। কিন্তু ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও সরেনি পুরান ঢাকার রাসায়নিক গুদাম। বরং তা পূর্বের মতো বহাল তবিয়তে চলছে। যার ফলাফল অদ্যকার চকবাজার ট্র্যাজেডি।

আবাসিক এলাকায় শিল্পকারখানার ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে বিধান রয়েছে আইনে। কারখানায় অবাধে বিস্ফোরক জাতীয় কেমিক্যাল এবং অতিমাত্রায় দাহ্য কেমিক্যালের ব্যবহার চলছে বছরের পর বছর ধরে।

অথচ কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান করতে হলে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ অনুযায়ী পরিবেশগত ছাড়পত্র নেওয়ার বিধান রয়েছে। আইনের ১২ ধারায় রয়েছে, মহাপরিচালকের নিকট হতে, বিধিমালা নির্ধারিত পদ্ধতিতে, পরিবেশগত ছাড়পত্র ব্যতিরেকে কোন এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন বা প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না। এ ধারা অমান্য করলে অনধিক ৩ (তিন) বছর সশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের ব্যবস্থা রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৯৭ অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় কারখানা স্থাপনের কোন সুযোগ নেই।

এছাড়াও শব্দদূষণ রোধে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০০৬, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৭, যানবাহন আইন ১৯৮৩, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ আইন ১৯৭৬ থাকলেও এ অত্যাচার থেকে রেহাই পাচ্ছেন না নাগরিকরা।

নগরীর শব্দদূষণ রোধে ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে প্রণয়ন করা হয় শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা। বিধিমালায় হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত বা এ-জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের ১০০ মিটার পর্যন্ত হর্ন বাজানো নিষেধ। আইনে আবাসিক এলাকার ৫০০ মিটারের মধ্যে ইট বা পাথর ভাঙার যন্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ।

আইন আছে। কিন্তু প্রয়োগ নেই। আর প্রয়োগ ছাড়া আইন হলো কাজীর গরুর মতো। যা কেতাবে থাকলেও গোয়ালে খুঁজে আর পাওয়া যায়না।

যার ফলে চকবাজার আর নিমতলীর মতো ট্রাজেডিগুলো বারবার শুধুই ফিরে ফিরে আসে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত